প্রবাস জীবন খুবই কষ্টের। কমে বেশি এই কথাটা আমরা জানি। তবুও সেই কষ্টটা আমরা মেনে নিই শুধু একটু সুখের আশায়। কয়েকটা বছর কষ্ট করে দেশে এসে যদি একটু শান্তিতে থাকা যায় তাই এই চেষ্টাটুকু করা।
কিন্তু কয়জনের কপালে জুটে এই সুখ। বলছিলাম, পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলার অধিকারী পাড়া গ্রামের রহমান শেখ এর ছেলে গাজি শেখ এর কথা।
গত তিন বছর আগে গাজি শেখ একটু সুখের আশায় কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি একটি দোকানে কাজ করতেন।
গাজি শেখ সৌদি আরব যাওয়ার পূর্বেই বিয়ে করেছিলেন। তার স্ত্রীর সাথে ৬ মাস সংসার করেছেন। এরপর স্ত্রীর মত নিয়েই তিনি বিদেশে পাড়ি জমান।
বিদেশে যাওয়ার পরেও গাজী শেখ তার স্ত্রীর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন। সময় পেলেই কল করে কথা বলতেন। মাস শেষে যা বেতন পেতেন স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট নাম্বারে পাঠিয়ে দিতেন।
এভাবেই চলছিল। গাজি শেখ তার বাবা-মায়ের সাথেও কথা বলতেন তবে কম। তিনি বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে তার স্ত্রী তার বাবা-মায়ের সাথে ভালোই আচরণ করতেন।
কিন্তু গাজি শেখ বিদেশে যাওয়ার পর থেকে তার বাবা-মায়ের সাথে তার স্ত্রীর দূরত্ব বাড়তে থাকে। প্রতি মাসে গাজি শেখ তার স্ত্রীর কাছে ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠিয়েছেন।
এভাবে কেটে গেছে তিনটি বছর। তার বাবা-মা অনেক সময় গাজি শেখকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু গাজি শেখ তাদের কথা বিশ্বাস করেনি।
তিন বছর পর যখন গাজি শেখ তার বাড়িতে ফিরে আসেন তখন দেখেন উল্টো অবস্থা। নিজ বাড়িতে তার স্ত্রী নেই। গাজি শেখ বিদেশ থেকে আসার আরও ৬ মাস আগেই তার স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যজনকে বিয়ে করেছেন।
গাজি শেখের পাঠানো সমস্ত টাকা দিয়ে নতুন বাড়ি করেছেন। সংসারের অন্যান্য ব্যয় মেটাতে খরচ করেছেন। এসব কিছু শোনার পরে গাজি শেখ প্রায় পাগল প্রায়।
তিনি অনেক বার তার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। শশুরবাড়িতে গেলে সে বাড়ির লোকজনও তাকে পাত্তা দেয়নি।
বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। গাজি শেখ প্রয়োজনে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সরেজমিনে তার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি প্রায় পাগলের মতো কথা বলছিলেন। স্ত্রীর সাথে সাথে নিজের পাঠানো সমস্ত টাকার শোকে তিনি প্রায় পাগল প্রায়।
স্থানীয় এক ব্যক্তির বরাতে জানা যায়, গাজি শেখ বিদেশে থাকাকালীন সময়েই তার স্ত্রী বাপের বাড়ির কথা বলে চলে যায়। সেখানে গোপনে তার পরিবারের সম্মতিতে আরেক ছেলেকে বিয়ে করে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ঐ স্ত্রীর কাছে যা সম্পত্তি আছে তার সবকিছু গাজি শেখের পাঠানো টাকায় করা হয়েছে। কথা বলার শেষের দিকে তিনি খুব দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং এরকম স্ত্রীর শাস্তি কামনা করেছেন।
আরও পড়ুন: প্রবাস জীবন যে কতোটা কষ্টের তা এই গল্প থেকে জানা যায়।
গাজি শেখ বর্তমানে তার নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। অন্যদিকে, তার স্ত্রী অন্যজনের ঘরে দিব্বি সংসার করছেন। সব মিলিয়ে গাজি শেখ ধ্বংসের পথে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি’রা আশ্বাস দিয়েছেন যে, প্রবাস ফেরৎ যুবক এর একটা সমাধান করবেন।