ফেসবুক আইডি হ্যাক করে আপনাকে সহজেই বিপদে ফেলতে পারে হ্যাকাররা। তাই হ্যাক হওয়া আইডি যদি কোনভাবেই উদ্ধার করতে না পারেন তাহলে দেরি না করে অবশ্যই আইনের সহযোগিতা নিন।
অর্থাৎ পুলিশ এবং বিটিআরসিকে জানিয়ে রাখুন যাতে পরবর্তীতে আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কেউ অপরাধমূলক কোন কাজ করলে আপনি বেঁচে যান। ফেসবুক আইডি হ্যাক হলে অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার এবং পারমানেন্টলি ডিলিট এই দুটি ক্ষেত্রেই আপনাকে সাহায্য করবে। যারা আপনাকে সাহায্য করতে পারবে:
১. তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয়
২. সিটিটিসি ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগ
১. তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয়: তথ্য ও যোগাযোগ যোগাযোগ মন্ত্রনালয় মাত্র তিন দিনের মধ্যে আপনার হ্যাক হওয়া আইডিটি উদ্ধার করে দেবে অথবা আপনার অনুমতি সাপেক্ষে ডিলেট করে দেবে।
এজন্য আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়ে গেলে প্রথমেই করনীয় কাজ হল এলাকার পুলিশ ষ্টেশনে গিয়ে জিডি করা। জিডি করার অভিজ্ঞতা না থাকলে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আপনাকে সাহায্য করবে।
দায়িত্তরত পুলিশ কর্মকর্তার কাছে আপনার সমস্যার কথা জানিয়ে একটা সাধারন ডায়েরি করুন। ব্যাস, জিডি করা শেষ এবার আপনাকে জিডির একটি কপি দেওয়া হবে। এই কপিটি খুব যত্ন সহকারে রাখতে হবে।
জিডি করা শেষে আপনার দ্বিতীয় কাজ হবে তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয় এর সাইবার নিরাপত্তা হটলাইনে ফোন করে তাদের সাথে যোগাযোগ করা।
সাইবার নিরাপত্তা হটলাইনের মোবাইল নাম্বার হল ০১৭৬৬-৬৭৮৮৮৮, আপনি এই নাম্বারে শুক্রবার ব্যতীত সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে যোগাযোগ করতে পারবেন।
তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা আপনার সমস্যা শোনার পর আপনাকে একটি ইমেইল অ্যাড্রেস দেবে। ইমেইল অ্যাড্রেসটি হল [email protected] এবং এই ইমেইল অ্যাড্রেস এ আপনাকে যে অ্যাটাচমেন্ট গুলো পাঠাতে বলা হবে সেগুলো নিম্নরূপ:
১. জিডির স্ক্যান করা কপি;
২. ভোটার আইডি কার্ড এর রঙ্গিন স্ক্যান কপি;
৩. হ্যাক হওয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এর লিংক;
৪. ইতিপূর্বে কোথাও কখনো ব্যবহার করা হয়নি এমন সম্পূর্ণ নতুন একটি ইমেইল আইডি;
সব অ্যাটাচমেন্ট সহ ইমেইল পাঠানোর পর আপনি চাইলে আবার হটলাইনে কল করে ইমেইল পেয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন।
এরপর তিন দিনের ভিতর আপনার হ্যাক হয়ে যাওয়া অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করে আপনাকে ফোন দিয়ে জানানো হবে।
সিটিটিসি ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগ:
নারী পুরুষ উভয়ের ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন জটিল সমস্যা, পরামর্শ, মামলা করা, মামলার তদন্ত, হ্যাকার চিহ্নিত করা, গ্রেফতার করা ও হ্যাক হওয়া একাউন্ট উদ্ধারসহ বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
যেভাবে সাহায্য করবে সাইবার ক্রাইম বিভাগ:
১. হেল্প ডেস্ক
২. পরামর্শ
৩. ফেসবুক আইডি উদ্ধার ও হ্যাকার চিহ্নিত
৪. মামলা ও মামলার তদন্ত
৫. গোপনীয়তা রক্ষা
৬. স্বশরীরে যোগাযোগ
৭. নারী পুলিশের সহায়তা
হেল্প ডেস্ক: ফেসবুকসহ অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমের যেকোন সমস্যায় আপনি সিটিটিসি ইউনিটের ক্রাইম বিভাগের হেলফ ডেস্কের সহায়তা নিতে পারেন। এই হেল্প ডেস্কের দুটি মোবাইল নম্বর রয়েছে।
পরামর্শ বা সহযোগিতার জন্য আপনি ফোন করতে পারেন ০১৭১৩-৩৯৮৩১১ অথবা ০১৭৬৯-৬৯১৫০৯ নম্বরে। সিটিটিসি ইউনিটের এই হেল্প ডেস্ক আপনাকে সহায়তা দেবে সপ্তাহে সাত দিন।
পরামর্শ: আপনার অভিযোগটি জানার পর পুলিশ আপনাকে পরামর্শ দেবে আপনি কি করবেন। যদি মামলা করতে হয়, তবে আপনাকে সহযোগিতা করবে পুলিশ।
ফেসবুক আইডি উদ্ধার ও হ্যাকার চিহ্নিত: সিটিটিসি ইউনিটের এই বিভাগটি আপনার ফেসবুকসহ যেসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে তা যদি হ্যাক হয়, তবে তা উদ্ধারে সহযোগিতা করবে। এছাড়াও হ্যাকার চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।
মামলা ও মামলার তদন্ত: হ্যাকার চিহ্নিত করাই শেষ নয়, এছাড়াও আপনাকে সহায়তা করবে পুলিশ। যেমন- আপনার ফেসবুক আইডি উদ্ধারের পর হ্যাকারের বিরুদ্ধে মামলা ও তদন্ত করবে পুলিশ।
গোপনীয়তা রক্ষা: পুলিশ আপনাকে সহায়তা করবে এবং মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে আপনার সব ধরনের গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে।
স্বশরীরে যোগাযোগ: সমস্যা জটিল হলে আপনি স্বশরীরে সিটিটিসি ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। যোগাযোগ করার জন্য প্রথমে উপরে উল্লিখিত নম্বরে ফোন দেওয়ার পর পুলিশ সদর দপ্তরে স্বশরীরে যোগাযোগ করতে হবে।
নারী পুলিশের সহায়তা: সিটিটিসি ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগে নারীদের পরামর্শ দেওয়া, মামলার তদন্ত ও সকল প্রকার আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য নারী পুলিশও রয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, ফেইসবুক হ্যাক একটি অপরাধমূলক কর্মকান্ড। কেউ এমন কাজ করলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া উচিত।
তবে যখন ফেইসবুক আইডি কেউ খোলে তখন সাবধানতার সাথে খোলা উচিত এবং যতো ধরণের নিরাপত্তামূলক সেটিংস রয়েছে সব চালু রাখা উচিত।
তাই অনুরোধ করবো, যখন প্রথম ফেইসবুক আইডি খুলবেন তখন অভিজ্ঞ কাউকে সাথে নিয়ে খুলুন এবং নিরাপত্তামূলক সেটিংসগুলো চালু করে নিন। তাহলে হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
আরও পড়ুন: সেক্স শব্দটি বাংলাদেশে ইন্টারনেটে কেন এত বেশি সার্চ হয়?