বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল প্রথমবারের মতো সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফাইনালে তারা সত্যিকার অর্থেই দূর্দান্ত খেলেছে। বৃষ্টির কারণে স্বাভাবিক নৈপূণ্য দেখাতে না পারলেও শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলে জয়ী হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।
বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.০০ টায় নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে শুরু হয় ফাইনালের শিরোপা লড়াই। খেলার শুরুতেই ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ দল।
হাফ আওয়ারের পরে প্রথমে এসে একটি গোল হজম করে দলটি। তখন ম্যাচ পরিণত হয় ২-১ গোলে। কিছুক্ষণ পর আবারও গোল করে বাংলাদেশ দল এবং জয় নিশ্চিত করে।
বদলি খেলোয়াড় শামসুন্নাহার জুনিয়র এবং কৃষ্ণা রানী সরকারের গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে বিরতিতে গেছে বাংলাদেশ।
সোমবার নেপালের কাঠমান্ডুতে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ প্রাধান্য নিয়ে খেলেই প্রথমার্ধে ২ গোল দেয়।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে স্বাগতিক নেপাল। যার ধারাবাহিকতায় ৭০ মিনিটে একটি গোল পরিশোধ করে ফেলে নেপাল। আনিতার দারুণ এক শট জড়িয়ে যায় বাংলাদেশের জালে।
তবে, ২-১ গোলকে নিরাপদ মনে করেননি বাংলাদেশের মেয়েরা। যে কারণে আরও একটি গোল আদায়ের লক্ষ্যে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে তারা।
খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ৭৭তম মিনিটেই গোল আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। কৃষ্ণা রানী সরকারের দ্বিতীয় গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৩-১ গোলের ব্যবধানে।
প্রচুর বৃষ্টিতে দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামের মাঠ কাদায় ছুপছুপ। যে মাঠে ভালো ফুটবল খেলা কঠিন। এই প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশের মেয়েরা দারুণ ফুটবল খেলে বিজয়ের দিকে এগিয়ে যায়।
১৪ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় শামসুন্নাহার করেন প্রথম গোল। ব্যাথা পেয়ে ১০ মিনিটে সিরাত জাহান স্বপ্না মাঠের বাইরে চলে গেলে তার পরিবর্তে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন মাঠে নামান শামসুন্নাহারকে।
আগের ম্যাচে স্বপ্না ব্যথা পেয়ে মাঠ ত্যাগ করলে কোচ মাঠে নামিয়েছিলেন রিতুপর্ণা চাকমাকে। কিন্তু ফাইনালে কোচ কৌশল পরিবর্তন করে মাঠে নামান শামসুন্নাহারকে।
সেই শামসুন্নাহারই হয়ে গেলে সুপার সাব। মনিকা চাকমার পাশ থকে দারুন প্লেসিংয়ে ১৪তম মিনিটে গোল করেন তিনি।
গোল হজমের পর নেপাল ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠে। কিছু সময় তারা বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তারও করে। দুইবার ভালো দুটি সুযোগও আদায় করে নিয়েছিল স্বাগতিকরা।
৩৫ মিনিটে আনিতার ফ্রি-কিক গোলরক্ষক রূপনা চাকমা ডান দিকে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন।
ওই কর্নার থেকেই গোলমুখে জটলা হলে গোল প্রায় হজমই করে ফেলেছিল বাংলাদেশ; কিন্তু গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করে দলকে বাঁচান মাসুরা পারভীন।
৪১ মিনিটে বাংলাদেশ ব্যবধান দ্বিগুণ করে কৃষ্ণা রানী সরকারের গোলে। নেপালের একটি ভুল পাস থেকে বলে পেয়েছিলেন সাবিনা।
তিনি একটু ফাঁকায় দাঁড়ানো কৃষ্ণাকে পাস দিলে কোন ভুল করেননি তিনি। নেপালের জালে বল পাঠিয়ে আনন্দ ছড়িয়ে দেন ডাগআউটে।
বাংলাদেশের মেয়েদের প্রথম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে বড় অবদান রেখেছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। টুর্নামেন্টে ৮ গোল করে তিনিই সর্বোচ্চ গোলাদাতা।
তবে এর চেয়েও বড় স্বীকৃতিটা আদায় করে নিয়েছেন সাবিনা। হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও। টুর্নামেন্টে সেরা গোলকিপার বাংলাদেশের রুপনা চাকমা। ৫ ম্যাচে যাঁর বিপক্ষে গোল হয়েছে মাত্র একটি।
পরিশেষে বলা যায়, নারী ফুটবল দলের এ সাফল্য পুরো বাংলাদেশের জন্য গৌরবের বিষয়। এ জয়ের মাধ্যমে নারী ফুটবল দল বাংলাদেশে এক ধাপ এগিয়ে গেল। ভবিষ্যতে আন্তরর্জাতিক অঙ্গনে ফুটবল খেলায় অংশ নেয়ার একটা দ্বার উন্মোচন হলো।
আরও পড়ুন: ফুটবল খেলায় এবারও প্রথম বেলতলী পাড়া।