ইমরান খানের পুরো নাম ইমরান খান নিয়াজী। তিনি পাকিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক ছিলেন। খেলোয়াড় জীবন শেষে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
জেনে রাখা ভালো, ইমরান খান ক্রিকেট খেলায় অত্যন্ত সুনাম করেছেন। তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে একজন।
পাকিস্তান ক্রিকেট দল ইমরান খানের সহযোগিতায় এবং অধিনায়কত্বে ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয় করেছিল। সেসময় পাকিস্তানে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন অক্টোবর ৫, ১৯৫২ সালে লাহোর, পাকিস্তানে। তার রাজনৈতিক দলের নাম হলো পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ।
তার দুজন স্ত্রী। একজন হলেন বুশরা বিবি যাকে তিনি ২০১৮ সালে বিবাহ করেছেন এবং আরেকজন হলেন রেহাম খান যাকে তিনি ২০১৪-২০১৫ এর মধ্যে বিবাহ করেছেন।
ইমরান খানের দুজন সন্তান। তারা হলেন যথাক্রমে সুলেইমান ইসা খান এবং কাসিম খান। ইমরান খান কেবল (Keble College) কলেজে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এছাড়াও তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, RGS Worcester, Aitchison College সমুহে পড়াশোনা করেছেন।
ইমরান খান হলেন পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী। ১৮ আগষ্ট ২০১৮ সালে তিনি অধিকৃত কার্যালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেসময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন মামনুল হুসাইন আর পূর্বসূরী ছিলেন নাসিরুল মূলক তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে।
তিনি ১৯৯২ সালে একটি বিবাহ করেছিলেন। তার স্ত্রীর নাম ছিলো জেমিমা গোল্ডস্মিথ। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস, ২০০৪ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সংসার কোনোভাবেই টেকানো যায়নি।
অন্যদিকে, ১৯৮৭ সালেও তিনি প্রথম বিবাহ করেছিলেন। তখন তার স্ত্রীর নাম ছিলো সীতা হোয়াইট। সে সংসারটিও আর বেশিদিন টিকেনি।
বর্তমানে ইমরান খান ইসলামাবাদের বানি গালা নামক জায়গায় বসবাস করছেন। মাঝে মাঝে তিনি বাইরের দেশে ঘুরতেও যান। শোনা যাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া সহ কয়েকটি দেশে তার যথেষ্ট সম্পত্তি রয়েছে। তিনি একটা সময় লেখালেখিও করতেন যার কারণে তাকে লেখক বললেও ভুল হবে না। একজন মানুষের অনেক প্রতিভা থাকতে পারে – এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ইমরান খান ১৯৯২ সালে হিলাল-ই-ইমতিয়াজ পুরস্কার লাভ করেন এবং ১৯৮৩ সালে প্রাইড অব পারফরম্যান্স পুুরস্কার লাভ করেন।
ক্রিকেটের কথা যদি বলি তবে তিনি ছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান (RHB)। তার বোলিংয়ের ধরণ ছিল ডানহাতি ফাস্ট। তাকে অলরাউন্ডার বলাটাই শ্রেয়।
রাজনীতিতে কিভাবে ইমরান খান কিভাবে এলেন বিষয়টি জানা প্রয়োজন। কারণ, একজন ক্রিকেটার হঠাৎ করে রাজনীতিতে চলে এলেন নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো কারণ আছে।
১৯৯২ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৯৬ সালে ইমরান প্রথম রাজনীতির ময়দানে চলে আসেন। তিনি তখন দূর্নীতি বিরোধী স্লোগানে প্রতিষ্ঠা করেন তার দল তেহরিক-ই-ইনসাফ।
তারপর ১৯৯৭ সালে তিনি নির্বাচনে দাড়ান দুটি কেন্দ্র থেকে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস যে, তিনি দুটি কেন্দ্রেই পরাজিত হন। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। এরপর ২০০২ সালের নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন।
এরপর ২০০৭ সালে ঘটে আরেক অদ্ভূত ঘটনা। আর সেটা হলো – তৎকালীন সেনা প্রধান তার নিজ পদে বহাল থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। বিষয়টি কিন্তু পাকিস্তানের জন্য অদ্ভূত ছিলো। একজন সেনা প্রধান হলেন সরকার নিযুক্ত ব্যক্তি। তিনি পদে বহাল থেকে কিভাবে নির্বাচন করেন তা ব্যত্যয় ঘটানো এবং জানা প্রয়োজন।
ইমরান খান তখন ঐ নির্বাচনের চরম বিরোধিতা শুরু করেন। তৎকালীন সেনা প্রধান মোশারফের সাথে তার বন্ধূত্বপূর্ণ সম্পর্ক আর টেকসই রইলো না। দুজন দুজনার চরম শত্রুতে পরিণত হলেন।
তিনি শুধু বিরোধীতা করেই থেমে যাননি বরং তিনি পার্লামেন্টের ৮৫ জন সদস্যের সাথে নিজেও পদত্যাগ করেন। বিষয়টি দেশের মানুষের নজরে আসে।
কিন্তু নির্বাচনে মোশারফ হোসেন বিজয়ী হয় এবং বিজয়ী হওয়ার পরপরই দেশে জরুরী অবস্থা জারি করে। ইমরান খানকে গৃহবন্দী করা হয় তখন। এটি করা হয়েছে মূলত শত্রুতার জের ধরে।
জানলে অবাক হবেন যে, ইমরান খান তখন কয়েকদিন জেলও খেটেছেন। তারপর ছাড়া পেয়ে নিজ বাসায় ফিরে আসেন। কিন্তু তিনি থেমে যাননি।
বেশ কয়েক বছর পরে অর্থাৎ ২০১৩ সালে পাকিস্তানের ১০ম নির্বাচনে ইমরান খানের দল পাকিস্তানের প্রধান দ্বিতীয় দল হিসেবে আসন জিতে যায়। অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই পাকিস্তানের ১১তম জাতীয় নির্বাচনে তার দল আসন সংখ্যার বিচারে সবচেয়ে বড় দলে পরিণত হয়। ইমরান খান ২০১৮ সালের ১৮ আগষ্ট পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আসন গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: করতোয়া নদীর দুই পাশ সবুজে সবুজে ভরে উঠছে।
বর্তমানে তিনি ক্ষমতা থেকে বিলুপ্তের পথে। তার রাজনৈতিক জীবনের অন্তঃরালে নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর তাই হয়তো তাকে ক্ষমতা থেকে পদাবনমন করা হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক। তিনি বর্তমানে আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেই। শোনা যাচ্ছে আগামী ৬ মাস পরে সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হতে পারে।