বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রেসক্রিপশন ছাড়া মাত্র ৩৯ প্রকার ঔষধ বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তার উল্টো। এখন, অ্যান্টিবায়োটিকসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই হরহামেশাই বিক্রি হচ্ছে।
৩৯ প্রকার ঔষধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া অনুমোদন দেয়ার পেছনের প্রধান কারণ হলো রোগী অনুপাতে চিকিৎসক স্বল্পতার কারণ এবং এগুলো মূলত ওটিসির মতো ড্রাগ।
তবে এখানে যে তালিকাটি দেয়া হয়েছে তা নিয়ে কিছু চিকিৎসক সন্দিহান প্রকাশ করেছেন। রাজধানী সহ সারা দেশের কোন ফার্মেসীতে এই ঔষধের তালিকা নেই বরং প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরণের ঔষধ।
জাতীয় ঔষধ নীতি ২০১৬-এর ধারা ৩ (১৫)-তে প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রয়যোগ্য ঔষধের তালিকা প্রণয়নের বিষয়ে বলা হয়েছে— ‘উন্নত দেশগুলোর আদলে সাধারণভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে’ এই তালিকা প্রণয়ন করা হবে।
ধারা ৪ (১৮) -এ ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) বা প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রিযোগ্য ওষুধ সম্পর্কে বলা হয়েছে— নিবন্ধিত অ্যালোপেথিক, আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসা পদ্ধতির ওষুধের মধ্য থেকে সাধারণভাবে ব্যবহৃত এবং কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ওষুধ তালিকাভুক্ত করা হলো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সময় সময় এ তালিকা হালনাগাদ করবে বলে ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্র জানায়, এই নীতিমালা অনুযায়ী ৩৯টি অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই দিতে পারেন ফার্মেসির বিক্রেতাগণ।
এখন আমরা জানবো, তালিকার মধ্যে যেসব ঔষধ রয়েছে:
কৃমির ট্যাবলেট (এলবেনডাজল চিউয়্যাবল ট্যাবলেট), গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট বা সিরাপ বা সাসপেনশন (এন্টাসিড চিউয়্যাবল ট্যাবলেট বা সাসপেনশন), ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট, বেনজিল বেনজোয়েট লোশন, চর্মরোগসহ বিভিন্ন ধরনের লোশন, চোখ ও কানের ড্রপ, ব্যথার জন্য জেল, কনডম ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, গ্লিসারিন, সাপোজিটরি, মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট (এন্টিবায়োটিক) বা সাসপেনশন, গ্যাস্ট্রিকের সিরাপ (মিল্ক অব ম্যাগনেশিয়া), মাউথ ওয়াশ, মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল বা ড্রপ, ওমিপ্রাজল ক্যাপসুল, ওরস্যালাইন, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট/সিরাপ/সাসপেনশন/ সাপোজিটরি, পারমেথ্রিন ক্রিম, রেনিটিডিন ট্যাবলেট, পোভিডন আয়োডিন, ভিটামিন এ ক্যাপসুল, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (একক বা যৌথ) ট্যাবলেট/সিরাপ/ড্রপ, জাইলোমেটাজোলিন জিরো পয়েন্ট ওয়ান নাসাল ড্রপ)।
এই তালিকায় থাকা ঔষধ মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট/ সাসপেনশন নিয়ে তরুণ চিকিৎসকদের সন্দেহ রয়েছে। ঔষধটিকে অ্যান্টেবায়োটিক হিসেবে চিহ্নিত করে তরুণ চিকিৎসক মারুফুর রহমান বলেন, ‘এটি কেন তালিকায় রাখা হলো তা বোধগম্য নয়।’
তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক সৈকত কুমার কর বলেন, ‘মেট্রোনিডাজলকে আমরা অ্যান্টেবায়োটিক বলি না। এটি ডায়রিয়া হলে দেওয়া হয়। মেট্রোনিডাজল জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম।’
একই মতামত দেন বাংলাদেশ হেলথ রাইটস মুভমেন্টস-এর প্রেসিডেন্ট ডা. রশীদ-ই-মাহবুব। তিনি বলেন, ‘মেট্রোনিডাজল অ্যান্টেবায়োটিক না। তবে এটা রোগ নিরাময়ে কাজ করে।’
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ঔষধের দোকান ঘুরে দেখা যায়, কিছু ফার্মেসিতে অ্যান্টেবায়োটিক প্রতিরোধে সচেতনতামূলক পোস্টার টাঙানো রয়েছে। তবে কোথাও নির্দিষ্ট ওষুধের তালিকা (ওটিসি তালিকা) টাঙানো নেই। কোনও কোনও বিক্রেতা এই তালিকা মুখস্থ থাকার দাবি করলেও অনেককেই সব ধরনের ওষুধ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর লালবাগে ‘মা মেডিক্যাল হল’-এর বিক্রেতা ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ দেই না। তবে জ্বর-ঠাণ্ডা, গলা ব্যথার ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া দেই। আরেক ফার্মেসির বিক্রেতা সুজন আহমেদ বলেন, ‘মানুষ খুচরা ওষুধের জন্য আমাদের কাছে আসে। কেউ আসলে ওষুধ দিতে না করি না।
পরিশেষে বলা যায়, রোগ হলেই আমরা ঔষধ সেবন করি। তবে সব ধরণের ঔষধেই কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই সর্বসাধারনকে এ ব্যাপারে যেমন সচেতন হওয়া প্রয়োজন তেমনি ঔষধ বিক্রেতাগণকেও সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
ভুল ঔষধ প্রয়োগে জীবন বিপন্ন হতে পারে। আবার ডোজ এর ব্যাপার রয়েছে। তাই আসুন, আমরা ওটিসি ড্রাগগুলো কেনার ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করি এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়া অন্যান্য ঔষধ ক্রয় না করি।
আরও পড়ুন: লিনেজোলিড (Linezolid) ঔষধটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য