ফেসবুক এর প্রতি আসক্তি বর্তমানে অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। এই আসক্তি মানুষকে কখনো ভালোর দিকে নিয়ে যেতে পারে না।
কেবলমাত্র নিকট মানুষ কিংবা সামাজিকভাবে মানুষটিকে দূরে নিয়ে যায়। আসক্তিকে ঠিক নেশা বললেও ভুল হবে না।
কেননা, নেশা আমাদের সবারই খুব পরিচিত একটা শব্দ। আমরা হরহামেশাই শুনি, অমুক ভাইয়ের খেলা দেখার খুব নেশা। কিংবা তমুক আপুর হিন্দী সিরিয়াল দেখার নেশা। আবার অমুকের মদের নেশা আছে, তমুকের ড্রাগস এর নেশা, এসবও আমরা শুনি।
এই নেশার জগতে সর্বশেষ জনপ্রিয় এবং “ডিজিটাল” সংযোজন হলো “ফেসবুক” এর নেশা। যত দিন যাচ্ছে, এই নেশা ততই ব্যাপক আকারে দেখা দিচ্ছে।
এমনকি চিকিৎসকেরাও একে “Facebook Addiction Disorder” নামে একটি রোগে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এ রোগের চিকিৎসা মূলত মানসিকভাবেই করতে হবে।
এই নেশায় অথবা রোগে আপনি ভয়ংকরভাবে আসক্ত কিনা, কিভাবে বুঝবেন? আজ মূলত এই ব্যাপারেই আলোচনা করবো। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
১. সকালে ঘুম থেকে উঠেই আপনার সর্বপ্রথম কাজ হলো ফেসবুকে ঢুকে চেক করা। এমনকি খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়েও আগে ফেসবুকে ঢোকা। আবার ঘুমাতে যাওয়ার সময়ও আপনার সর্বশেষ কাজ যদি হয় ফেসবুক চেক করা।
২. ফেসবুক ছাড়া আপনার কাছে বাকি সব অর্থহীন মনে হয়। আপনি কোন কিছুতে আনন্দ পান না, মজা পান না। মনে হয় সব মজা যেন ফেইসবুকেই।
দিনের অল্প কিছু সময়ও যদি আপনি ফেসবুকে না ঢুকতে পারেন, আপনার বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন- ঘুম না আসা, অস্থির লাগা, ঘাম হওয়া, অল্পতেই রেগে যাওয়া ইত্যাদি।
৩. ফেসবুকে সারাদিন আপনার বসে থাকতে ভালো লাগে। একারণে আপনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, অফিসের মিটিং এ আপনি অংশ নেন না, পারিবারিক কোন অনুষ্ঠানে আপনি যান না। অথচ এসবে আপনার কোন বিকার নেই। আপনি নির্বিকার।
৪. কয়েকদিনের জন্য হলেও যদি আপনাকে ফেসবুক থেকে দূরে থাকার জন্য জোর করা হয়, হতে পারে আপনার পরিবার থেকে, কিংবা অফিসের পিসিতে ফেসবুক ব্যবহার করা না যায়, আপনার ভিতরে চরিত্রগত কিছু অস্বাভাবিকতা আসে।
আপনি কোন কাজেই আগ্রহ পান না। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। এমনকি ফেসবুক ব্যবহার করার জন্য যদি আপনার নিজের পিসিও না পান, আপনি দরকার হলে আপনার বন্ধুর এমনকি অপরিচিত লোকেরও মোবাইল অথবা পিসিতে ফেসবুকে ঢোকার চেষ্টা করেন। ফেসবুকের আপডেট আপনার চাই ই চাই। চিকিৎসকেরা একে সনাক্ত করেছেন “Facebook Withdrawal Syndrome” নামে।
৫. ফেসবুকে আপনার কোন নোটিফিকেশন নেই। ইনবক্সে কোন মেসেজ নেই। আপনি চ্যাটও করছেন না। তারপরও আপনি ঘন্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই থাকেন।
৬. বাস্তব জীবনে আপনি মোটেও সুখী নন। কিন্তু ফেসবুকে আপনি সবাইকে দেখাতে চান, আপনি অনেক মজায় আছেন, আনন্দে আছেন। একটা ফ্যান্টাসির জগৎ সৃষ্টি করতে চান আপনি।
৭. ফেসবুকে সারাদিন, সারারাত থাকার কারণে আপনার রাতে ঘুমও ঠিকমত হয় না। শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অথচ আপনি নির্বিকার।
৮. ফেসবুকে ঢুকলেই আপনি নস্টালজিয়ায় ভোগেন অথবা ভুগতে চান। পুরোন প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা বন্ধুদের ছবি দেখতে চান, তাদের প্রোফাইলে ঢুঁ মারতে চান।
আগে আপনার জীবন কেমন ছিল, এখন কেমন আছেন এসব ভেবে উদাস হয়ে যান। আর সবচেয়ে বড় কথা, এই উদাস থাকতে বা নস্টালজিয়ায় ভুগতেই আপনার ভালো লাগে।
৯. ফেসবুকে আপনার হাজার হাজার বন্ধু থাকার পরও যদি আপনি নিঃসঙ্গ বোধ করেন। আপনি ভাবেন, আমার কোন ভালো বন্ধু নেই।
পরিশেষে বলা যায়, ফেসবুকের সদব্যবহার করার মাধ্যমে অনেকেই হাজার হাজার ডলার ইনকাম করছেন। তারা কিন্তু আসক্ত নয়। তারা কাজের সময় কাজ করে ফেসবুক থেকে বেরিয়ে পড়ছেন।
আপনি যে ফেসবুক ব্যবহার করবেন না তা নয়। বর্তমানে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের খবর সর্বপ্রথম ফেসবুকেই পাওয়া যায়।
তাই ফেসবুক আপনি অবশ্যই ব্যবহার করবেন তবে সেটা লিমিটেড। যখন আনলিমিটেড করবেন তখনই সেটা আসক্তি হিসেবে প্রকাশ পাবে।
অনেক ছেলেমেয়েই এভাবে পড়াশোনা বাদ দিয়ে ফেসবুকে আসক্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নিজের দিকে তাকান, নিজেকে প্রশ্ন করুন আর উপরে দেয়া তথ্যগুলোর সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিন। আপনি ফেসবুকের প্রতি আসক্ত কিনা বুঝতে পারবেন।
আরও পড়ুন: মানসিক রোগ (উৎকণ্ঠা) কেন হয়? কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিন।