বাংলাদেশ আয়তনে খুব ছোট একটি দেশ। এই দেশে জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি ছুই ছুই (২০২০ এর তথ্যানুযায়ী)। প্রতি বছর এই দেশ থেকে বহু সংখ্যক মানুষ বিদেশে যায় যাদের প্রবাসী বলা হয়। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের জন্য বেশ কিছু সুখবর নিয়ে আসছে।
বিশ্বের এমন কিছু দেশ রয়েছে যেসব দেশে বাঙালি অনেক কম অর্থাৎ খুব কম সংখ্যক মানুষ ঐ দেশগুলোতে গিয়েছে কাজ করার জন্য। ঐ সব দেশে হয়তো বাংলাদেশ দুতাবাস নাই।
আর বাংলাদেশ দুতাবাস না থাকার কারণে ঐ দেশে থাকা প্রবাসী বাঙালিরা সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত। প্রয়োজনে কোনো সহযোগিতা তারা পায় না। বাংলাদেশ সরকার অতি সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, ঐসব দেশে বাংলাদেশ দুতাবাস গড়ে তোলা হবে।
এতে করে প্রবাসীদের দুঃখ-কষ্ট একটু হলেও লাঘব হবে। প্রয়োজনে তারা দুতাবাসের সাথে যোগাযোগ করে নিজের কথা জানাতে পারবে। ইমার্জেন্সী ইস্যুতে দেশেও ফিরে আসতে পারবে।
আপনারা অনেকেই ইউক্রেন নামক দেশটির নাম শুনেছেন। বর্তমানে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেনে বেশ কিছু বাংলাদেশি রয়েছে যারা বর্তমানে বড় ধরণের বিপদে রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের জন্য কোনো দুতাবাস নাই। তবে সরকার পাশের দেশের বাংলাদেশ দুতাবাসের সহযোগীতায় তাদের পাশে দাড়াচ্ছে। এটাও একটা সুখবর।
অন্যদিকে, নতুন নতুন দেশের সাথে জনবল পাঠানোর নিমিত্তে সরকার ঐসব দেশের প্রতিনিধিদের সাথে কথা-বার্তা তথা আলোচনা করছেন যাতে কম খরচে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক ঐসব দেশে যেতে পারে।
পূর্বে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো বন্ধ ছিল। বহু বাংলাদেশী ভিসা ও পাসপোর্ট ইস্যুর কারণে জেলখানায় রয়েছে। কেউ কেউ ফিরে আসতে চাইলেও আসতে পারছে না। সরকার ঐসব দিকেও নজর দিচ্ছে।
বর্তমানে আবার মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশিদের জন্য কাজের দুয়ার উন্মোচন হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশিদের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। তারপর কাজে পাঠানো হচ্ছে।
কিছু কিছু দেশে জনবল পাঠানোর নিমিত্তে সরকার ফ্রি ভিসার ব্যবস্থা করেছে। আবার জাপানে যাওয়ার জন্য সরকারিভাবে ট্রেনিং করানো হচ্ছে বাছাই করা মানুষদের। তারপর তাদের সরকারি সহায়তায় জাপানে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
আগে বিদেশ যাওয়ার জন্য তেমন কোনো ঋণের ব্যবস্থা ছিলো না। বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ট্রাস্ট এর মাধ্যমে এ ধরণের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে বহু মানুষ তাদের স্বপ্নের দেশে কাজের জন্য যেতে পারছে।
দেশের বিমান বন্দরগুলোতে প্রবাসীরা যাতে কোনো প্রকার লাঞ্চনার শিকার না হয় সেদিকে বাংলাদেশ সরকার খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে নজর দিচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রবাসীদের জন্য বহু রকম সুযোগ-সুবিধা তৈরী করা হচ্ছে।
ভিসা পাওয়ার পর কোনো নাগরিক যাতে দ্রুত বিদেশে যেতে পারে সেদিকে নজর দিচ্ছে সরকার। প্রবাসীরা মূলত বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পেছনে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আর তাই প্রবাসীদের সব দিকেই ধীরে ধীরে নজর দিচ্ছে সরকার।
এছাড়াও একজন প্রবাসী বিদেশে কয়েক বছর থাকার পরে যখন নিজ দেশে ফিরে আসে তখন যাতে সরকার থেকে আরও ঋণ দিয়ে কোনো ভালো কিছু করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সহজ কথায়, প্রবাসীদের জন্য সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
দেশের উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন কর্মসূচীর মাধ্যমে বহু সংখ্যক বেকার যুবক-যুবতীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। অতঃপর সহজ শর্তে এককালীন ঋণ সুবিধাও দেয়া হচ্ছে। যারা প্রশিক্ষণে খুব ভালো করছে তাদের জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।
মোট কথা, সরকার বর্তমানে প্রবাসীদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। কারণ, করোনা ভাইরাস এর যে সময়টাতে সব কিছু স্থবির হয়ে গিয়েছিল তখনও প্রবাসীরা যথেষ্ট অবদান রেখেছে অর্থনীতিতে।
প্রবাসীরা যাতে কোনো ধরণের অসুবিধার সম্মুখ্যীন না হয় এবং হলেও তৎক্ষণাৎ জানাতে পারে এবং সহযোগিতা নিতে পারে সেই জন্য দুতাবাসগুলোতে বলা হয়েছে। কোনো প্রবাসী যাতে শুন্য হাতে দেশে ফিরে না আসে।
আরও পড়ুন: গরু পালন করে আপনিও হতে পারেন ইমরানের মতো স্বাবলম্বী।
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন যে, প্রবাসীদের নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা অনেক সুদূরপ্রসারী। প্রবাসীদের ওপর বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটা নির্ভর করে। তাই প্রবাসীদের বাদ দিয়ে দেশের অগ্রগতির কথা ভেবে লাভ নেই। সুতরাং প্রবাসীদের নিয়ে সরকার বর্তমানে বসে নেই। তিনি আরো বলেন, প্রবাসীদের নিয়ে সবসময়ই কাজ করছে বর্তমান সরকার।