পর্ন ভিডিও সমাজের জন্য মঙ্গলজনক কিছু বয়ে আনে না, বরং যা আনে তা হলো ক্ষতি। তরুণ ও যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় অনেকটা দায়ী এই পর্ন ভিডিওর কারণে।
ইন্টারনেটের অপব্যবহারও কিছুটা দায়ী। কারন, কারও কাছে একটি মোবাইল ফোন থাকলে সে অনায়াসে পর্ন ভিডিও আছে এমন কোনো ওয়েবসাইটে অনায়াসে প্রবেশ করছে।
যাই হোক, পর্ন ভিডিও’র কারনে কেমন ক্ষতি হচ্ছে তা আর কাউকে বুঝাতে হবে না। কারন, যে নিয়মিত পর্ন ভিডিও দেখে সে নিজে ভালো করেই জানে তার কি ধরণের ক্ষতি হয়।
কিন্তু তারপরেও আজ আমরা আলোচনা করবো কেন আপনার পর্ন ভিডিও দেখা বন্ধ করা উচিত এমন বেশি কিছু কারন নিয়ে। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
১. শারীরিক মিলন সম্পর্কে পর্ন কোনো আকর্ষণীয় উপায় জানায় না:
পর্নের সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার হচ্ছে এটা মানুষকে সেক্সচুয়াল ফ্যান্টাসিতে ভোগায়। এসব পর্নে যা দেখানো হয় সেগুলো বাস্তবতার সম্পূর্ণ বিপরীত।
বেশি পর্ন ভিডিও দেখার ফলে বাস্তব মিলন তখন মানুষের কাছে পর্নের মতো আকর্ষণীয় মনে হয় না। দেখা দেয় অপ্রাপ্তির বিষন্নতা, মনোমালিন্য ও সম্পর্কে টানাপোড়ন। পর্নে যা দেখানো হয় সবটুকুই অতিরঞ্জিত অভিনয় যার সাথে বাস্তবতার সামান্যতম সম্পর্ক নেই।
২. এটা একটা নেশার মতো:
বাইরে থেকে দেখলে কোকেন আর পর্ন এক জিনিস নয়। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল বলে, মাদকসেবনের ফলে মস্তিস্কে যে হরমোন নিঃসৃত হয়ে আনন্দের অনুভূতি দেয়, পর্ন দেখলেও ঐ একই হরমোন একইভাবে কাজ করে।
মাদকসেবনের ফলে ডোপামিন, অক্সিটোসিন প্রভৃতি হরমোন নিঃসরিত হয়ে মস্তিস্কে একটি পথ তৈরি করে, যে পথে নিয়মিত হরমোন নিঃসরণের প্রয়োজন দেখা দেয়, যা ব্যক্তিকে মাদকাসক্ত করে তোলে।
তাই পর্নও একটি মাদক। এটা চোখের মাধ্যমে প্রবেশ করে। অন্যান্য ড্রাগ আসক্তির মতো এ আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়াও একসময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তবে আসক্তি থেকে মুক্তির এই যাত্রায় আপনি সঙ্গী হিসেবে আমাদের পাশে পাবেন, আর এ মুক্তির স্বাদ অত্যন্ত প্রশান্তিদায়ক।
৩. এ অভ্যাস ও আসক্তি ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে:
পর্ন আসক্তি বেশ ভয়ানক। নিজেকে টিকিয়ে রাখতে এ আসক্তি ক্রমেই ডালপালা ছড়াতে থাকে। ব্যক্তি আনন্দ পাবার জন্য আরও বেশি পর্ন দেখতে থাকে।
প্রতিবার পর্ন দেখার সময় আগের বারের চেয়ে বেশি আনন্দ পেতে হার্ডকোর পর্ন দেখার প্রয়োজন পড়ে। ফলে দিন দিন তার চেতনা ও বোধশক্তি আরও ভোঁতা হতে থাকে। তাই আসক্তি আপনাকে শেষ করে ফেলার আগেই মুক্তির পথে ঘুরে দাঁড়ান। নিজেকে বাঁচান।
৪. জীবন ও মনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন:
এক পর্যায়ে পর্ন দর্শকরা এমন সব দৃশ্য দেখে আনন্দ পায় যা আগে তাদের কাছে জঘন্য লাগতো। কড়া ধাঁচের পর্নগুলো দেখতে দেখতে সে মারাত্মক ক্ষতিকর কাজগুলোকে দর্শক খুবই স্বাভাবিক ভাবতে শুরু করে।
পর্ন মানুষের আদর্শকে ধ্বংস করে, বিবেককে নষ্ট করে আর সম্পর্কগুলোতে তিক্ততা বয়ে আনে। আপনার এ বদভ্যাসকে দূর করুন। নাহলে জীবনে আরও কষ্টদায়ক অবস্থায় পড়তে আপনি বাধ্য।
৫. বাস্তব জীবনে ফিরে আসুন:
পর্নে মানুষকে যৌন পন্য হিসেবে দেখানো হয়। এর মাঝে বাস্তব অথবা রোমান্টিক কিছুই নেই। বরং এটা বাস্তবতা থেকে মানুষকে দূরে নিয়ে যায়।
ফলে বাস্তব জীবনে তারা সুখী হতে পারে না। আপনার জীবন তখনই পূর্ণতায় পৌঁছবে যখন আপনি পর্ন ছেড়ে বাস্তব জীবনে ফিরে আসবেন।
৬. নিজের দেহের কদর করুন:
পর্নে মেকাপ, সার্জারি, এডিটিং, অভিনয়- এসব ব্যবহার করে মানবদেহ ও যৌনতা নিয়ে অনেক ভুল ও অবাস্তব ধারণা মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
দর্শক নিজের অজান্তেই যা দেখছে তার সাথে নিজেকে তুলনা করতে থাকে। নিজের শরীর ও জীবন নিয়ে হতাশা, হীনমন্যতায় ভোগে। পর্ন আসক্তি থেকে মুক্তি আপনার সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেবে, আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
৭. প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করুন:
পর্নের প্রভাবে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে অবমূল্যায়ন করা হয়। কারণ, সেখানে তাদের এমন যৌন বস্তু হিসেবে দেখানো হয় যা অমানুষিক ও বাস্তবতাবিরোধী।
ফলে প্রকৃত সুন্দরকে আর সুন্দর মনে হয় না। পর্ন এমন এক মিথ্যা কাল্পনিক জগতে মানুষকে নিয়ে যায় যার ফলে তার রুচি-কামনা-বাসনা কুৎসিত রূপ লাভ করে।
সে এমন কিছু চায় যা তার স্ত্রীর মাঝে থাকে না। থাকার কথাও নয়। পর্ন ছেড়ে দেবার পর লোকে বলে যে তারা তাদের স্ত্রীর সৌন্দর্য উপলদ্ধি করতে পারেন।
তাদেরকে আর ভোগের বস্তু হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করেন। প্রকৃতভাবে ভালবাসতে পারেন, সৌন্দর্যের মূল্য বোঝেন।
৮. যৌন অক্ষমতা প্রতিরোধ করুন:
পর্ন যৌন অক্ষমতা ও যৌন অতৃপ্তির মূল কারণ। পর্ন দর্শকদের জরিপ নিয়ে জানা গিয়েছে, পর্ন দেখতে দেখতে একসময় ব্যক্তি তার স্বাভাবিক যৌনতাকেই ধ্বংস করে ফেলে।
জানা গেছে, নিয়মিত পর্ন দেখার ফলে মস্তিষ্কে এমন পরিবর্তন আসে যার ফলে বাস্তবে সহবাস করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়।
পর্ন আসক্তি একজন পুরুষের উত্তেজিত হবার ক্ষমতাকেই নষ্ট করে দেয়। কিন্তু এটা তারা টের পায় অনেক দেরিতে।
এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো পর্ন ও মাস্টারবেশনের মতো বাজে অভ্যাস থেকে মুক্ত হওয়া। স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসা।
৯. যৌন পাচার বন্ধ করুন:
মানুষ যত পর্ন দেখবে পর্ন ইন্ডাস্ট্রি তাদের চাহিদা পূরণের জন্য তত বেশি মানব পাচার চালিয়ে যাবে। যৌন পাচারের শিকার অগণিত নারীকে পর্নে কাজ করতে বাধ্য করা হয়।
এমনকি সরকারিভাবে বৈধতাপ্রাপ্ত আমেরিকান এডাল্ট ইন্ডাস্ট্রিতেও পর্ন তারকারা হরহামেশাই জুলুম ও জোরপূর্বক মাদকদ্রব্য গ্রহণের শিকার হয়।
ক্যামেরার পেছনে থাকা অন্ধকার তিক্ত সত্যকে জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। পর্নকে না বলে আপনি এসব শোষণ-নিপীড়ন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারবেন। জালিমদের কালো হাত থেকে কাউকে হয়ত বাঁচাতে পারবেন।
