প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা খুবই সন্নিকটে। এ মাসের ২২ তারিখ থেকে জেলাভিত্তিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ মাস বলতে এপ্রিল মাস বোঝানো হয়েছে। প্রাইমারী পরীক্ষা সাধারণত এমসিকিউ পদ্ধতিতে হয়।
যার জন্য আপনি যদি একটু বুদ্ধি করে প্রস্তুতি নেন তাহলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আজ আমরা ঠিক ঐরকম কিছু বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো যা আপনার প্রস্তুতিতে একটু হলেও সাহায্য করবে।
পুরো পোস্ট মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন। অল্প কথাতেই সব কিছু বোঝানোর চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ। প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বহুদিন পরে হচ্ছে। তাই অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর প্রস্তুতির ঘাটতি থেকেই যাবে।
প্রথমেই বলি, প্রাইমারী নিয়োগ পরীক্ষা অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাবের কারণে তা পিছিয়ে গেছে। শেষমেষ ২ বছর পরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে পরীক্ষার্থী সম্ভবত ২ লাখের উপরে। একটি সিটের জন্য প্রায় ২৫ জন লড়াই করবে। সুতরাং আপনার কমপিটিশন কিন্তু খুব সহজ নয়। একটু ভালোভাবে পরীক্ষা দিলেই তবে চান্স পাবেন।
ভয় নেই কারণ সবার প্রস্তুতি সমান নয়। আবেদন তো যারা ডিগ্রী বা অনার্স পাশ করেছে তারাই করে রেখেছে। কিন্তু ফলাফলের দিক যদি চিন্তা করেন তাহলে সব ধরণের মেধাবীরাই কিন্তু আবেদন করেছে।
আর বিগত দুই বছরে অনেকেই পড়াশোনা করেনি। পড়ার টেবিলেই বসেনি। তাদের সাথে আপনার প্রতিযোগিতা করতে হবে না। আপনি সবসময় মনে করবেন যে, আপনি আপনার চেয়ে মেধাবীর সাথে লড়াই করছেন।
যাই হোক, প্রথমত আপনি বিগত সালের প্রাইমারী পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো পড়ে ফেলবেন। এক্ষেত্রে প্রফেসর গাইড অনুসরণ করতে পারেন। বইটিতে তেমন কোনো ভুল নেই। আমি নিজেও সেটা পড়েছি। প্রতিটি প্রশ্নের খুব সহজভাবে উত্তর দেয়া আছে ব্যাখ্যা সহ বিশেষ করে গণিত ও ইংরেজীর ক্ষেত্রে।
বিগত সালের সম্ভবত ১২ থেকে ১৪টি প্রশ্নপত্র রয়েছে। সেগুলো যদি আপনি কাভার করতে পারেন তবে ৬০% কমন পাবেন ইনশাআল্লাহ। কারণ, এর আগের পরীক্ষাগুলোতে তাই হয়েছে।
এরপর আপনি ৮ম শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণীর ইংরেজী বই ভালোভাবে পড়বেন। সেখানে থাকা শব্দগুলোর সিনোনিম, অ্যানটোনিম ইত্যাদি পড়বেন। ৯ম-১০ম শ্রেণীর গ্রামার বইটা ভালো করে পড়বেন। বিশেষ করে ট্রান্সলেশনগুলো।
বাজার থেকে গত দুই মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বই কিনে নিয়ে চোখ বুলিয়ে নেন। সব কিছু না শুধু হাইলাইটেড যেগুলো সেগুলো পড়বেন।
প্রতিদিন সকালে ৪ ঘন্টা এবং রাতে ৪ ঘন্টা করে পড়ার চেষ্টা করুন। তাহলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর পড়ার সাথে সাথে খাতায় অবশ্যই লিখবেন। না লিখে শুধু পড়বেন না। তাহলে পরীক্ষার হলে গিয়ে মনে করতে পারবেন না।
কোনো সালের প্রশ্নপত্র পড়ার পর কাউকে দিয়ে আপনি টেস্ট করুন। আপনি কতটুকু মনে রাখতে পারছেন তা পরীক্ষা করুন। এতে ভয় কমবে এবং মনে রাখার ক্ষমতা অর্থাৎ স্মৃতিশক্তি বাড়বে।
