বাত রোগ কি?
বাত শরীরের খুব যন্ত্রণাদায়ক একটি রোগ। এ রোগ হলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকমের ব্যথা হয়ে থাকে। সাধারণত অস্থিসন্ধিতে ইউরিক এসিড জমা হয়ে এ রোগের উৎপত্তি হয়।
মূত্রের মাধ্যমে যে পরিমাণ ইউরিক অ্যাসিড বেরিয়ে যায় এর থেকে বেশি পরিমাণ ইউরিক এসিড যখন আমাদের লিভার তৈরি করে তখনই তা রক্তের পরিমাণ বাড়ায়।
এছাড়াও খাবারের মাধ্যমে বেশি পরিমাণ ইউরিক এসিডের উৎস যেমন লাল মাংস (গরুর মাংস), রেড ওয়াইন, ক্রিম ইত্যাদি গ্রহণ করলে এবং কিডনি রক্ত থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ফিল্টার করতে ব্যর্থ হলে বাত ব্যথার উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে।
রোগ যখন হতে পারে:
৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে বাত রোগ বেশি হয়ে থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে রজঃনিবৃত্তির পরে তথা ৪৫ বছরের পরে দেখা দিতে পারে।
ছোট বাচ্চা এবং কিশোর ও তরুণদের মধ্যে বাত রোগ সাধারণত দেখা যায় না। তবে সাবধান থাকা অতি উত্তম।
কারণ এবং ঝুঁকি:
মূলত অস্থিসন্ধিতে বেশি পরিমাণে ইউরিক অ্যাসিড জমা হওয়ার ফলেই বাত রোগ হয়ে থাকে। পারিবারিক ইতিহাস থেকেও বাত রোগ হতে পারে।
শতকরা ২০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস পাওয়া গেছে অর্থাৎ পরিবারে অন্যদের বাত ব্যথা ছিল। কিছু কারণ আছে যেগুলোর কারণে রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। কারণগুলো নিম্নরুপ:
- যদি ডায়াবেটিস থাকে;
- ফ্যাটি শরীর অর্থাৎ মোটা শরীর কিংবা শরীর মোটা হয়ে যাচ্ছে এমন;
- কিডনীর যদি কোন রোগ থাকে;
- রক্তস্বল্পতা (সিকল সেল অ্যানিমিয়া);
- অ্যালকোহল পান করলে;
- অ্যালোপ্যাথি ওষুধ যেমন- অ্যাসপিরিন, ডাই-ইউরেটিক্স, লিভোডোপা, সাইক্লোস্পোরিন ইত্যাদি বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে;
রোগের লক্ষণ:
বাত রোগের প্রাথমিক লক্ষণটি সাধারণত বৃদ্ধাঙ্গুলিতে দেখা যায়। সেখানে নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে:
- ইনফ্লামেইশান বা প্রদাহ
- ব্যথা হবে
- অস্থিসন্ধিগুলো ফুলে লাল হয়ে যাবে
- অল্প অল্প জ্বর হতে পারে
- ব্যথা কমে যাবার পর আক্রান্ত স্থান আরো ফুলে যেতে পারে
এছাড়াও এ রোগ হলে পায়ের আঙুল নড়াচড়া করতে খুব কষ্ট হয়। কারণ, ব্যথাটা ঐ খানেই শুরু হয়। হালকা কোন কিছু লাগলেও খুব ব্যথা হয়।
আপনি জানলে অবাক হবেন যে, বাত রোগের লক্ষণগুলো খুব দ্রুত প্রকাশ পায়। এক দিনের মধ্যেই সমস্ত লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
প্রথম অবস্থায় একটি অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়। খুব কম ক্ষেত্রেই একসাথে দুই বা তিনটি অস্থিসন্ধিতে এ রোগ আক্রমণ করে।
মনে রাখবেন, যদি একই সাথে একাধিক স্থানে তীব্র ব্যথা শুরু হয় তবে সেটা বাত ব্যথা নাও হতে পারে। তবে যেকোন ক্ষেত্রে চিকিৎসা যদি না করা হয় তবে পরবর্তীতে অস্থিসন্ধির চরম ক্ষতি পারে। চলার ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।