১০. পর্ন নারী নির্যাতনে উৎসাহিত করে:
অনেক পারফর্মার বলেছে, পর্নে উগ্র ও অনিরাপদ যৌনকর্ম দেখানোর জন্য তাদেরকে ধর্ষণ করা হয়। প্রতিনিয়ত নির্যাতন চলে। জোরপূর্বক মাদকও দেওয়া হয়।
পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ক্যামেরার পেছনের অন্ধকার জগত খুবই ভয়াবহ। পর্ন এসব নিপীড়নকে স্বাভাবিক প্রমাণ করতে চায়, কিন্তু সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ এটা মেনে নিতে পারেন না।
পর্ন দেখা মানে হচ্ছে এমন একটা গোষ্ঠীকে সাহায্য করা যারা তাদের অভিনেত্রী ও দর্শক সবাইকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
১১. পর্ন আপনার আচরণকে উগ্র করে তোলে আপনার অজান্তে:
সব পর্ন একরকম না হলেও বেশিরভাগ পর্নেই নারীদের মৌখিক ও শারীরিকভাবে অপমান করা হয়, গালাগালি করা হয়।
আর দর্শক এর দ্বারা অবশ্যই প্রভাবিত হয়। লাঞ্ছিত না করা হলেও পর্নগুলোতে পুরুষকে দেখানো হয় শক্তিশালী রুপে, শিকারি হিসেবে, আর নারীকে দেখানো হয় দুর্বল, ভোগের বস্তু, শিকার হিসেবে।
কাউকে লাঞ্ছিত বা আক্রমণ করা হলে সেও পাল্টা আক্রমণ করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু ৯৫% পর্নে নারীরা আক্রমণের বিরোধিতা করা তো দূরে থাক, উল্টো ভুক্তভোগী নারীকে এক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় অথবা এসব উপভোগ করে দেখানো হয়।
ফলে দর্শকদের মনে এ বিশ্বাস জন্মে যে, জবরদস্তি বা আক্রমণাত্মক আচরণ মেয়েরা পছন্দ করে, ছেলেরা চাইলেই মেয়েদের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে পারে।
ফলস্বরুপ এসব দর্শকরা নিজেদের স্ত্রীদের কষ্ট দিয়ে থাকে। আর এভাবে এদের সম্পর্কগুলোও বিষাদময় হয়ে উঠে। সমাজে বাড়তে থাকে ধর্ষণ ও খুনের পরিমাণ।
১২. সৃজনশীলতা বাড়াতে পর্ন ত্যাগ করুন:
সৃজনশীল হবার জন্য আপনাকে জীবনের গভীরে ঢুকতে হবে। জীবনের প্রতিটি দিককে দেখে তার মর্ম উপলদ্ধি করতে হবে।
কিন্তু পর্ন এমন সব সস্তা আর নোংরা ঘেরা কল্পনার জগতে আপনাকে বন্দি করে ফেলে যা আপনার ভিতরের আবেগ ও প্রেরণাকে নষ্ট করে দেয়। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনি আরও সুক্ষ্ম চিন্তার অধিকারী ও দূরদর্শী হতে পারবেন। ঠাণ্ডা মাথার মানুষে পরিণত হবেন।
১৩. আরও সৎ জীবনে অভ্যস্ত হোন:
সব পর্ন আসক্তরা তাদের আসক্তির ব্যাপারে মিথ্যা বলে না। তবে তারা সত্য বলতে লজ্জা পায়। সত্যকে লুকিয়ে রাখা আবশ্যক মনে করে।
তারা স্বীকার করুক বা না করুক এটা ভালোভাবেই তারা জানে তাদের সঙ্গী পর্ন আসক্তিকে খারাপ চোখে দেখে। দীর্ঘদিন ধরে একটা মিথ্যার সাথে জীবন কাটানোর ফলে এটাকে তারা একসময় স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেয়।
আপনি যত বেশি মিথ্যার আশ্রয় নিবেন, সত্য স্বীকার করা তত বেশি কঠিন হয়ে যাবে। আপনার সমস্যার কথা খুলে বলুন, আশা করা যায় আপনি আগের থেকে অনেক হালকা অনুভব করবেন।
১৪. সময় বাঁচান, কাজে লাগান:
আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন যে, পর্ন আপনার অজস্র সময় নষ্ট করেছে। পর্ন দর্শক প্রতিদিন কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা সময় এসব ক্ষতিকর দৃশ্য দেখে নষ্ট করে।
যারা ঘন ঘন পর্ন দেখে তারা জানে সময়ের সাথে সাথে তারা আরও কড়া ধাঁচের পর্ন আরও বেশি সময় ধরে দেখছে।
ভেবে দেখুন, যদি আপনি দিনে মাত্র ১০ মিনিট সময় পর্ন দেখেন, তাহলে বছরে ৬০ ঘণ্টা সময় আপনি পর্ন দেখে নষ্ট করলেন।
এই লম্বা সময়টা আপনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা ভালো কাজে লাগাতে পারতেন। সময় অনেক মূল্যবান। সময়কে কাজে লাগান। ভালো কাজ করুন। সময়কে এমন স্মৃতি দিয়ে ভরিয়ে তুলুন যেগুলো দীর্ঘস্থায়ী, এমন দৃশ্য দিয়ে নয় যেগুলো এক ক্লিকেই হারিয়ে যায়।
১৫. মনের মানুষকে খুঁজে বের করুন:
পর্নে যেভাবে মিলন দেখানো হয় তা ডাহা মিথ্যা। পর্ন দর্শক এ মিথ্যা আনন্দের জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে ওঠে আর সত্যিকারের সুখকে পেছনে ফেলে দেয়।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পুরুষদের বিয়ের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। কারণ, তারা ভাবছে পর্ন তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করছে।
মিথ্যার এ ফাঁদ থেকে নিজেকে বাঁচান, আর আপনার মনের মানুষটিকে খুঁজে বের করুন তথা বিয়ে করুন। ভালোবাসা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
১৬. একজন উত্তম জীবনসঙ্গী হয়ে উঠুন:
পর্ন শুধু আপনাকে নয়, আপনার জীবন সঙ্গীকেও প্রভাবিত করে। পর্ন আসক্তরা যেমন অনেক সমস্যায় ভোগে একইসাথে তাদের সঙ্গীও একা একা অনেক কষ্টকর অনুভূতির মধ্য দিয়ে যায়।
যখন একজন স্ত্রী জানতে পারে তার স্বামী পর্ন আসক্ত, নিজের প্রয়োজন পূরণে সে তার স্ত্রীর কাছে না গিয়ে পর্নের দ্বারস্থ হয়, তখন ঐ নারী নিজেকে প্রতারিত ও অবহেলিত মনে করে।
আপনি যদি আপনার ও আপনার স্ত্রীর মাঝে পর্নকে জায়গা না দেন তবে আপনাদের মাঝে মানসিক ও শারীরিক উভয় দিক থেকেই খুব মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
১৭. উত্তম বাবা-মা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলুন:
পর্নের ক্ষতি শুধু স্বামী-স্ত্রীর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে না। পর্ন পরিবারের সদস্যদের বিচ্ছিন্ন করে, এমনকি পরিবার ভেঙ্গে যায়।
তাছাড়া বর্তমানে শিশু-কিশোররা খুব অল্প বয়সে হার্ডকোর পর্ন দেখছে। এসব থেকে তারা যৌন শিক্ষা লাভ করছে, যা তাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে।
তারাও ভবিষ্যতে তাদের দাম্পত্য জীবনে এজন্য ভুগবে। আপনার সন্তানদের সাথে স্নেহ-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলুন, তাদের খেয়াল রাখুন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পর্ন মুক্ত জীবন উপহার দিন।
১৮. একজন উত্তম বন্ধুতে পরিণত হোন:
আপনার পর্ন আসক্তি আপনাকে বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। সামাজিকতা থেকে অনেক দূরে চলে যাবেন আপনি।
একাকিত্বসহ আরও নানান সমস্যা আপনাকে ঘিরে ধরবে। পর্নকে জীবন থেকে দূরে নিক্ষেপ করেই কেবল আপনি এর দাসত্ব এবং এ সম্পর্কিত সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাবেন।
১৯. মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখুন:
পর্ন আসক্তি আপনার অনেক মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে। এছাড়া আপনাকে জীবনের আনন্দগুলো উপভোগ করতে দেয় না, যেমন- গল্পগুজব করা, কর্মঠ হওয়া ইত্যাদি।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ঘন ঘন পর্ন দেখার ফলে উদ্বেগ এবং বিষন্নতার মতো বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। পর্ন ছেড়ে দেওয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ, এজন্য আপনাকে অবশ্যই কষ্ট করতে হবে। পরিশেষে আপনি একটি বড় বিজয় লাভ করবেন।
২০. নিজেকে আবার নিজের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনুন:
নিয়মিত পর্ন দেখে এমন প্রতি পাঁচজনের একজন অনুভব করে, তারা তাদের কামনা-বাসনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এতে করে বাস্তব জীবনে তারা তাদের স্ত্রীদের দ্বারা উত্তেজিত হতে পারে না।
ফলে মন ভুলে রাখতে তারা আরও বেশি পর্ন দেখে। তাদের জীবনে আরও জটিলতা বাড়তে থাকে। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনি কামনা-বাসনার গোলামী থেকে মুক্তি লাভ করবেন। আপনার যৌন চাহিদার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে, আর আপনার স্ত্রীর আরও কাছে যেতে পারবেন।
২১. কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসুন:
পর্ন ভিডিও দৃশ্য ধারণের পূর্বে রিহার্সাল করা হয়। এরপর ধারণ করা দৃশ্যগুলো অনেক অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়।
বিশেষ করে পারফর্মারদের দেহকে অত্যধিক সুন্দর হিসেবে দেখানো হয়। আর এসব দেখার ফলে দর্শক ও তার সঙ্গীর দৈহিক চাহিদা প্রভাবিত হয়।
তাদের যৌন জীবন পশুর মত হয়ে ওঠে। পর্ন ছেড়ে দেওয়ার পরে আপনার ও আপনার স্ত্রীর মাঝে আরও মধুর সম্পর্ক তৈরি হবে, আপনাদের সত্যিকার অর্থে যেটা প্রয়োজন আপনারা সেটা চাইবেন, পর্নে যেটা দেখানো হয় সেসব নয়।
আপনাদের মেলামেশাকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে তুলুন, পর্নের মতো অবাস্তব- জন্তু-জানোয়ার সদৃশ আচরণকে অনুসরণ নয়, পরিত্যাগ করুন।
২২. যৌনশক্তি বৃদ্ধি করুন:
পর্ন ভিডিও দেখার সময় অনেকেই হস্তমৈথুন করে থাকে। কেউ এতে এতই আসক্ত হয়ে পড়ে যে দিনে কয়েকবার তারা হস্তমৈথুন করে। যে এরূপ করে সে তার দাম্পত্য জীবনে বিছানায় মেলামাশায় আনন্দ পায় না, অন্যভাবে বললে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়।
আপনি নিশ্চিতভাবেই হস্তমৈথুন করার ফলে অনেক দুর্বলতা অনুভব করবেন, আপনার যৌন আকাঙ্ক্ষায়ও ঘাটতি দেখা দেবে। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনার এই শক্তি আপনি ধরে রাখতে পারবেন।
২৩. সামগ্রিক দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি করুন:
পর্ন আপনার সময় ও স্বাভাবিক যৌনতাকে নষ্ট করে এটা তো স্পষ্টভাবেই বুঝা যায়। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন তা আপনাকে শারীরিকভাবে কতটা দুর্বল করে?
