প্যারালাইসিস একটি জটিল রোগ। মানুষকে পঙ্গু বানিয়ে দেয় এই রোগ। কেউ কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে সারাজীবনের জন্য শয্যাশায়ী হয়ে যায় আবার কেউ খানিকটা বেঁচে থাকে।
প্যারালাইসিস এর জন্য বিভিন্ন রকম চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। তবে সবগুলো পদ্ধতি তেমন কার্যকর নয়। কিন্তু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় একজন প্যারালাইসিস রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
যদিও নিউরোলজিষ্টরা প্যারালাইসিসের অনেক রকমের নাম দিয়ে থাকেন, কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে নাম দিয়ে আসলে তেমন কোনো কাম নাই। লক্ষণ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করলেই সুস্থ হওয়া সম্ভব।
এখন, হোমিওপ্যাথি অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা জানবো। তবে নিজে নিজে ঔষধ সেবন করতে যাবেন না। অবশ্যই যে কোন ঔষধ সেবন করার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Causticum: নির্দিষ্ট একটি অঙ্গ প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হলে তাতে কষ্টিকাম প্রয়োগ করতে হয়। যেমন- একটি আঙ্গুল বা একটি পা ইত্যাদি।
ঔষধ নিম্নশক্তিতে সেবন করলে রোজ দুই-তিন বার করে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সেবন করতে হবে। আর উচ্চ শক্তিতে খেলে সাতদিন বা পনের দিন পরপর এক মাত্রা করে সেবন করতে হবে।
Mercurius Solubilis: মার্ক সল ঔষধটির প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো প্রচুর ঘাম হয় কিন্তু রোগী আরাম পায় না, ঘামে দুর্গন্ধ বা মিষ্টি গন্ধ থাকে।
এছাড়াও কথার বিরোধিতা সহ করতে পারে না, ঘুমের মধ্যে মুখ থেকে লালা ঝরে, পায়খানা করার সময় কোথানি, পায়খানা করেও মনে হয় আরো রয়ে গেছে, অধিকাংশ রোগ রাতের বেলা বেড়ে যায়।
রোগী ঠান্ডা পানির জন্য পাগল, ঘামের কারণে কাপড়ে হলুদ দাগ পড়ে যায় সহ ইত্যাদি। প্যারালাইসিস প্রথমে শরীরের উপরের অংশে দেখা দেয় এবং পরে ধীরে ধীরে নীচের দিকে যায়।
Asterias Rubens: এস্টেরিয়াস রুবেন্স ব্রেন স্ট্রোকের একটি সেরা ঔষধ। এই কারণে ব্রেন স্ট্রোকের পরে যেসব প্যারালাইসিস হয়, তাদেরও সেরা ঔষধ। বিশেষ করে জিহ্বার প্যারালাইসিস।
Conium Maculatun: কোনিয়াম প্যারালাইসিসের একটি সেরা ঔষধ। সাধারণত আঘাত পাওয়ার কারণে অথবা অতিরিক্ত খাটুনির কারণে প্যারালাইসিস হলে তাতে কোনিয়ামের কথা চিন্তা করা উচিত।
Agaricus Muscarius: একগারিকাস প্যারালাইসিসের একটি প্রধান ঔষধ। সারাক্ষন মাথা ঘুরানি, শরীরের বিভিন্ন পেশীতে (বিশেষত চোখের ও মুখের) কম্পন এবং ঝাঁকুনি, ছড়া-কবিতা বানিয়ে বলতে থাকে।
এছাড়াও শিশুদের মতো ছেলে-মানুষি আচরণ, সামনে যাকে পায় চুম্পন করে, রাক্ষুসে ক্ষুধা, ভালো মতো না চিবিয়েই খেয়ে ফেলে, মাথা ঘোরাতে থাকে, পিছনের দিকে পড়ে যাওয়ার প্রবনতা, বজ্রপাতের সময় রোগের মাত্রা বেড়ে যায়।
