সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। সেটি একটি লাইভ ভিডিও। ভিডিওটি করেছেন ছাত্রলীগের একজন কর্মী পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পরীক্ষার হলরুমে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে একজন পরীক্ষার্থী (কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মনির হোসেন সুমন) তার নিজের মোবাইল ফোনে ফেইসবুক লাইভে আসেন। লাইভ ভিডিও বেশ কিছুক্ষণ চলছিল।
তিনি উপজেলার প্রিজম কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে ৬ মাস মেয়াদী কোর্সের শিক্ষার্থী।
বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায় যে, ৮ এপ্রিল শুক্রবার কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও গ্রাফিক্স ডিজাইন বিষয়ে ৬ মাস ও ৩ মাস মেয়াদী কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী সকাল ১০.০০ থেকে ১১.০০ পর্যন্ত লিখিত এবং ১১.৩০ থেকে দুপুর ১২.৩০ পর্যন্ত প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।
মনির হোসেন সুমন তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে দুপুর ১২.০০ টার দিকে লাইভে আসেন এবং কথা বলা শুরু করেন। তিনি লাইভ ভিডিওতে ৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড পর্যন্ত ছিলেন। যারা পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তারা সবাই ২০২১ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
লাইভটি মুহূর্তেই সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ তাদের মন্তব্যগুলো করতে থাকে। মনির হোসেন সুমন কিছুটা বিব্রত হয়ে পড়েন। এরপর তিনি দ্রুত ভিডিওটি ফেইসবুক থেকে সরিয়ে নেন কিন্তু ততক্ষণে ভিডিওটি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়।
তার ফেসবুক লাইভে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মনির হোসেন সুমন নিজেই বলতে থাকেন, আমার খাতা দেখবেন, আমি লিখেছি ইংরেজিতে, মাস্টার্স করা আমার। স্যাররা ঘুমাচ্ছে, আমি ইংরেজিতে লিখেছি, সালামও লিখেছে। পাশের শিক্ষার্থীকে বলেন দেখি তুই কি লিখেছিস। তখন ভিডিওতে দেখা যায় ও সে বলতে থাকে না লিখে আমরা এ+ পেতে চাই। ওই পাশে একটা খালা পরীক্ষা দিচ্ছে ইত্যাদি।
তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার খাতায় বায়োডাটায় লিখে দিয়েছি ও গ্রুপের জায়গা লিখে দিয়েছি, এমপি আনার গ্রুপ করি। স্যাররা এ প্লাস না দিলে বোর্ড-মোড ভেঙে ফেলবানে। জয়ও তাই লিখেছে। আমার লাইভটি কালীগঞ্জ ভাইস চেয়ারম্যান দেখছে। সাথে ভাইস চেয়ারম্যান মন্তব্যে লিখেছে , গল্প না করে তোরা খাতায় লেখ। লাইভে সে আরো বলে ম্যাডাম আপনি কিছু বলেন আমার লাইভে।
লাইভে মনির হোসেন সুমন আরো বলেন, কি সুন্দর পরীক্ষার হল, পরীক্ষা দিচ্ছি আই তোরাতো জীবনে পরীক্ষা দিতে পারবিনে, রোজা থেকে পরীক্ষা দিচ্ছি, গোল্ডেন পাবো, এই দেখ সালামও আছে। এভাবে নানারকম বেফাস মন্তব্য করেন তিনি।
পরীক্ষার হলে লাইভে আছি তাই কি, আমার প্রাণের সংগঠন কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ প্লাস তো পাবোই, ম্যাডামরা সবই বলে দিচ্ছে।
পরবর্তীতে মনির হোসেন সুমনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি তো পরীক্ষা চলাকালে লাইভ করিনি। পরীক্ষা শেষ হলে ছোট একটা লাইভ করেছিলাম।
এ বিষয়ে পরবর্তীতে কালীগঞ্জ উপজেলার ছাত্রলীগের সভাপতির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। লাইভ ভিডিও এভাবে করা উচিত হয়নি বলে স্বীকার করেছেন। প্রয়োজনে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে ঘটনাটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় নানা মহল থেকে নানারকম কথা-বার্তা শোনা যাচ্ছে। অনেকেই বিষয়টিকে খুব জোরালোভাবে নিচ্ছেন। বিরুপ পরিবেশকে দায়ী করছেন। অনেকেই রাজনীতিকে দায়ী করছেন।
অনেকেই শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেছেন। আইনের শাসনের কথা বলেছেন। অল্প সময়ে ভিডিওটি সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নজরে আসে বিষয়টি।
পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কমিটি বিলুপ্তির পরে মনির হোসেন সুমনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আর ফোন ধরেননি।
আরও পড়ুন: নামাজ পড়ার সময় যে কাজগুলো পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
অধ্যাপক মোবারক চৌধুরী বলেছেন, লাইভ ভিডিও যে কেউ করতে পারে তার প্রয়োজন অনুসারে। তাই বলে পরীক্ষার হলে? সেটাও আবার পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে। এটা মেনে নেয়া যায় না। এই ধরণের ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাজে অবস্থার সৃষ্টি করবে।