প্রস্রাবের সমস্যায় ঘরোয়া সমাধান:
প্রস্রাব এর সমস্যা এখন প্রায়ই চোখে পড়ে। একটু বয়স্ক ব্যক্তিদের এই সমস্যা খুব বেশি। বিভিন্ন কারণে প্রস্রাবের রাস্তায় সমস্যা হতে পারে।
কিডনীতে পাথর হলে হতে পারে এমন সমস্যা। চিকিৎসা না করলে হতে পারে ভয়ংকর সমস্যা। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, পুরুষের তুলনায় নারীদের এই সমস্যা বেশি হয়।
ই-কোলাই নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়। এই ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াই সব সমস্যার মূলে। কারও মধ্যে যদি এই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে তবে তার বার বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সুতরাং প্রস্রাব সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে সবসময় সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য মতে, কিছু ঘরোয়া উপায়ে আপনি এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল হলো কিনা তা জানতে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এবার চলুন জেনে নিই সেই ঘরোয়া উপায়গুলো:
ভিটামিন সি: ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে শরীরের জন্য অনেক উপকারী। টমেটো, কমলা লেবু, বাধা কপি, লেবু, ব্রকোলি ইত্যাদি খাবার খেলে শরীরে ভিটামিন সি এর কোনো ঘাটতি থাকে না।
প্রস্রাব সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে ভিটামিন সি এর কথা ডাক্তার’রা অনেক বলে থাকেন। তাই নিয়মিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন।
ক্যানবেরি জুস: বাজারে সচরাচর পাওয়া যায় এই ফল। তবে দামে একটু অন্যান্য ফলের তুলনায় বেশি। আপনি যদি এই ফল জুস বানিয়ে নিয়মিত খান তবে কিডনীতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
আর এতে করে প্রস্রাব সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আপনার কমে আসবে অনেকাংশেই।
বেকিং সোডা: বাড়িতে কেক কিংবা বিভিন্ন প্রকার পিঠা তৈরীতে বেকিং সোডা কাজে লাগে। ভাজা খাবার তৈরী করতেও এর জুড়ি নেই।
কিন্তু যদি আপনার মুত্রনালীতে আক্রমণ হয়েই যায় তবে এক গ্লাস পানিতে ২ চামচ বেকিং সোডা নিন এবং গুলে ফেলুন। তারপর তা খেয়ে নিন। এভাবে কয়েকদিন খেলে আপনার রোগ কমে যাবে।
রসুন ও আদা: প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় আদা ও রসুন রাখার কথা বলা হয় স্বাস্থ্যবিজ্ঞান অনুযায়ী। জানলে অবাক হবেন যে, এই দুটি সবজি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। সুতরাং প্রতিদিন খাওয়ার চেষ্টা করুন।
আনারস: প্রস্রাবের সমস্যার ক্ষেত্রে আনারস এর রস খুবই উপকারী ও কার্যকরী। বাজারে প্রায় সবসময়ই আনারস পাওয়া যায়। দামও খুব বেশি না। সপ্তাহে অন্তত একদিন আনারস খান।
পানি: পানি বলতে এখানে বিশুদ্ধ পানির কথা বলা হচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্যই পানির প্রয়োজন। বেঁচে থাকতে হলে পানি আপনাকে পান করতেই হবে।
এমন অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে পানি পান করে না। তাদের ক্ষেত্রে মুত্রনালী সংক্রান্ত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
প্রস্রাব স্বাভাবিক করতে শুধু নয় – সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য, একটি সুস্থ্য দেহের জন্য প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
গরম পানিতে গোসল: অনিয়মিতভাবে গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। এতে করে প্রস্রাবের ইনফেকশন কমে আসে। বিশেষ করে এতে আপনার মুত্রনালীর ব্যথা কমে যাবে।
স্বাস্থ্যবিধি পালন করুন: সব সময় সুস্থ্য থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিধি পালনের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, অন্তর্বাসের ক্ষেত্রে সুতি কাপড় ব্যবহার করুন।
নিয়মিত গোসল করুন। আপনার থাকার স্থান, বসার স্থান তথা পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
শসা খান: শসাতে প্রচুর পরিমাণে উপকারি পানি রয়েছে। মুত্রনালীর সংক্রমণ কমাতে প্রতিদিন অন্তত একটি শসা খেতে পারেন।
গরম সেঁক নিন: আপনার তলপেটে হট ওয়াটার ব্যাগ এর মাধ্যমে গরম সেঁক দিন। হট ওয়াটার ব্যাগ না থাকলে কোনো সুতিকাপড় গরম করে সেখানে ধরে রাখুন। এতে প্রস্রাবের জ্বালা ও ব্যথা দূর হবে।
আরও পড়ুন: করোনা ভাইরাসের যে লক্ষণগুলো দেখা দিলে হাসপাতালে যেতে হবে।
প্রস্রাব সংক্রান্ত জটিলতা আসলে চরম একটি বাজে রোগ। যারা এই রোগের ভুক্তভোগী তাদের জীবন অসহায় হয়ে যায়।
অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়। লজ্জা-ভয় নিয়ে সংশয় থাকে। আর জ্বালা-পোড়া ও ব্যথা তো আছেই। তাই রোগ যাতে না হয় তাই নিজের প্রতি সচেতন হোন এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলুন।
আর সম্প্রতি আপনি যদি এই রোগে আক্রান্ত হয়েই থাকেন তবে উপরোক্ত ঘরোয়া উপায়গুলো মেনে চলুন।
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অন্তত কোন ওষুধ সেবন করতে যাবেন না। হিতে বিপরীত হতে পারে।