আজ আমরা নিম ও হলুদ এর ভেষজ উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো। শুরুতেই নিম পাতার উপকারিতা জানবো।
নিম এর উপকারিতা:
নিম একটি বহু বর্ষজীবি ও চিরহরিৎ বৃক্ষ। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে এই গাছ পাওয়া যায়। নিম গাছের সাধারণত পাতা, ফল, ছাল বা বাকল কাজে লাগে।
আপনি জানলে অবাক হবেন, বিশ্বব্যাপী নিম গাছের পাতা এবং বাকল ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর প্রচুর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। নিম অনেক বেশি নিরাপদ এবং এটি এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
অন্যদিকে নিম ছত্রাক নাশক হিসেবে, ব্যাকটেরিয়া রোধক হিসেবে, ভাইরাস রোধক হিসেবে, কীটপতঙ্গ বিনাশ করার ক্ষেত্রে, ম্যালেরিয়া নিরাময় করতে ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও দাঁতের চিকিৎসায় এবং জ্বর কমাতে ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে নিমের প্রচুর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
এখন আমরা নিমের বহুল ব্যবহার সম্পর্কে জানবো:
- বুকের ভিতর যদি কফ জমে যায় তাহলে, ৩০ ফোটা নিম পাতার রস গরম পানির সাথে মিশিয়ে চার থেকে পাঁচবার যদি খাওয়া যায় তাহলে বুকের ব্যথা কমে যাবে। তবে গর্ভবতী এবং শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এই ওষুধ খাওয়া নিষেধ।
- ছোট ছোট শিশুদের পেটে যদি কৃমি হয় তাহলে ৫০ গ্রাম নিম গাছের মূলের ছালের গুড়া নিয়ে সামান্য গরম পানির সাথে মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চার বার খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- মাথার উকুন যদি আপনি দূর করতে চান তাহলে নিমের পাতা বেটে হালকা করে মাথায় লাগিয়ে এক থেকে দেড় ঘন্টা পর মাথা ধুয়ে ফেলুন। ফলশ্রুতিতে আপনার মাথা থেকে সমস্ত উঁকুন দূর হয়ে যাবে।
- শরীর খসখসে থাকলে নিমপাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করুন। তবে নিমের পাতা বা ফুল বেটে গায়ে কয়েকদিন লাগালে চুলকানি সহ অন্যান্য চর্ম রোগ ভালো হয়ে যায়।
- যেকোনো ধরনের পোকামাকড় কামড় দিলে বা হুল ফোটালে নিম গাছের মূলের ছাল বা পাতা বেটে নিয়ে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হয়।
- নিমের পাতা বা ছাল অথবা ছালের গুড়া দিয়ে নিয়মিত যদি দাঁত মাজেন তাহলে আপনার দাত হয়ে যাবে মজবুত এবং শক্তিশালী। আপনার দাঁত থাকবে রোগমুক্ত এবং দেখতেও অনেক সুন্দর হবে।
হলুদ এর উপকারিতা:
বাংলাদেশে খাবারের মধ্যে যেসব মসলা ব্যবহার করা হয় এর মধ্যে হলুদ অন্যতম। প্রত্যেকটি খাবারে অর্থাৎ বিশেষ করে তরকারিতে হলুদ ব্যবহার করা হয়।
গ্রামাঞ্চলের প্রায় সব জায়গায় হলুদ চাষ করা হয়। তবে আপনি জানলে অবাক হবেন যে, হলুদ শুধু মসলা হিসেবে ব্যবহার হয় না – হলুদের রয়েছে আরো নানা ধরনের ব্যবহার। স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলুদের অনেক উপকারিতা রয়েছে।
এখন আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা জেনে নেবো:
- শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে পানির মধ্যে হলুদের গুড়া মিশিয়ে লাগালে খুব উপকার হবে।
- আপনার মুখে যদি জ্বালাপোড়া করে তাহলে সামান্য গরম পানির সাথে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে নিয়মিত কুলকুচি করুন, আপনার মুখের জ্বালাপোড়া কমে যাবে।
- আয়ুর্বেদিক স্বাস্থ্য তথ্য মতে, হলুদ রক্ত বিশুদ্ধ করে। তাই হলুদের পেস্ট যদি আপনি আপনার চামড়ায় লাগান তাহলে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ থেকে আপনি রক্ষা পাবেন।
- আপনি জানলে অবাক হবেন, হলুদ চেহারার সৌন্দর্য বাড়াতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হলুদের সঙ্গে যদি চন্দন মিশিয়ে নিয়মিত মুখে মাখা হয় তাহলে ত্বক অনেক উজ্জ্বল হয়ে যায়।
- আপনার যদি গা ব্যথা হয় তাহলে সামান্য হলুদের গুঁড়ো দুধের মধ্যে মিশিয়ে নিয়ে খেয়ে নিন। ফলশ্রুতিতে ব্যথা কমে যাবে।শরীরের কোন অংশে যদি ব্যথা হয় তাহলে হলুদের পেস্ট তৈরি করে সেখানে প্রলেপ দিয়ে রাখুন। এক্ষেত্রেও আপনার সেই ব্যথা কমে যাবে।
আরও পড়ুন: ধুমপান করলে কি কি ক্ষতি হয় তা জেনে নিন।
- আমরা জানি স্থূলতা কোন সময়ই কাম্য নয়। কারণ স্থূলতার কারণে আপনার অনেক অসুখ হতে পারে। হলুদ এই স্থূলতা হওয়া থেকে বাঁচায় অর্থাৎ মোটা হওয়া থেকে বাঁচায়। হলুদে কারফুইন নামে এক ধরনের খুব গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা অনেক তাড়াতাড়ি শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে শরীরের কোষগুলোকে বাড়তে দেয় না।
পরিশেষে বলা যায়, নিম ও হলুদ আসলে অনেক গুরুত্বপূূর্ণ দিক থেকে আমাদের উপকারে লাগে। আর নিম ও হলুদ কোথাও গিয়ে কিনতে হয় না। গ্রামাঞ্চলের সব জায়গায় এসব পাওয়া যায়।
তবে শহরে সচরাচর নিম গাছ পাওয়া না-ও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে আপনি নিম পাতা সংগ্রহ করতে পারেন। আর হলুদ বাজারেই সবসময় পাওয়া যায়।