চিকিৎসা:
বাত রোগের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো অস্থিসন্ধিতে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ যাতে কমে যায় সে ব্যবস্থা করা। পরবর্তীতে রোগের যাতে বৃদ্ধি না ঘটে এবং চলন ক্ষমতা যাতে ঠিক থাকে।
সময় মতো চিকিৎসা না করা হলে চরম ক্ষতি পারে। ভবিষ্যতে চলন ক্ষমতা একেবারে হ্রাস পেতে পারে। অস্থিসন্ধির ক্ষতি হয়ে গেলে তখন আর করার কিছু থাকে না।
এ রোগ হলে প্রাথমিক অবস্থায় রোগীরা তেমন গুরুত্ব দেয় না। নিয়মিত ব্যথা হলে তখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার চিন্তা করে। ব্যথা না হলে তো কোনো কথাই নেই।
ব্যথা না হলে কেউ চিকিৎসা করাতে চায় না। অথচ এ রোগ হলে প্রথমাবস্থা থেকেই চিকিৎসা অনেকটা জরুরী।
সাধারণত এ রোগের ক্ষেত্রে ন্যাপ্রোক্সেন এবং ইন্ডোমিথাসিন জাতীয় ওষুধগুলো ব্যবহার করা হয়। রোগের প্রাদুর্ভাব এড়াতে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়মিত চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন।
অন্যদিকে, প্রেডনিসোলন জাতীয় স্টেরয়েডগুলোও নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে কিংবা আক্রান্ত স্থানে ইনজেকশনের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়।
চিকিৎসকগণ কোন কোন সময় অ্যালোপিউরিন, কোলচিসিন, এবং প্রোবেনেসিড আলাদা আলাদাভাবে কিংবা এক সাথে ব্যবহার করে থাকেন।
এই ওষুধগুলো খুব দ্রুত কার্যকর হয় এবং রোগ লক্ষণ দেখা দেয়ার মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যেই এসব ওষুধ অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।
যেভাবে প্রতিরোধ করবেন:
যেকোন রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সর্বোত্তম। তাই বলা হয়, প্রতিরোধই বাতের সমস্যা থেকে উপশমের উত্তম পথ।
বাত রোগ যখন বেড়ে যাবে তখন চিকিৎসার পাশাপাশি যেসব খাবার খেলে রোগ (ইউরিক অ্যাসিড) বেড়ে যায় তা একদম খাওয়া যাবে না।
সাধারণত যাদের এ রোগ হয় তাদের জন্য অ্যালকোহল একদম নিষিদ্ধ। তৈলাক্ত মাছ, মাছের ডিম, মাংসের ঝোল, কলিজা প্রভৃতি খাবারে পিউরিন বেশী থাকে। এগুলো থেকে ইউরিক এসিড তৈরি হয়। তাই এগুলো খাবেন না।
অতিরিক্ত মদপান এবং মাংস খাওয়ার কারণেও রোগ বাড়ে। তাই এসব ব্যাপারে সতর্ক হোন।
অন্যদিকে, রোগীকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। সকালে এবং বিকালে হালকা ব্যায়াম করতে হবে।
আরও পড়ুন: লিভার ভালো রাখতে করণীয়।
শরীরের ওজন ঠিক রাখতে হবে। ওজন যাতে বেড়ে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। পরিমিত পরিমাণে সুষম খাবার খেতে হবে।
সব বিধি নিষেধ মেনে চলার পাশাপাশি অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হবে।
বাত রোগ খুবই ভয়াবহ রোগ। মানুষকে পঙ্গু বানিয়ে ফেলে। যার এ রোগ হয় সেই জানে আসলে কতোটা জ্বালা। তাই এ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিন।