বগুড়ার হোটেল-গুলো সম্পর্কে অনেকেই অবগত বিশেষ করে যারা নিয়মিত উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকা যাতায়াত করেন। কারণ, বগুড়া হলো ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের মাঝখানে। তাই দূর পাল্লার গাড়িগুলো বগুড়ার বিভিন্ন হোটেলে এসে যাত্রা বিরতি দেয়।
গাড়িতে যারা যাত্রী হিসেবে থাকে তারা অনেকেই খুশী মনে হোটেলগুলোতে প্রবেশ করে ফ্রেশ হওয়ার জন্য এবং কিছু খেয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু অনেকের ভাগ্যেই ঘটে দূর্ঘটনা।
এই বিষয়গুলো কেউ সামনে তুলে ধরে না। কারণ, এগুলোকে নিছক ঘটনা মনে করে এবং ভাবে যে, আমি তো আর এই হোটেলে খাবো না – কি দরকার কিছু করার।
আসলে এভাবে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ বগুড়ায় এসে ঠকে যাচ্ছে। হয়তো অনেকেই তার সর্বস্ব হারাচ্ছে। সবার পকেটে সঞ্চয় হিসেবে ৫ হাজার টাকা থাকে না, কারো কারো পকেটে ৫শত টাকাও থাকে।
আমরা কথা বলেছি ঈদ যাত্রায় ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে ফিরে আসা এক দম্পতির সাথে। তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা আজ আমরা তুলে ধরবো। তবে এরকম হাজারো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। একেক হোটেলে একেক কায়দায় ঘটনাগুলো ঘটছে।
আলামিন সাহেব তার স্ত্রীসহ বাসায় ফিরছিলেন। তারা মায়ের আচল নামক একটি বাসে চড়ে আসছিলেন। পথিমধ্যে বগুড়ার একটি মাঝারি আকারের হোটেলে তাদের জন্য যাত্রা বিরতি দেয়া হয়।
বাসে বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ ছিলেন। সুতরাং সবাই মনে ভাবছিলেন যে, ছোট হোটেল যেহেতু তাহলে হয়তো অল্প টাকায় কিছু অন্তত খেতে পারবো।
এই চিন্তায় সবাই মধ্যরাতের যাত্রা বিরতিতে গাড়ি থেকে নেমে ঐ হোটেলে ঢুকলো। আলামিন সাহেব এর স্ত্রী বিরানী খেতে চেয়েছিলো। কিন্তু হোটেল এর ভেতরে যাওয়ার পরে বিরানীর কথা বলা হলে তারা নাই বলেছে।
আরেকটি কথা আগেই বলে রাখি, আলামিন সাহেব যখন সস্ত্রীক হোটেলে প্রবেশ করবেন তার বাইরেই ছোট জায়গায় ত্রিপাল দেয়া – সেখানে বলা হচ্ছে যে, ভাত-মাংস মাত্র ৫০ টাকা।
আসলে ভাত-মাংস মাত্র ৫০ টাকা বিষয়টি সবার মনেই খটকা এনেছিল। সবাই মনে মনে ভাবছিলো যে, হয়তো মরা মুরগী রান্না করে রেখেছে।
কারণ, ভেতরে হোটেলে ছোট ১ প্লেট মাংস ১৮০ টাকা অথচ বাইরে ভাত আর মাংস মিলে ৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। অবশ্যই ৫০ টাকার জায়গায় কাউকে খেতে দেখা যায়নি।
যাইহোক, আলামিন সাহেব পরে ভেতরের হোটেলে ওয়েটারকে বললো যে, আর কি আছে (যেহেতু বিরানী ছিল না)? তখন ওয়েটার বললো যে, গরম ভাত, মাংস, রুটি, পরোটা, খিচুরী এগুলো আছে।
তখন আলামিন সাহেব ভেবে-চিন্তে তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে ওয়েটারকে দুটো করে পরোটা দিতে বললেন। অর্ডার দেয়ার পরে উনি স্ত্রীসহ হাত ধুতে গেলেন।
হাত ধুয়ে এসে দেখলেন যে, দুটো করে পরোটা দিয়েছে আর ১ বাটি করে ডালের মতো কি যেন দিয়েছে। ডাল মনে করে খাওয়া শুরু করে পরে দেখলেন গরুর মাংস।
তিনি ওয়েটারকে ডেকে বললেন যে, আমরা কি রুটির সাথে গরুর মাংস চেয়েছি? আর আপনি দিয়েছেন ভালো কথা – এই টুকু মাংসের দাম কত?