পায়ের বুড়ো আঙুলের মাথা ফুলে যায় এবং সাথে ব্যথা হয়, ঠান্ডা বাতাসে হাঁটলে রোগের মাত্রা বেড়ে যায় সহ ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে এগারিকাস প্রয়োগ করতে হবে।
Aconitum Napellus: সাধারণত ঠান্ডা বাতাস লেগে মুখে প্যারালাইসিস হলে একোনাইট প্রয়োগ করুন। তবে একোনাইটের লক্ষণ থাকলে যেকোন ধরনের প্যারালাইসিসেই একোনাইট দিতে পারেন।
DulcAmara: সাধারণত ভেজা, ঠান্ডা, স্যাতস্যাতে ফ্লোরে ঘুমানোর কারণে প্যারালাইসিস হলে ডালকামারা খাওয়াতে হবে। জিহ্বা, ফুসফুস, হৃদপিন্ড, কণ্ঠনালী ইত্যাদির প্যারালাইসিসে ডালকামারা প্রযোজ্য।
Lathyrus Sativus: কলাই বা খেসারীর ডাল থেকে তৈরী করা লেথিরাস নামক ঔষধটি প্যারালাইসিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ। প্রধানত শরীরের নিম্নভাগের প্যারালাইসিসে এটি ভাল কাজ করে।
Lobelia Purpurascens: লোবেলিয়া প্যারালাইসিসের একটি উত্তম ঔষধ। সাংঘাতিক মাথা ঘুরানি, মাথা ব্যথা, জ্বর, শারীরিক ও স্নায়বিক দুর্বলতা, ফুসফুসের প্যারালাইসিস ইত্যাদি এর প্রধান প্রধান লক্ষণ।
Lycopodium Clavatum: লাইকোপোডিয়ামের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো রোগের মাত্রা বিকাল ৪ টা থেকে ৮টার সময় বৃদ্ধি পায়, এদের রোগ ডান পাশে বেশী হয়, রোগ ডান পাশ থেকে বাম পাশে যায়।
এদের পেটে প্রচুর গ্যাস হয়, এদের সারা বছর প্রস্রাবের বা হজমের সমস্যা লেগেই থাকে, এদের দেখতে তাদের বয়সের চাইতেও বেশী বয়স্ক মনে হয়, এদের স্বাস্থ্য খারাপ কিন্তু ব্রেন খুব ভালো, এরা খুবই সেনসিটিভ এমনকি ধন্যবাদ দিলেও কেঁদে ফেলে ইত্যাদি।
উপরের লক্ষণগুলোর দু’তিনটিও কোন রোগীর মধ্যে থাকলে লাইকোপোডিয়াম তার প্যারালাইসিস সারিয়ে দেবে নিশ্চিত।
Alumina: এলুমিনা প্যারালাইসিসের একটি সেরা ঔষধ বিশেষত যদি সাথে কোষ্টকাঠিন্য থাকে। এলুমিনার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো পায়খানা নরম কিন্তু তারপরও বের করতে কোথানি লাগে, সর্বদা মাথা ঘুরানি, জিনিসপত্রকে মনে হয় বৃত্তাকারে ঘুরছে।
এছাড়াও চোখের পাতার প্যারালাইসিস, টেরা চোখ, অন্ধকারে অথবা চোখ বন্ধ করে হাঁটতে পারে না, পিঠে অথবা পায়ে মনে হয় পিপঁড়া হাঁটতেছে, মুখে মনে হয় মাকড়সার জাল আটকে আছে সহ এরকম আরো লক্ষণে এলুমিনা প্রয়োগ করা যায়।
পরিশেষে বলা যায়, প্যারালাইসিস আসলে কারো জীবনের জন্যই কাম্য নয়। কিন্তু রোগ ব্যাধি তো আর বলে কয়ে আসে না।
তাই সবসময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্যারালাইসিস এর লক্ষণ দেখা দিলে নানা ধরণের কুসংস্কারমূলক চিকিৎসা না নিয়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে ভুলবেন না যেন।
আরও পড়ুন: ঘুমের জন্য ১০০% কার্যকরী হোমিও ঔষধ সম্পর্কে তথ্য।