নরসিংদীর শিবপুরে সড়ক দূর্ঘটনা হয়েছে। যারা হতাহত হয়েছে তারা সবাই সাভারের আশুলিয়ার এসবি নিটিং নামের একটি পোশাক কারখানার কর্মী।
তারা সবাই একই সাথে চলাফেরা করতেন কারন তারা একই কোম্পানীতে কাজ করতেন আর তাই তাদের সবার মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিলো।
আজ ছুটির দিনে (শুক্রবার) তারা সবাই দলবেঁধে একটি মাইক্রোবাস করে সিলেটে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ পাথরবাহী একটি ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগলে দূর্ঘটনা ঘটে।
কেউ হাসপাতালের মর্গে আর কেউ হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। জানা যায়, ট্রাকটি বেপরোয়া গতিতে চলছিলো। সামনাসামনি ব্রেক করার মতো অপশনই ছিলো না। তাই এতো বড় দূর্ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে শিবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঘাসিরদিয়া এলাকায় এই দূর্ঘটনা ঘটে।
সিলেট থেকে ছেড়ে আসা পাথর বোঝাই একটি ট্রাক আরেকটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গেলে মাইক্রোবাসটির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
তাৎক্ষণিক মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই সাতজন নিহত এবং চারজন গুরুতর আহত হন। নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় পাওয়া গেছে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন-
১. টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার মীর কুমুল্লী গ্রামের মোতাহার হোসেনের ছেলে মীর নাজমুল হক ওরয়ে সবুজ (৩০)।
২. গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার লতিফপুর গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে আল-আমিন (২৭)।
৩. ঝালকাঠির রাজাপুর থানার পারগোপারপুর গ্রামের আব্দুল গনি হাওলাদারের ছেলে আল আমিন হাওলাদার (২৯)।
৪. জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানার ধারাবর্ষা গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে রাজু আহম্মেদ (৩৬)।
৫. মাদারীপুরের কালকিনি থানার উত্তর কৃষ্ণ নগর গ্রামের তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আব্দুল আউয়াল (৩৭)।
৬. বরিশালের মুলাদি থানার মুলাদি গ্রামের মো. মজিবর সিকদারের ছেলে রায়হান সিকদার ওরফে আরিয়ান (২৪) এবং
৭. কুষ্টিয়ার সদর থানার খাজানগর গ্রামের নুরু মোল্লার ছেলে বাবুল মোল্লা (৪০)।
এছাড়া যারা আহত হয়েছেন তাদের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন সাকি, পারভেজ ও দোয়েল। দূর্ঘটনার পর থেকেই মাইক্রোবাস চালকের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এসবি নিটিং কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. শিহাব উদ্দীন দূর্ঘটনার খবর পেয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে আসেন।
তিনি বলেন, চালক এবং চালকের সাথে আরেকজন বাদে মাইক্রোবাসে থাকা ৯ জনই আমাদের কারখানার কর্মী। তাঁদের মধ্যে আটজনই প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ডাইজার ও একজন ফেব্রিক্স সেকশনের স্টোর কিপার।
বেশ কিছুদিন আগে থেকেই তারা সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সেই পরিকল্পনার অনুযায়ী গতকাল রাত ১১ টার দিকে আশুলিয়া থেকে চালকসহ ১১-১২ জন ওই মাইক্রোবাসে চড়ে সিলেটের দিকে রওনা হন। পথে নরসিংদীর শিবপুরে এই দূর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
ফায়ার সার্ভিস এবং হাইওয়ে পুলিশ বলছে, গতকাল দিবাগত রাত ৩টার কাছাকাছি সময়ে এই মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটে। সিলেট থেকে পাথর বোঝাই একটি ট্রাক ঢাকার দিকে যাচ্ছিল আর মাইক্রোবাসটি সিলেটের দিকে যাচ্ছিল।
ঘাসিরদিয়া এলাকায় অন্য একটি গাড়িকে যখন ট্রাকটি ওভারটেক করতে যায় তখনই ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং মাইক্রোবাসটির সাথে দূর্ঘটনা ঘটে।
দূর্ঘটনার খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ৬ জনকে উদ্ধার করে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে পাঠান এবং নিহত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করেন।
হাসপাতালে নেয়ার পরে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আরও ২জনকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে নেয়ার পথেই তাদের মৃত্যু হয়। আর আহত ৪ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
দূর্ঘটনায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাস ও পাথর বোঝাই ট্রাক জব্দ করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। ট্রাকটির চালকও আটক আছেন।
বিভিন্ন মাধ্যমে হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে খবর পাঠানো হচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চৌধুরী জানান, ট্রাকের চাপায় হতাহত ব্যক্তিরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী ছিলেন। নিহত সাতজনের লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। তাঁদের স্বজনরা এলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: থাইল্যান্ড এর সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেই গ্রেফতার