ওয়েটার বললেন যে, ১৮০ টাকা করে প্লেট। তাহলে দুই প্লেটে মোট ৩৬০ টাকা। আলামিন সাহেবের চোখ যেন কপালে উঠে গেলো।
কারণ, যেটুকু মাংস দিয়েছে সেটুকুর দাম ১০০ টাকা করেও হবে না। সেখানে ১৮০ টাকা করে প্লেট। আবার নরমাল পানি সেখানে নাই। বোতল দিয়েছে ২টি। বাইরে সেগুলো বোতলের দাম ১৫ টাকা কিন্তু ঐ হোটেলে নেয়া হচ্ছে ২০ টাকা করে।
অর্ডার করা ছাড়া কেন তিনি আলামিন সাহেবকে গরুর মাংস দিলেন তার কোনো জবাব ওয়েটার দিতে পারেনি। আসলে তাদেরকে ঐভাবে অভ্যস্ত করানো হয়েছে। ঐ ভাবেই ট্রেনিং দেয়া হয়েছে।
আলামিন সাহেব ক্যাশ কাউন্টারে টাকা দিতে গিয়ে কিছু টাকা কম দিতে চেয়েছেন কারন অর্ডার ছাড়াই তাদেরকে অল্প পরিমাণ গরুর মাংস দিয়ে বেশি পরিমাণে টাকা নেয়া হচ্ছে তাই।
কিন্তু সেখানে যিনি টাকা নিচ্ছিলেন তার ব্যবহার ও আচরণ আরও খারাপ। তারা যেন মগের মুল্লুকে বাস করছেন। ক্যাশ কাউন্টারে থাকা ব্যক্তি উল্টো বলছেন যে, দুই জন ব্যক্তির তো ৬০০ টাকা বিল করা দরকার ছিল। কথাটা আসলে উনি যেমন করে বলেছেন তেমন করে তুলে ধরা হলো না।
পরে আলামিন সাহেব বাধ্য হয়ে ক্যাশ কাউন্টারে মোট ৪৬০ টাকা দিয়ে চলে এলেন। সেদিন আলামিন সাহেব যে গাড়িতে চড়েছিলেন সে গাড়িতে আরও অনেক যাত্রী ছিল। বেশিরভাগ মানুষেরই এমন তিক্ততা অভিজ্ঞতা সেদিন হয়েছে।
কিন্তু কেউ সেভাবে আসলে প্রতিবাদ করতে পারেনি। আবার ওয়াশরুমগুলোর পরিবেশও মারাত্মকভাবে খারাপ ছিল। অর্থাৎ সবদিক থেকেই সেটা ছিল একটা অরাজকতার জায়গা। মানুষকে ধোকা দিয়ে টাকা-পয়সা নেয়াই যেন ছিল তাদের প্রধান কাজ।
আলামিন সাহেব যে হোটেলে খেতে গিয়েছিলেন সেই হোটেলে গাড়ির স্টাফদের আবার উপর তলায় খেতে দেয়া হয়। কারণ, গাড়ির স্টাফদের সাথে হোটেল মালিকের মধ্যস্থতা করা আছে। এক প্রকার চুক্তি করা আছে।
চুক্তিটি হচ্ছে এই যে, আপনারা সাধারন যাত্রীকে আমাদের হোটেলে নিয়ে আসবেন আর আমরা তাদের কাছে খাবার বিক্রির নামে ডাকাতি করবো। আর আপনার কিছু কমিশন পাবেন আর আমাদের উপর তলায় আপনাদের একটু ভালো করে খাওয়াবো। নিচতলায় খাওয়ালে তো যাত্রীরা দেখে ফেলবে।
হাস্যকর মনে হলেও বাস্তবে হয়তো এমন চুক্তিই করা আছে বাস স্টাফ এর সাথে। আসলে এভাবে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ খাবার খাওয়ার নামে প্রতারিত হচ্ছেন কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। প্রতিবাদ করছে না। কারণ, ২০ মিনিট সময় দেয়া হয় যাত্রীদের। আর ১৫ মিনিটের মধ্যেই ডাক্তাতি শেষ হয়ে যায়।
সরেজমিনে তদন্ত করে যদি দেখা যায় তবে প্রতিদিন এমন হাজার হাজার ঘটনা তুলে ধরা যাবে। এমনও শোনা গেছে যে, কিছু কিছু হোটেলে কম দামে খাবার দেয়ার নাম করে খাওয়া শেষে বিল নেয়ার সময় জোর করেই বেশি টাকার বিল নেয়া হয়।
এসব ব্যাপারে সরকারের একটু সচেতন হওয়া জরুরী। স্থানীয় প্রশাসনের একটু নজর দেয়া দরকার এই বিষয়ে। বগুড়ার যেসব হোটেল রাত্রীকালীন সেবা যাত্রীদের দেয় সেগুলোতে অভিযান চালানো দরকার। তারা আসলে মানুষকে কি খাওয়াচ্ছে এবং কিভাবে দাম রাখছে।
আলামিন সাহেব এর পকেটে হয়তো টাকাটা ছিল বলে তিনি দিতে পারছেন কিন্তু যাদের পকেটে ঐ টাকাটাও থাকে না তাদের সাথে তাহলে কেমন আচরণ করা হয় একটু ভাবলেই বুঝতে পারবেন।
আপনাদের কাছে অনুরোধ, বগুড়ার যেসব হোটেল সাধারন মানুষের সাথে এমন আচরণ ও দিন ডাকাতি করে আসছে তাদের উপর সোচ্চার হোন। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সেই সব হোটেল এর তথ্য অনলাইন ও অফলাইনে তুলে ধরার চেষ্টা করুন। তাদের প্রতারণার গোমস ফাঁস করে দিন।
তাহলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ও যাওয়া মেহনতি মানুষগুলো একটু শান্তিতে বগুড়ার হোটেলগুলোতে থামতে পারবে এবং কিছু খেতে পারবে। হোটেলগুলোকে এজন্য ধন্যবাদ অবশ্যই দেব যে, ওয়াশরুম ব্যবহারের জন্য তারা কোনো বাড়তি টাকা নেন না। কিন্তু ওয়াশরুম গুলো যাতে পরিচ্ছন্ন থাকে সেদিকটায়ও নজর দিতে হবে।
সবাই ভালো থাকবেন। আর বগুড়ার হোটেল-এর এই খবরটি সব জায়গায় ছড়িয়ে দেন। তাহলে দেশের আরও যেসব জায়গায় রাত্রীকালীন যাত্রীসেবা দেয়ার নামে দিন ডাকাতি করা হচ্ছে তাদের মুখোস উন্মোচন হোক। এতে করে অবশ্যই বিষয়টি প্রশাসনের গোচরে আসবে।
আরও পড়ুন: ঢাকা শহর জ্যাম থেকে মুক্তি পাচ্ছে যে কারণে।