জন্মের পরপরই একটি শিশুকে সাধারনত নবজাতক বলা হয়। এমন সময় খুব সাবধানে নবজাতক এর যত্ন নিতে হয়। কারণ, সামান্য যত্নের অভাবে মৃত্যু শঙ্কা পর্যন্ত থাকে। আজ আমরা নবজাতক এর যত্নের বিষয়ে কথা বলবো। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
জন্মের পর ২৮ দিন পর্যন্ত শিশুকে নবজাতক বলা হয়। প্রসবের পরপরই নবজাতকের যত্নের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
যেমন- জন্মের সাথে সাথে শিশুকে শাল দুধ খাওয়াতে হবে, শিশুকে উষ্ণ রাখতে হবে, জন্মের পর পরই শিশুকে গোসল করানো যাবে না এবং নাভির যত্ন নিতে হবে।
প্রসবের পর নবজাতক এর যত্ন:
১. নবজাতককে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।
২. গরম পরিবেশে রাখতে হবে। কোনোভাবেই যেন ঠাণ্ডা না লাগে।
৩. নবজাতককে যতো দ্রুত সম্ভব গোসল করাতে হবে।
৪. নাভীর যত্ন নিতে হবে।
৫. চুল কেটে দিতে হবে।
৬. চোখের যত্ন নিতে হবে।
৭. ত্বকের যত্ন অবশ্যই নিতে হবে। ত্বকে কোনো প্রকার রোগ লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
৮. সময় মতো সব ধরণের টিকাগুলো দিতে হবে।
৯. নবজাতক এর বিপদ চিহৃ বা খারাপ লক্ষণগুলো সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।
১০. জন্মের পর নবজাতককে হালকা রোদে শুকাতে হবে।
নবজাতককে শুকানোর পদ্ধতি:
পরিষ্কার এক টুকরা বড় কাপড়ের উপর শিশুকে নিতে হবে। কাপড় দিয়ে নবজাতকের সারা শরীর জড়িয়ে ফেলতে হবে। তারপর কাপড় দিয়ে নবজাতকের মাথা ভালভাবে মুছতে হবে।
এরপর নবজাতকেরে গলা, ঘাড় ও কাঁধ ভালোভাবে মুছতে হবে। নবজাতকের বুক, পেট ও হাত ভালোভাবে মুছতে হবে।
তারপর নবজাতকের পিঠ ভালোভাবে মুছতে হবে। এরপর নবজাতকের কোমড় থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত ভালোভাবে মুছে দিতে হবে।
একই নিয়মে মাথা থেকে পা পর্যন্ত আরো কয়েকবার মুছতে হবে। মোছানো ভালোভাবে শেষ হলে কাপড়টি ফেলে দিতে হবে।
নবজাতক-কে মোড়ানোর পদ্ধতি:
মোড়ানোর জন্য শুকনা ও পরিষ্কার এক টুকরা বড় সুতী কাপড়ের উপর নবজাতককে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কাপড়ের কিছু অংশ নবজাতকের মাথার উপরের দিকে ও কিছু অংশ নবজাতকের পায়ের নিচের দিকে বাড়তি থাকে।
প্রথমে মাথার উপরের দিকের কাপড়ের বাড়তি অংশ দিয়ে নবজাতকের মাথা কপাল পর্যন্ত ঢেঁকে নিতে হবে। কাপড়ের উপরের দুই কোনা নবজাতকের দুই কাঁধের উপর এসে কাঁধ ঢেকে যাবে।
এবার নবজাতকের পায়ের দিকের কাপড়ের বাড়তি অংশ দিয়ে নবজাতকের পা ঢেকে দিতে হবে। তারপর নবজাতকের শরীরের দুই পাশের বাড়তি কাপড় দিয়ে বুক ও পেট ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে।
পরিপূর্ণ মোড়ানোর পর শিশুকে গরম রাখার জন্য মায়ের বুকে রাখতে হবে। শালদুধ খাওয়াতে সহায়তা করতে হবে এবং অবশ্যই শাল দুধ খাওয়াতে হবে।
নবজাতক এর বিপদের লক্ষণসমূহ:
১. জন্মের পর পর যদি শ্বাস না নেয়।
২. জন্মের পর না কাঁদা।
