বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা গতকাল ময়মনসিংহে একটি সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার সময় অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট এবং তাদের লোকদের উপর হামলা সহ অসংখ্য বাধার সম্মুখীন হয়।
এদিকে, ময়মনসিংহের আশপাশের জেলা- জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায় গণপরিবহন না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা।
বিএনপির পরিকল্পিত বিভাগীয় সমাবেশের অংশ হিসেবে গতকাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে দলের (ময়মনসিংহ শাখা) এক সমাবেশের আয়োজন করে।
বিএনপির অভিযোগ, সমাবেশের আগে ময়মনসিংহ বিভাগে পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়নি, যাতে বিএনপি নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিতে না পারে।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, এ ধরনের বাধা আসতে পারে অনুধাবন করে বিএনপি নেতাকর্মীরা দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর আগে (সমাবেশ স্থলে) অবস্থানসহ বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেন।
তাদের অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতে রাতভর ময়মনসিংহে অবস্থান করে। পরিবহনের অভাবে দলের লোকজন নৌকা ও ট্রেনে করে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেছে।
শুক্রবার রাতে অনেক বিএনপি কর্মীকে অনুষ্ঠানস্থলে বসে বা ঘুমাতে দেখা গেছে, আবার অনেকে পাশের ফুটপাতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করেছেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স গণমাধ্যমকে বলেন, “সরকারের নির্দেশে” সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের দলীয় নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন।
“আমাদের নেতাকর্মীরা এখনও যা আছে তাই ব্যবহার (পরিবহন) করে সমাবেশে আসছে। ভাড়া করা যানবাহনের অনেক চালক হঠাৎ করেই নিরাপত্তার কথা বলে আমাদের লোকদের ময়মনসিংহে নিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়।”
তবে, অনেক বাস অপারেটর বলেছেন যে তারা চট্টগ্রাম সমাবেশে অনুরূপ ঘটনার পরে তাদের গাড়ির ক্ষতির আশঙ্কায় তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, নিরাপত্তার কারণে যানবাহন মালিকরা তাদের সার্ভিস বন্ধ রেখেছেন।
শুক্রবার রাত থেকে জামালপুর বাস টার্মিনাল থেকে সব বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদদাতা জানিয়েছেন।
বিএনপি নেতারা জানান, সমাবেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের যোগ দিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টায় আ.লীগ জড়িত।
পরিবহন মালিক সমিতি অবশ্য দাবি করেছে, এ ধরনের সমাবেশে আগেও ভাঙচুরের ঘটনার কারণে বাস চালকরা যানবাহন চালাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
জামালপুর বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, “কেউ আমাদের সার্ভিস স্থগিত করার নির্দেশ দেয়নি। গাড়ি ভাঙচুরের ভয়ে চালকরা সমাবেশস্থলে যেতে রাজি হননি।”
গণপরিবহন না থাকায় দীর্ঘ রুটের যাত্রীরা বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেককেই হাঁটতে দেখা গেছে।
ইসলামপুর উপজেলার খাদির আলী গতকাল বলেন, “জামালপুর বাস টার্মিনালে কোনো বাস ছিল না। আমাকে আগামীকাল [ঢাকায়] অফিসে রিপোর্ট করতে হবে। আমি লোকসানে আছি…”।
জামালপুর পৌরসভার স্নেহা বলেন, “আজ (গতকাল) একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমাকে ঢাকা যেতে হবে। কিন্তু আমি কিভাবে যাব? রাস্তায় কোনো বাস নেই।”
জামালপুর বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির শামীম বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সমাবেশে না আসার জন্য হুমকি দিয়েছে।
ময়মনসিংহে আন্তঃজেলা রুটে কোনো বাস ছিল না। সেখান থেকে কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও নেত্রকোনার উদ্দেশ্যে কোনো বাস ছাড়তে দেখা যায়নি।
ওই তিন জেলা থেকে ঢাকা হয়ে ময়মনসিংহগামী বাসও চলছে না। তবে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা পর্যন্ত বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার সাসুম আহমেদ ভূঁইয়া জানান, বিএনপির সমাবেশে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বাস চলাচল বন্ধের বিষয়ে তিনি জানতেন না।
ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিতে বাধা দিতে সড়কে নেমেছে আ.লীগ নেতারা। তাদের লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এ সময় স্থানীয়রা আ.লীগের লোকজন তাদের গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি, তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও চালকদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ করেন। ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাইনুদ্দিন অবশ্য এ ধরনের ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন।
গাজীপুরের ভালুকা ও শ্রীপুরের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রাস্তায় নেমে বিএনপির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
গতকাল ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে আ.লীগের নেতাকর্মীরা হামলার শিকার হন। মোবারক হোসেনকে (৩৩) গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক আহমেদ জানান, এ ধরনের কোনো ঘটনার বিষয়ে তিনি অবগত নন।
এটি ছিল দলের দ্বিতীয় বিভাগীয় সমাবেশ। গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রথমটি অনুষ্ঠিত হয়। ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও যশোরে চলমান বিদ্যুৎ সংকট, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং বিক্ষোভ চলাকালে পাঁচ কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিএনপি ১০টি শহরে বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশের ঘোষণা দেয়।
আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে সমাবেশের সমাপ্তি ঘটবে বলে জানিয়েছে তারা।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত।