নেটফ্লিক্স নামটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। সাবস্ক্রিপশন করার মাধ্যমে নেটফ্লিক্স থেকে দুনিয়ার আজব সব ভিডিও দেখা যায়। যেকোন মুভি, গান, ড্রামা ইত্যাদি সবই দেখা সম্ভব।
অথচ বেশ কয়েক মাস থেকে নেটফ্লিক্স তাদের গ্রাহক সংখ্যা হারাচ্ছে। ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে সাবস্ক্রিপশন তালিকায় থাকা গ্রাহকরা।
নেটফ্লিক্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার পরে তাদের এই অবস্থা। অবশ্য এর পেছনের একটি কারণ হলো সাবস্ক্রিপশন ফি বাড়ানো।
আরও তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের শুরুতে প্রথম তিন মাসে নেটফিক্স তাদের গ্রাহক সংখ্যা হারিয়েছে প্রায় তিন লাখ। আগামী দিনগুলোতে যে গ্রাহক সংখ্যা কমবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
গ্রাহক সংখ্যা কমে যাওয়ায় নেটফ্লিক্সের রাজস্ব রায় ২৫ শতাংশ কমে গেছে। মঙ্গলবার বিদেশী সংবাদমাধ্যম বিবিসি’কে দেয়া সাক্ষাতকারে এসব তথ্য বলা হয় নেটফ্লিক্সের পক্ষ থেকে।
বর্তমানে নেটফ্লিক্স তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন চিন্তা করছেন। তন্মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো অ্যাকাউন্ট শেয়ারিং বন্ধ করার মতো পরিকল্পনা।
নেটফ্লিক্স কর্তৃপক্ষের ধারণা অনুযায়ী, প্রায় ১০ কোটি গ্রাহক তাদের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড অন্যজনের সাথে শেয়ার করেছেন। এতে নেটফ্লিক্সের আয় চরমভাবে কমে গেছে।
শেয়ার্ড অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট হয়তো বন্ধ করে দেবেন এবং কিছু অ্যাকাউন্টে বিজ্ঞাপন দেখাবেন। এতে করে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে।
অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা আরেক বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “যখন নেটফ্লিক্স খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল তখন শেয়ার্ড অ্যাকাউন্ট নিয়ে তেমন চিন্তা করা হয়নি। কিন্তু এখন এর জন্য কঠোর পরিশ্রম করা শুরু করেছি।”
নেটফ্লিক্সের কর্মকর্তা লুকাস শ বিবিসিকে বলেন, নেটফ্লিক্স কর্তৃপক্ষ বহুদিন থেকেই পার্সওয়ার্ড শেয়ারিং সমস্যায় ভুগছিলেন। কোম্পানীর সম্ভাব্য আয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা এটি।
পাসওয়ার্ড শেয়ারিং রোধে তারা আগেও কাজ করেছেন। কিন্তু বর্তমানে কোম্পানীর অনেক ক্ষতি হয়ে যাওয়ায় খুব কঠিন সময় পার করছেন।
অন্যদিকে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে দুই দেশ থেকেই কোম্পানিটি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। এতে করে রাশিয়া থেকে প্রায় ৭ লাখ সাব্সক্রাইবার হারিয়েছে কোম্পানীটি।
আবার, সাবস্ক্রিপশন ফি বাড়ানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ও কানাডা থেকে প্রায় ছয় লাখ সদস্য হারিয়েছেন। যার জন্য কোম্পানী এখন শেয়ারিং অ্যাকাউন্ট নিয়ে খুব ভাবছে।
পিপি ফরসাইটের একজন বিশ্লেষক বলেন যে, নেটফ্লিক্স তাদের রাজস্ব আয় বাড়ার সাথে গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টিকে ধরে রাখতে পারেনি অর্থাৎ ভারসাম্যহীনতা তৈরী হয়েছে।
বর্তমানে অ্যামাজন ও অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠান তাদের ভিডিও স্ট্রিমিং পরিসেবাগুলোতে অর্থ ব্যয় করছে। ফলস্বরুপ কিছু গ্রাহক নেটফ্লিক্স এর চেয়ে বেশি সেবার আশায় অন্য পরিসেবাগুলোতে ডাইভার্ট হচ্ছে।
ফলাফলস্বরূপ, নেটফ্লিক্স অ্যামাজন ও অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে অটোম্যাটিক প্রতিযোগিতা করছে। কিন্তু এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা নেটফ্লিক্সের জন্য খুবই কঠিন।
আরও পড়ুন: ওয়ার্নার বাংলা বললো – কেমন আছো তুমি, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
উপরোক্ত বিষয়াবলী ছাড়াও নেটফ্লিক্সের মন্দার পেছনে আরও যেসব কারণ রয়েছে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রাশিয়া ইউক্রেন সংঘাত, ব্রডব্যান্ড সম্প্রসারণে ধীরগতি, অ্যাকাউন্ট শেয়ারিংসহ ইত্যাদি।
গত বছরের শেষ দিকে অর্থাৎ ২০১১ সালের শেষের দিকে এই ওটিটি জায়ান্টটির গ্রাহক সংখ্যা কমেছিল। বর্তমানে নেটফ্লিক্সের গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে প্রায় ২২ কোটি।