৩. খিঁচুনী হওয়া।
৪. অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
৫. শ্বাস নিতে বা ছাড়তে কষ্ট হওয়া।
৬. শরীরের তাপ বেড়ে যাওয়া।
৭. শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া।
৮. শরীর হলুদ রঙের হয়ে যাওয়া।
৯. নাভী লাল, নাভীতে দূর্গন্ধ বা পূঁজ থাকা।
১০. চামড়ায় ঘা-ফোসকা বা পুঁজসহ বড় দানা হওয়া।
১১. অনবরত বমি হওয়া।
১২. স্বাভাবিকের চেয়ে কম নড়াচড়া করলে।
১৩. দূর্বল, অনিয়মিত কাঁদা বা কাঁদতে না পারলে খাওয়ানোর সমস্যা।
জন্মের পর পর শ্বাস না নিলে তাৎক্ষনিকভাবে করনীয়:
পরিষ্কার নরম কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে শিশুর সম্পূর্ণ শরীর আরো ভাল করে মুছতে হবে। নাকে ও মুখে কালচে সবুজ পায়খানা লেগে থাকলে তা আঙ্গুলে কাপড় পেঁচিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
শিশুকে কাঁত করে পিঠে শিরদাঁড়া বরাবর নিচ থেকে উপর দিকে বারবার হাতের তালুর নিচের অংশ দিয়ে ঘষতে হবে। কাজটি অবশ্যই সাবধানে করতে হবে।
শিশুর রং এবং শ্বাসের দিকে লক্ষ্য করুন। যদি ঠোঁট, জিহবা ও মুখের রং গোলাপী হয় এবং নিয়মিত শ্বাস নিতে থাকে তাহলে শিশুকে মায়ের বুকে দিতে হবে।
জন্মের পর নবজাতক শ্বাস না নিলে যা করবেন না:
১. পা ওপরে ধরে উল্টো করে নবজাতককে ঝুলানো।
২. বাচ্চাকে থাপ্পড় দেয়া।
৩. নবজাতক এর শরীরে পানি ছিটানো।
৪. কানে অথবা নাকে ফুঁ বা বাতাস দেয়া।
৫. পানিতে চুবানো।
৬. বুকের খাঁচায় চাপ দেয়া।
৭. বাচ্চাকে পর্যায়ক্রমে গরম ও ঠাণ্ডা পানিতে চুবানো।
৮. গর্ভ ফুলকে গরম করা।
৯. গর্ভ ফুলের অপেক্ষায় নবজাতককে ফেলে রাখা।
১০. মুখে ফুঁ দেওয়া।
১১. কানে ফুঁ দেওয়া।
উপরের কাজগুলো কোনোভাবেই করা যাবে না। এসব করলে শিশুর ক্ষতি হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশু মারাও যেতে পারে। অন্যদিকে, শিশুকে কখনো মধু, চিনির পানি ইত্যাদি খাওয়ানো উচিত নয়।
নবজাতক এর কোনো শারীরিক অসুবিধা হলে কোথায় যেতে হবে:
১. উপজেলা হাসপাতাল অথবা,
২. জেলা হাসপাতাল অথবা,
৩. মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা,
৪. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অথবা,
৫. বেসরকারী কোনো হাসপাতাল
পরিশেষে বলা যায়, নবজাতক এর প্রতি কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। বাচ্চা জন্মের আগে থেকেই টাকা-পয়সার ব্যবস্থাসহ সামগ্রিক দিক থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত।
একজন মা ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে রেখে সন্তান প্রসব করে। সেই সন্তানের প্রতি মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা থাকে। পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটায় একটি শিশু। সামান্য কারণে সেই শিশুর কোনো ক্ষতি হোক তা আমরা কেউ-ই চাই না।
আরও পড়ুন: গর্ভবতী মা এর চেকআপ কিভাবে কতদিন পরপর করবেন?