করতোয়া’য় আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা সব সময় স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন টিপস নিয়ে আসি। সেটা হতে পারে হোমিওপ্যাথিক, অ্যালোপ্যাথিক কিংবা অন্য কোনো। তো, আজকে নাকের রোগ নিয়ে আলোচনা করবো এবং জানবো হোমিওপ্যাথিতে এর কি চিকিৎসা রয়েছে। আর দেরি নয়। চলুন শুরু করি:
মানব শরীরে ব্যাধির অন্ত নেই। কোথায় কখন যে রোগ দেখা দেবে তার ঠিক নেই। যে-কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেই রোগ দেখা দিতে পারে। চোখ-গলা-মুখের মতো নাকের রোগও হয়।
নাক দিয়ে রক্ত পড়া, নাসা রোগ, নাকে ক্ষত প্রভৃতি রোগগুলি অনেকেরই হতে দেখা যায়। নাকের সঙ্গে কেবল শ্বাসনালীই নয়, খাদ্য-নালীরও সংযোগ রয়েছে। সুতরাং রোগটা যে শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর তা না বললেও চলে।
নাসা রোগের চিকিৎসা: সর্দি ও ঘাড়ে ব্যথা এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। নাকের গর্তের মধ্যে ফুলে ওঠে। ফোলা জায়গায় ব্যথা হয়, যন্ত্রণা করে।
নাক দিয়ে দুর্গন্ধ স্রাব নির্গত হয়। এ রোগ হলে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। কখনো একটা নাক দিয়ে, কখনো বা দুটো নাক দিয়ে রক্ত পড়ে।
এ রোগের শ্রেষ্ঠ ওষুধ- মেল্লিলোটাস অ্যালবাম ৩ বা বেলেডোনা ১x বা স্যাঙ্গুইনারিয়া Q।
দুর্গন্ধ স্রাব ও রক্ত পড়ায়- ক্যাডমিয়াম সালফ ৩-৩০।
কিছু দুর্বাঘাস হাতে ভালো করে ডলে নিয়ে নাকে ঘ্রাণ নিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
নাক দিয়ে রক্ত পড়ার চিকিৎসা: অনেকের নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। এ রকম প্রায়ই ঘটে থাকে অনেকের। আবার অনেকের হয় কদাচিৎ।
মাথায় অধিক রক্ত সঞ্চয় হলে এ রকম হতে পারে। অন্যান্য কারণের মধ্যে অধিক পরিশ্রম, কাশি, আঘাত লাগা প্রভৃতি প্রধান।
মাথায় রক্ত সঞ্চয় হবার কারণে রক্ত পড়লে- বেলেডোনা ৩ বা ব্রায়োনিয়া ৬ বা অ্যাকোন ৩x।
আঘাত লাগার ফলে রক্ত পড়লে- আর্নিকা ৬।
ঋতু সংক্রান্ত কারণে রক্ত পড়লে- পালস ৬।
নাকে দুর্গন্ধ ও তার সঙ্গে রক্ত পড়তে থাকলে- কার্বোভেজ ৬-৩০।
নাক দিয়ে প্রায়ই যদি রক্ত পড়তে থাকে তাহলে- সিন্নামোমাম ৬।
নাক দিয়ে রক্ত পড়ার একটি উৎকৃষ্ট ওষুধ যা সচরাচর ব্যবহার হয়- মিল্লি ফোলিয়াম Q-৩x।
যাদের নাক দিয়ে প্রায়ই রক্ত পড়ে তারা উপরের এই ওষুধটি নিয়মিত খেয়ে গেলে রোগ সেরে যায়।
নাক ফোলা ও যন্ত্রণার চিকিৎসা: নাক অনেক সময় ফুলে ওঠে। বাইরের অংশ ফুলতে পারে, ভেতরের অংশ ফুলতে পারে, আবার উভয় অংশই ফুলতে পারে।
রোগীর নাকের ব্যথা হয়, টন-টন করে। খুব অস্বস্তি বোধ করে রোগী। শ্বাস-প্রশ্বাসেও কষ্ট থাকে।
সাধারণত আঘাত লেগে বা ঠাণ্ডা লেগে এরকম হয়ে থাকে। ঠাণ্ডা লাগার জন্য এমন হলে- মারকিউরিয়াস ৩ বা অ্যাকোন ন্যাপ ৩x।
আঘাত লাগার জন্য এমন হলে- আর্নিকা ৩।
নাক ফোলা ও প্রদাহ থাকলে- বেলেডোনা ১x-৩।
নাকে দুর্গন্ধ ও সেই সঙ্গে নাক ফোলায়- কেলিবাইক্রোম ৩ বা হিপার সালফ ৩০।
নাকে ক্ষতের চিকিৎসা: অনেকদিন ধরে সর্দিতে ভুগলে, আঘাত লাগলে কিংবা উপদংশ বা পারদ-ঘটিত কারণে নাকের ভেতরে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
এ অবস্থায় নাকে দুর্গন্ধ হয়; গাঢ় হলুদ রঙের স্রাব নির্গত হয়; কখনো বা রক্ত মিশ্রিত স্রাব নির্গত হয়। অনেক সময় স্রাব এতো গাঢ় হয়ে পড়ে যে কিছুতেই বের হতে চায় না। রোগীর নাকে ব্যথা হয়, টন-টন করে, নাক ভারী বোধ হয়।
গাঢ় হলুদ রঙের স্রাব নির্গত হলে- অরাম মেট ৬।
রক্ত-মিশ্রিত গাঢ় স্রাব নির্গত হলে- কেলিবাইক্রোম ৬।
রক্তযুক্ত দুর্গন্ধ স্রাব নির্গত হলে- মারকিউরিয়াস বিন আয়োডেটাস ৬x চূর্ণ।
হলদে রঙের সবুজ আভাযুক্ত স্রাব নির্গত হলে- লাইকোপোডিয়াম ৬।
উপদংশ বার পারদ-ঘটিত কারণে এমন হলে- নাইট্রিক অ্যাসিড ৬।
নাকে ক্ষত হলে মাঝে মাঝে গরম পানির সঙ্গে সামান্য লবণ মিশিয়ে ঈষদুষ্ণ পানিতে নাক ধুলে উপকার হয়। দিনে তিনবার এভাবে ধুয়ে ফেলা উচিত।
আরও পড়ুন: ফ্যাটি লিভার হলে করণীয় কি জেনে নিন – সচেতন হোন।
পরিশেষে বলতে চাই, নাক খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ কারণ নাক দিয়ে আমরা শ্বাস নেই। তাই নাকের রোগ হলে অবহেলা করতে নেই। রোগ লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই নিকটস্থ অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ ও চিকিৎসা গ্রহণ করুন।