বাংলাদেশে শীতকালীন মৌসুমের সময় পেয়াজ চাষাবাদ শুরু হয়। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে এই পেয়াজের আবাদ বেশি হয়। আবার কোনো কোনো অঞ্চলে কম হয়। পেয়াজ চাষ করে এবার মাথায় হাত চাষীদের।
সাধারণত উত্তরবঙ্গে প্রতি বছর নদী তীরবর্তী জমিগুলোতে যথেষ্ট পেয়াজের চাষাবাদ করা হয়। চাষীরা মনের মধ্যে খুব আনন্দ নিয়েই চাষাবাদ করে। পেয়াজের সাথে রসুন এবং মরিচও চাষ করে।
কিন্তু পেয়াজ উঠানোর সময় দাম কেমন হবে তা নিয়ে সঙ্কা যেন থেকেই যায়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উত্তরবঙ্গে পেয়াজের চাষাবাদ যথেষ্ট হয়েছে।
কিছু কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, গত বছরের চেয়ে এবার পেয়াজের ফলন একটু কম হয়েছে। বৈরি আবহাওয়া এবং সার কীটনাশকের দাম এক্ষেত্রে একটু প্রভাব ফেলেছে বলে তারা জানিয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে পেয়াজের যে দাম তাতে তারা খুবই নারাজ। ৮৫ কেজি পেয়াজ মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এটাকে নাম মাত্র মূল্য বলা যায়।
অথচ পেয়াজ চাষ করতে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়। অনেক শ্রমিক লাগে। নিজের পরিশ্রমের কথা তো কৃষকগণ হিসেবই করে না।
পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার পেয়াজ চাষী মোঃ মোজাম্মেল হক বলেছেন, এবার তার পেয়াজ চাষে লাভ তো দূরের কথা – আসল টাকাই উঠছে না।
ঘরের মাচায় পেয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। সেটাও সময়সাপেক্ষ এবং সবার পক্ষে তা সম্ভব হয় না। কারণ, অনেকেই টাকা-পয়সা ধার দেনা করে চাষাবাদে কাজে লাগায় এবং পারিবারিক নানারকম খরচের ব্যাপার থাকে।
মোজাম্মেল হক আরও বলেছেন, সরকার যদি বাইরের দেশ থেকে পেয়াজ না আনতো বা কম পরিমাণে আনতো তবে আমরা হয়তো একটু লাভের মুখ দেখতে পেতাম।
দেড় বছর আগে বাংলাদেশে হঠাৎ পেয়াজের অভাব দেখা দেয়। তখন ১ কেজি পেয়াজ প্রায় ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সেই দুর্দশা আর বর্তমানে নেই। বাংলাদেশে এখন যে পরিমাণ পেয়াজের চাষাবাদ হয় তাতে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
কিন্তু বাজার ব্যবস্থার অন্তরালে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পেয়াজের দাম কমানোর ক্ষেত্রে জোরালে ভূমিকা রাখে বলে অনেক কৃষকই দাবি করেছেন।
পেয়াজের সাথে রসুন এবং মরিচ চাষও করা যায়। বর্তমানে মরিচের দাম যথেষ্ট আছে। সেই সুবাদে পেয়াজ চাষের সাথে যারা মরিচের চাষ করেছেন তারা একটু স্বস্তি পেয়েছেন।
কিন্তু যারা শুধু পেয়াজই চাষ করেছেন তাদের আসলে মাথায় হাত। কারণ, বর্তমানে পেয়াজ সংরক্ষণ করা সবার জন্য সম্ভবপর হয়ে উঠবে না।
অনেক কৃষকই বলেছেন, সরকার যাতে একটা ব্যবস্থা নেয়। অন্তত কৃষক পরিবারগুলো (পেয়াজ চাষী) যাতে দুবেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে বাঁচতে পারে।
আরও পড়ুন: করতোয়া নদীর দুই পাশ সবুজে সবুজে ভরে উঠছে যে কারণে।
পেয়াজ এমন একটি মসলা যা প্রতিদিন আমাদের কাজে লাগে। সব ধরণের তরকারিতে পেয়াজ মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আরো নানা ধরণের ব্যবহার রয়েছে।
তাই পেয়াজ চাষী কৃষকগণ যাতে একটু হলেও লাভবান হতে পারে সেদিকে সরকারের সুদৃষ্টি সবসময়ই কাম্য। কৃষকের মনে আনন্দ এলে দেশে কোনো শস্যেরই অভাব হয়তো হবে না।