ভারতের মধ্য প্রদেশের হরিয়ানা রাজ্যের সিংরাম নামক গ্রামে একটি ধর্ষণ এর ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। বখাটে যুবককে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। খবর আনন্দ বাজার পত্রিকার।
স্থানীয় গণমাধ্যম ও পুলিশ সুত্রে জানা যায় যে, মেয়েটি সেখানকার একটি স্থানীয় হাই স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়াশোনা করতো। মেয়েটির বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ছিলো প্রায় ২ কিলোমিটার।
মেয়েটি হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাওয়া আসা করতো। মেয়েটির পরিবার নিম্নবিত্ত হওয়ায় মেয়েটিকে সাইকেল কিনে দিতে পারেনি। আর পুরো পথের অধিকাংশ জায়গা ফাকা ছিলো অর্থাৎ তেমন কোনো ঘরবাড়ি ছিলো না।
পাশের গ্রামের বখাটে যুবক মেয়েটিকে প্রায়ই উত্তক্ত করতো। মেয়েটির পিছু নিত। নানারকম অশ্লীল কথা-বার্তা বলতো। বখাটে যুবকের বিরুদ্ধে একাধিকবার মেয়েটি অভিযোগও করেছিল কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।
সেদিনও অন্যান্য দিনের মতো মেয়েটি স্কুলে যাচ্ছিলো। পথে আর কেউ না থাকায় বখাটে যুবক মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যায় এবং পাশের জঙ্গলে ধর্ষণ করে ফেলে রেখে যায়।
অতঃপর মেয়েটি বাড়িতে এসে তার পরিবারকে সব জানায়। ওদিকে বখাটে যুবক ঘটনার পরপরই গা ঢাকা দেয়। হরিয়ানা রাজ্যের পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, বখাটে যুবকের নাম রাজেন্দ্র। সে নেশা করে এবং বিভিন্ন সময় মেয়েদের উত্তক্ত করে। তাকে গ্রেফতারের পুরো চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। বখাটে যুবকের বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
মেয়েটির বাবা বলেন, আমার একটি মাত্র মেয়ে। খুবই মেধাবী ছিল। এখন তো তার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো। আমি কিভাবে আমার মেয়েটিকে বাঁচাবো? আমি ঐ বখাটের ফাঁসি চাই।
থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মেয়েটিকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পরীক্ষার জন্য নেয়া হয়েছে। বখাটে যুবকের শাস্তির জন্য গ্রাম বাসীও আন্দোলন করেছে।
উল্লেখ্য, ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড ও ধর্ষণ এর মতো ঘটনাগুলো ঘটেছে। যেগুলোর বেশিরভাগেরই হদিস পাওয়া যায়নি। কিন্তু বর্তমানে সেখানে পুলিশ বেশ সোচ্চার হয়েছে।
ভারত আয়তনে অনেক বড় দেশ হওয়ায় সেখানে এই ধরণের ঘটনাগুলোর পূণরাবৃত্তি বার বার ঘটে। আসামীরা যথেষ্ট শাস্তি না পাওয়ার কারণে এসব অপরাধ বেড়েই চলেছে।
ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলোকে তেমন কোনো ঘটনাই মনে করা হচ্ছে না। তাছাড়া বাদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হলে পাল্টা হুমকি দিচ্ছে তারা – এমন ঘটনাও ঘটছে।
সিংরাম গ্রামের ব্যবসায়ী তপন হালদার বলেন, এই ধর্ষণ এর ঘটনাটি ঘটার পূর্বেও গত কয়েক মাসে এখানে বেশ কয়েকটি আলোচিত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পুলিশ ও স্থানীয় গণমাধ্যম বিষয়গুলো প্রচার করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি।
আর নিম্নবিত্ত পরিবারের বাবার আসলে তেমন কোনো সামর্থ্য থাকে না অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। আর অপরাধীদের সাথে বড় বড় নেতাদের সম্পর্ক থাকার কারণে বিষয়গুলোর আশু সমাধান জটিল হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন: কৃষকের ঘরে পেয়াজ এলেও মনে আনন্দ নেই।
সাধারণ হিসাব অনুযায়ী ভারতে প্রতিদিন প্রায় ১৫টি ধর্ষণ এর মতন ঘটনা ঘটে। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে সব খবর আসে না। তাহলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আরো যে কতটি ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয় তার হিসাব কেউ রাখে না।
আর যে ধর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটে তার মধ্যে বেশিরভাগই স্কুলছাত্রীর সাথে। হরিয়ানা রাজ্যের বেশিরভাগ স্কুলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মেয়েরা যাতে নিরাপদে স্কুলে আসতে পারে ও বাসায় যেতে পারে সেই ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন একটু নড়েচড়ে বসছে।