বর্তমানে সাধারণত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজী, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন করা হয়। সুতরাং কোনো বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। বাংলার ক্ষেত্রে ব্যাকরণ অংশগুলো ভালো করে পড়বেন। ব্যাকরণ থেকে সাধারণত কঠিন প্রশ্ন করা হয়।
শোনা যাচ্ছে, আগে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন করা হতো। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুতরাং আপনার মেধার যাচাই কিভাবে করা হবে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। কিন্তু আমি মনে করি, আপনি যদি ৫ম শ্রেণী থেকে শুরু করে ৯ম শ্রেণীর বইগুলো সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন তবে আপনাকে কেউ আটকাতে পারবে না।
পরীক্ষায় ন্যাগেটিভ মার্কিং রয়েছে। অর্থাৎ আপনি যদি ভুল উত্তর দেন তবে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নাম্বার কাটা যাবে। চারটি প্রশ্নের ভুল উত্তর দিলে আপনার ১ মার্ক কাটা যাবে।
তাই উত্তর প্রদানের সময় খুব সাবধানে বৃত্ত ভরাট করবেন। একবার দাগিয়ে বা ভরাট করে ফেললে কিন্তু আর মুছে ফেলার কোনো সুযোগ নেই।
বাংলা ব্যাকরণ অংশের পদ, কারক, বিভক্তি, প্রকৃতি-প্রত্যয়, সন্ধি, সমাস এবং শুদ্ধ বানান রীতির ওপর অবশ্যই জোর দেবেন। বিগত সালের প্রশ্নগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, এসব বিষয় থেকে প্রশ্ন প্রতিবার এসেছে।
প্রফেসর এর যে বই এর কথা বলা হয়েছে সেই বইয়ে ১৫টির মতো মডেল টেস্ট রয়েছে। সবগুলো মডেল টেস্ট বাসায় প্রাকটিস করবেন। আপনার পরীক্ষা ভীতি ইনশাআল্লাহ থাকবে না।
পরীক্ষার হলে যাওয়ার পরে অবশ্যই খুব ঠাণ্ডা মাথায় আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন দিতে হবে এমন ঘরগুলো পূরণ করবেন। ওখানে যদি ভুল করেন তবে কিন্তু আর এগোনোর সুযোগ পাবেন না।
যেহেতু শুরুতে এমসিকিউ পরীক্ষা হবে এবং এখানে টিকলে পড়ে আপনি মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাক পাবেন সুতরাং এখন আপনাকে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ভাবতে হবে না। আপনি এখন পুরো দমে এমসিকিউ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আপনাকে খুব একটা কাঠ-খড় পোহাতে হবে না।
আরও পড়ুন: রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার ফজিলতগুলো জেনে নিন।
আর অবশ্যই বার বার লিখবেন। যেটা পড়বেন সেটাই লিখবেন। সময় অপচয় করা যাবে না। প্রতিটি মুহূর্তকে এখন কাজে লাগান। খুব বেশি বিস্তারিত পড়তে যাবেন না। এটা বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষা নয়। সুতরাং শর্টকার্ট করেই পড়ুন, বার বার পড়ুন। তাহলে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আসলে তেমন কঠিনভাবে হয় না। কিন্তু বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী ইংরেজীতে ভালো করলেও অংকে ও ব্যাকরণে ভুল করে আসে। তাই ব্যাকরণের প্রস্তুতি অংকের মতো করেই নিতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ে একটি পিডিএফ ডাইজেস্ট ভার্সন বই রয়েছে। আশা করি, যারা মোবাইল বা কম্পিউটারে পড়াশোনা করেন তাদের কাজে লাগবে। বইটি পড়ার জন্য বা ডাউনলোড করার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
পরামর্শ প্রদানে: শ্রী হরিপদ রায় (সাবেক সহকারী শিক্ষক, বাংলা)