পেটের ফাঁটা দাগ বা চামড়া বা স্ট্রেচ মার্কের সমস্যা ত্বকের একটি বড় সমস্যা। আর স্ট্রেচ মার্ক বা ত্বকের বৃদ্ধি জনিত ফাঁটা দাগ সম্পর্কে কমবেশি আমাদের সবারই ধারনা আছে।
আমাদের শরীর যখন বৃদ্ধি বা বেশি মোটা হয়ে যায়, তখন চামড়ার ত্বকে টান লাগতে থাকে। আর এরই ফলে স্ট্রেচ মার্ক হতে দেখা যায়।
বিশেষ করে গর্ভ পরবর্তী সময়ে নারীদের তলপেটে চামড়ার টানজনিত কারণে এই ধরনের দাগ হয়ে থাকে। এটি ত্বকের উপরে দৃশ্যমানলাইনের মত দেখা যায়।
এই স্ট্রেচ মার্ক গর্ভবতী মহিলাদের পেটে সকলের হয়ে থাকে। যা খুবই বিব্রতকর একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আর এই স্ট্রেচ মার্ক থেকে রক্ষা পেতে হলে আগে থেকেই সতর্ক থাকাটা বেশি জরুরী।
এজন্য বয়োঃসন্ধিকাল এবং প্রেগনেন্সির শুরু থেকেই ত্বকে নিয়মিত লোশন কিংবা অলিভ অয়েলের ম্যাসাজ করতে হবে।
তবে অসাবধাণতা বশত যাদের ইতোমধ্যে স্ট্রেচ মার্ক হয়ে গেছে তারা নিয়মিত কিছু জিনিস চর্চা করলে কিছুটা হলেও আগের অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভাব।
তো চলুন জেনে নেই এমন কিছু উপায় যা আমাদের স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে সাহায্য করবে।
যেসব কারণে হয়ে থাকে স্ট্রেচ মার্ক:
১. প্রেগন্যান্সি;
২. অতিরিক্ত ওজন বাড়ানো;
৩. অতিরিক্ত ওজন কমানো;
৪. হরমোনাল ইমব্যালেন্স;
৫. বংশগত;
শরীরের ফাটা দাগ বা স্ট্রেচ মার্ক দূর করার উপায়:
১. ট্রেচ মার্ক দূর করতে ক্রিম ও ময়েশ্চারাইজার নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। এটি আপনার ত্বকের নমনীয়তা ধরে রাখবে।
নতুন স্ট্রেচ মার্ক দূর করার ক্ষেত্রে লোশন খুব ভাল কাজ করে থাকে। কিন্তু পুরাতন দাগে তেমন লক্ষ্যণীয় প্রভাব ফেলে না।
ওজন কমানোর জন্য সৃষ্টি স্ট্রেচ মার্ক রিটিনোইক এসিড ক্রিম ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। যেন গ্লাইকলিক অ্যাসিডযুক্ত বিভিন্ন বিউটি পণ্য যেমন টোনার, ক্লিনজার ও ময়েশ্চারাইজার ইত্যাদি হয়। এই অ্যাসিড ফাঁটা দাগ পুরাপুরি তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
২. স্ট্রেচ মার্ক এর জন্য ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। দিনে ৩ বার ফাটা দাগের উপর ম্যাসেজ করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
যদি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ক্রিম না পাওয়া যায় তাহলে সাপ্লিমেন্টও নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্টটি দিনে ৩ বার খেতে হবে।
৩. প্রাকৃতিকভাবে প্রতিদিন ৩ বার ফাটা স্থানের উপর ডিমের সাদা অংশ ৫-১০ মিনিটের জন্য ম্যাসাজ করলে দাগ উঠে যাবে।
যতদিন দাগটি নির্মূল না হয় ততদিন এই পদ্ধতিটি স্ট্রেচ মার্কের উপর দিবেন। তাহলে দাগ পুরাপুরি উঠে যাবে।
৪. লেবুর রসে প্রাকৃতিক এসিড আছে যা দাগ দূর করে থাকে। এটি স্ট্রেচ মার্ক দূর করতেও অনেক ভাল কাজ করে।
শরীরের ফাটা দাগ নির্মূলে লেবুর একটি টুকরা নিয়ে দাগের উপর লেবুর রস দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই কাজটি প্রতিদিন করার চেষ্টা করতে হবে। এতে বেশ উপকার পাওয়া যাবে।
৫. ফাটা দাগ নির্মূলে বিভিন্ন ধরণের তেল মিশিয়ে দাগের উপর প্রতিদিন ১০ মিনিট ম্যাসাজ করলে। এতে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
৬. চিনি, লেবুর রস ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে স্ক্রাব বানিয়ে তা প্রতিদিন ফাটা দাগের উপর ৫-১০ মিনিট ম্যাসেজ করলেও স্ট্রেচ মার্ক কমে যায়।