দৈনন্দিন জীবনে যেরকম শারীরিক ও মানসিক শক্তির প্রয়োজন, পর্ন আপনার থেকে তা পুরোপুরি শুষে নিবে।
এভাবে পর্ন আপনার কর্মক্ষমতা, আর জীবনীশক্তি একদম শেষ করে দিবে। পর্ন ছাড়ুন, আর আপনার নিজের ও অন্যদের উপকার হয় এমন কাজে নিয়োজিত হোন।
২৪. ফোকাস পুণর্জন করুন:
কেউ কেউ দৈনন্দিন জীবনের দায়দায়িত্বে নিমজ্জিত হবার পর তা থেকে নিষ্কৃতি পাবার মাধ্যম হিসেবে পর্ন দেখে।
পর্ন ছাড়তে পারলে আপনি আরও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবেন এবং নিয়মমাফিক জীবনযাপন করতে পারবেন। এই বিপথ হতে বের হতে পারলে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কাজে ঠিকভাবে ফোকাস করতে পারবেন।
২৫. আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন:
পর্ন থেকে মুক্তি পাবার জন্য আত্মবিশ্বাস একটি বড় হাতিয়ার। পর্ন আসক্তদের অনেকেই মূলত ভঙ্গুর হৃদয়ের হয়ে থাকে।
তারা ভালোবাসা এবং আনন্দকে ঠিকমত উপলদ্ধি করতে পারেনা। পর্ন ছাড়তে পারার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসের অভাব সহ মনের আরও কিছু নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেক মানুষ পর্ন ছাড়তে পারে না।
আর ক্রমাগত পর্ন দেখার ফলে মনের ওপর আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে যা এসব নেতিবাচক দিককে আরও বাড়িয়ে তোলে।
পর্ন ছাড়তে পারলে আপনার জীবনে যে সুখের অনুভূতি হবে তা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার আত্মবিশ্বাস আরও বৃদ্ধি করবে।
পরিশেষে বলা যায়, পর্ন ভিডিও দেখে দেখে নষ্ট হয়ে গেছে এমন হাজারও বাস্তব উদাহরণ আছে। আপনার আশপাশেই হয়তো এমন ঘটনা ঘটেছে কিন্তু আপনি জানেন না।
এমনও হতে পারে যে, আপনার পরিবারের কেউ গোপনে পর্ন আসক্তিতে ভুগছে অথচ আপনি জানেন না। পর্ন ভিডিও জীবনের জন্য কোনভাবেই উপকারী নয়।
সুতরাং সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য নিজেকে সঠিকভাবে গড়ে তুলুন, পর্ন আসক্তি থাকলে তা আজ থেকেই বাদ দিন। নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলুন।
আরও পড়ুন: হস্তমৈথুন এর ক্ষতি এবং এ থেকে বাঁচার উপায় জানুন।