প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা কিছুদিন আগে হয়ে গেলো। বর্তমানে ভাইভা চলছে। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ এর ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার পর ভাইভা পরীক্ষা হয়।
ভাইভা পরীক্ষায় যারা ভালো করে তাদের চাকরি কনফার্ম হয়ে যায়। যদিও আরও কিছু বিষয় কোন কোন ক্ষেত্রে বিবেচিত হয়। তবে অবশ্যই ভাইভা পরীক্ষা ভালো দিতে হয়।
আজ এখানে একটি রিয়েল ভাইভা তুলে ধরা হলো। আশা করি, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে যারা পাশ করেছেন এবং বর্তমানে ভাইভার জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের কাজে লাগবে। তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায় যাচ্ছি।
প্রার্থীর নাম: আদি আহমেদ
দরজা খুলে ঢুকে সালাম দিলাম। চেয়ারের কাছে যেতেই –
বোর্ড: বলুন, পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল কবে?
আমি: বললাম। এরপর এক্সটার্নাল স্যার আমাকে বসতে বললেন।
বোর্ড: কাজপত্র কি এনেছেন, বের করেন।
আমি: বের করে স্যারের হাতে দিলাম।
বোর্ড: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন ইসলামিক স্টাডিজে। এটা দেখে প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করতে লাগলো। গুণ করতে দিলো, সমীকরণ এর অংক দিলো। অংক করছি আর তখন ই ৪ টা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। দুই কাজ একসাথে।
বোর্ড: ঠিক আছে, এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার গুলো বলুন।
আমি: বলা শুরু, ৬ টা বলার পর এক্সটার্নাল স্যার থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ভারতে দুজন বিজেপি নেতা মহানবী কে নিয়ে কটুক্তি করেছে। সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশ এখানে কি করতে পারে?
আমি: উত্তর রেডি ছিলো। বলার পর তাঁদের সন্তুষ্ট মনে হলো।
বোর্ড: আচ্ছা, তালেবান কি নারী অধিকার ক্ষুন্ন করছে?
আমি: স্যার, পর্দার বিষয়ে তারা যা করছে যেমন মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে, এটা সঠিক কাজ করছে। কারণ মহান আল্লাহ সূরা আহযাবে বলেছেন – পর্দা সংক্রান্ত আয়াত বললাম।
কিন্তু, তাদের কিছু কাজ বিতর্কিত এবং এটি ইসলাম সমর্থন করে না। যেমন, প্রাথমিক শিক্ষার পর নারীদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ, নারীদের ৭২ কিমি বেশি গেলে পুরুষ নিয়ে যেতে হবে, নারীদের গৃহ নির্যাতন মেনে নিতে হবে – নারীরা ডিভোর্স দিতে পারবে না। এগুলো ইসলাম সমর্থ করে না।
বোর্ড: উত্তর গ্রহন করেছে মনে হলো। ডিসি স্যার জিজ্ঞেস করলেন, ডিভোর্সের বিষয়ে ইসলাম কি বলে?
আমি: ইসলাম ডিভোর্স দেয়া কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করে। কিন্তু, এটা হারাম করে দেয় নি। একান্ত প্রয়োজন হলে ডিভোর্স দিতে পারবে।
বোর্ড: জিবরাইল আঃ কোন সাহাবীর বেশ ধরে ওহী নিয়ে আসতেন?
আমি: স্যার, হযরত দাহিয়াতুল কালবি রাঃ।
বোর্ড: হিন্দু ধর্মের কয়েকজন দেবতার কথা বলে জিজ্ঞেস করলেন ইসলাম কি উনাদেরকে নবী হিসেবে মানে?
আমি: স্যার পবিত্র কুরআনে মাত্র ২৫ জন নবীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবী রাসূল পাঠিয়েছেন।
কিন্তু সেগুলো আমরা জানি না। হয়তো তারা আল্লাহর প্রেরিত কোনো দূত ছিলেন, অথবা না ও হতে পারেন। হাদিসে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। সুতরাং আমরা তাঁদেরকে নবী হিসেবে মানতে পারি না। কিন্তু, তাঁদেরকে সম্মান করতে হবে।
বোর্ড: ভালো বলেছেন ।সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদে কি আছে?
আমি: বললাম।
বোর্ড: ১৫ তম সংশোধনী টা বলুন।
আমি: বললাম।
বোর্ড: বঙ্গবন্ধু কবে প্রথম পশ্চিম পাকিস্তানে যায়?
আমি: সরি স্যার।
বোর্ড: বঙ্গবন্ধু কবে শেষবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়?
আমি: সরি স্যার।
বোর্ড: বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে আজই ভালো করে পড়বেন।
আমি: জি স্যার।
বোর্ড: সাহিত্য পড়েন?
আমি: জি স্যার।
বোর্ড: কার লেখা ভালো লাগে?
আমি: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
বোর্ড: দেবদাস কোন গ্রামে মারা যায়?
আমি: হাতিপোতা গ্রাম।
বোর্ড: কবিতা শুনান একটা।
আমি: শুনালাম।
একটা বাংলা বাক্য ও ইংরেজি বাক্য লিখে সালাম দিয়ে বের হলাম। এই ছিলো আমার ভাইভা অভিজ্ঞতা। আশা করি, সবার জন্য সহজ হবে।
আরও পড়ুন: পিজিডি ইন থিয়েটার ১ম সেমিস্টার পরীক্ষার আবেদনের বিজ্ঞপ্তি।