৭. স্ট্রেচ মার্কের জন্য আরেকটি পদ্ধতি করতে পারেন। এটি হল একটি আলু নিয়ে তা মোটা করে ২ টুকরা করে কেটে ফাটা দাগের উপরে কিছুক্ষণ ম্যাসেজ করতে হবে। আলুর রস ভালো মত লাগলে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৮. ঘৃতকুমারির পাতা নিয়ে এর ভেতর থেকে জেলী সদৃশ অংশটি বের করে দাগের উপরে লাগিয়ে ২ ঘন্টা অপেক্ষা করে। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। অ্যালভেরার রস খুবই উপকারি স্ট্রেচ মার্কের ক্ষেত্রে।
৯. এপ্রিকট ফলের বিচি ফেলে দিয়ে এর পেস্ট বানিয়ে দাগের উপর ১৫-২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন প্রতিদিন ২ বার। দেখবেন অনেক উপকার হবে।
১০. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি, ই, জিংক সমৃদ্ধ খাবার রাখার চেষ্টা করতে হবে। ভিটামিন সি আপনার টিস্যু পুনর্বিন্যাস করতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন মাছ, ডিমের সাদা অংশ, দই, বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, তরমুজের বীজ খাবেন নিয়মিত। এগুলো আপনার ত্বককে পানির ঘাটতি পূরণ করতে সহায়ক হবে।
এমনকি শরীরের ফাটা দাগ নির্মূলেও সহায়তা করবে। সাথে নানা রকম ফল যেমন স্ট্রবেরী, গাজর, শাক, সবুজ মটরশুটি, বাদাম ইত্যাদি প্রতিদিন খেতে চেষ্টা করবেন।
১১. সৌন্দর্য বা ত্বকের যত্নের যে কোন বিষয়কের কথা আসলে এই ভিটামিন ই টির কথা আগে আসে। প্রকৃত অর্থে ভিটামিন ই হলো একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের যৌবন ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গোসলের পূর্বে প্রতিদিন ভিটামিন ই সমৃদ্ধ তেল দিয়ে সম্পূর্ণ শরীর ম্যাসাজ করতে হবে। যদি এ ধরনের তেল আপনার কাছে না থাকে তবে একটি ভিটামিন ই সফ্ট জেল ভেঙে সরাসরি ত্বকে বা স্ট্রেচ মার্কে প্রয়োগ করতে পারেন।
তবে শুধু ত্বকে বা স্ট্রেচ মার্ক প্রয়োগ করলেই হবে না ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবারও খেতে হবে যেমন: সয়াবিন, গাজর, মরিচ, টমেটো, ওটমিল ইত্যাদি।
১২. দুধ এবং ডিমের সাদা অংশ এই দুটি উপাদান ত্বকের স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে অনেক উপকারি। দুধ এবং ডিমের সাদা অংশ দিয়ে মিশ্রণ তৈরী করে।
এই মিশ্রণটি স্ট্রেচ মার্ক স্থানে ভালকরে ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ৩-৪ বার এটি ব্যবহার করতে চেষ্টা করুন ভাল উপকার হবে।
১৩. কফি প্যাক বা কফি পাউডার একটি চমৎকার এক্সফোলিয়েটিং মাস্ক হিসাবে স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে সাহায্য করে। এক চা চামচ কফি পাউডারকে সম্পূর্ণ গুড়ো করে ফেলতে হবে।
এর সাথে আধা চা চামচ চিনি যোগ করে কোন ভাল ব্র্যান্ডের বেবি লোশনের সাথে মিশিয়ে। এই মিশ্রণটি স্ট্রেচ মার্কের স্থানে আলতো করে প্রয়োগ করতে হবে (বেশি জোরে ঘষবেন না)। এই প্যাকটি সপ্তাহে একবার করে নিয়মিত ব্যবহার করতে থাকলে ভাল উপকার পাবেন।
১৪. প্রতিদিন পানি পান করবেন প্রায় ৮ থেকে ১০ গ্লাস। এতে করে কিছুদিনের মধ্যে দেখতে পাবেন আপনার স্ট্রেচ মার্ক হালকা হয়ে গেছে। এভাবে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ দাগ দূর হয়ে যাবে।
পরিশেষে বলা যায়, পেটের ফাঁটা দাগ কিংবা স্ট্রেচ মার্ক তোলার জন্য বিভিন্ন উপায় থাকলেও উপরোল্লিখিত উপায়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাই কোন কারণবশতঃ যদি আপনি যদি এরকম সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে উপরে বর্ণিত উপায়গুলো নিজের উপর প্রয়োগ করুন। খুব কম সময়ের মাধ্যমেই ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন: হিজামা চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সব ধরণের তথ্য ফাঁস করা হলো – একটিবার পড়ুন।