দাঁত ব্যথা হওয়ার কারণ এবং নিরাময়ের উপায়:
দাঁত ব্যথার প্রধান কারণ হলো ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁত ক্ষয় রোগ। দাঁত ক্ষয় রোগে সাধারণত দাঁতের কোনো অংশে গর্ত হয়ে যায় ও দাঁত ব্যথা করে।
দাঁত ব্যথার অন্যান্য কারণগুলো হচ্ছে- আক্কেল দাঁতের সমস্যা, দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হওয়া, পুঁজ হওয়া, আঘাতের কারণে দাঁতে ফাঁটল এবং ক্যারিজ সহ ইত্যাদি।
সাধারণত, বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ শুরু হয়ে যায় দাঁত ব্যথা। আর আপনি ব্যথায় কাতরানো ছাড়া অন্য কিছু করতে পারছেন না মোটেও।
দ্রুত দাঁতের ডাক্তার বা ডেন্টিষ্টের কাছে যাওয়া খুবই জরুরী হয়ে পড়ে। কিন্তু তখনই কি করে সম্ভব? আপনার তো অন্য সমস্যাও থাকতে পারে। ডেন্টাল আপনার থেকে অনেক দূরে হতে পারে।
ডেন্টাল ডাক্তারের দারস্থ হতেও তো অন্তত কিছুটা সময় দরকার। তো সেক্ষেত্রে আপনি কি করবেন – জেনে নিন এই নিবন্ধ থেকে সেই সব বিষয়গুলো।
কিছু ঘরোয়া উপায় জেনে নিলে এই সময় খানিকটা সময়ের জন্য মিলবে স্বস্তি। অবসান ঘটবে দাঁত ব্যথা ও আনুষঙ্গিক সমস্যাগুলোর।
দাঁত ব্যথা নিরাময়ের ১৫ টি উপায় নিম্নে বর্ণিত হলো:
১। দারচিনি: এসময়ে স্বস্তি দিতে পারে দারচিনি। দারচিনির মধ্যে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল আর ব্যথা কমানোর গুণ আছে অনেক।
শুধু ব্যথা কমানোই নয়, এছাড়াও দারচিনি দাঁতকে আরো মজবুত করে তোলে। এইসব কারণে দারচিনি দাঁত আর মাড়ির জন্য খুবই উপকারী।
দাঁত ব্যথা করলে একটা দারচিনির টুকরো নিয়ে যে অংশে ব্যথা হচ্ছে সেই অংশের উপর রাখুন। হালকা করে চিবুতে থাকুন।
এখন দারচিনি থেকে যে রসটা বের হচ্ছে তা কিছুক্ষণ দাঁতের অংশে রেখে গিলে ফেলুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখবেন দাঁত ব্যথা অনেকটা কমে গেছে।
২। লবণ পানি: একেবারে সাধারণ এবং প্রচলিত এই প্রক্রিয়া আসলেই অনেক কার্যকর। এক গ্লাস গরম পানিতে বেশি করে লবণ গুলে কুলকুচি করুন যতক্ষণ সম্ভব।
দাঁত ব্যথার কারণ হিসেবে যদি কোনও জীবাণু থেকে থাকে তবে তা দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও মাড়িতে রক্ত চলাচল ভালো করে দেয় এবং সাময়িকভাবে দাঁত ব্যথা কমে আসবে।
তবে এই লবণ পানি খেয়ে ফেলবেন না যেন। সবসময় কুলকুচি করে ফেলে দেবেন। খেয়ে ফেললে খুব বড় ক্ষতি হবে না, তবে খেয়ে ফেলাটা উচিত নয়। কারণ, এতে জীবাণু থাকতে পারে।
৩। লবঙ্গ: যে দাঁতটা ব্যথা করছে তার ওপরে বাম পাশে (যেখানে ব্যথা) একটা লবঙ্গ রেখে দিন। মাড়ি আর দাঁতের মাঝে অথবা দুই চোয়ালের মাঝে এই লবঙ্গ চেপে রাখতে পারেন যতক্ষণ না ব্যথা চলে যায়।
লবঙ্গের তেল ব্যবহার করতে পারেন তবে দুই-এক ফোঁটার বেশি নয়। লবঙ্গ গুঁড়োর সাথে পানি বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করেও লাগাতে পারেন। এতেও অনেক উপকার হয়।
৪। আদা: এক টুকরো আদা কেটে নিন এবং যে দাঁত ব্যথা করছে সে দাঁত দিয়ে চিবোতে থাকুন। যদি চিবোতে বেশি ব্যথা লাগে তাহলে অন্য পাশের দাঁত দিয়ে চিবিয়ে নেন।
এরপর যে রস এবং আদার পেস্ট তৈরি হবে সেটা ঐ আক্রান্ত দাঁতের কাছে নিয়ে যান। জিহ্বা দিয়ে একটু চেপে রাখুন দাঁতের কাছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথা ইনশাআল্লাহ দূর হয়ে যাবে।
৫। রসুন: এক কোয়া রসুন থেঁতো করে নিয়ে দাঁতের ওপর লাগিয়ে রাখুন। রসুনের সাথে একটু লবণও মিশিয়ে লাগাতে পারেন। অল্প সময়ের মধ্যেই দাঁত ব্যথা কমে যাবে।
৬। পেঁয়াজ: টাটকা এবং রসালো এক টুকরো পেঁয়াজ কেটে নিয়ে সেটা আক্রান্ত দাঁতের ওপর চেপে রাখুন। অন্তত দুই থেকে পাঁচ মিনিট দিয়ে রাখুন। ইনশাআল্লাহ উপকার হবে।
৭। মরিচ: শুকনো মরিচের গুঁড়ো দিয়ে পেস্ট তৈরি করে দাঁতের ওপরে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে মরিচের ভেতরে থাকা উপাদান আপনার দাঁতের ওই ব্যথাকে অবশ করে দেবে।
গোলমরিচের গুঁড়োও ব্যবহার করতে পারেন। তবে সাবধানে ব্যবহার করবেন। যেহেতু মরিচের গুঁড়ো সুতরাং ব্যথা কমার সাথে অনেকটা জ্বালা করার সম্ভাবনাও কিন্তু আছে। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না।
৮। শসা: শসাকে ফালি করে কেঁটে দাঁতে এবং মাড়িতে ধরে রাখুন। যদি ঠাণ্ডায় সেনসিটিভিটি না থাকে তাহলে ঠাণ্ডা শসা মাড়িতে লাগান। ঠাণ্ডা শসার রস দাঁত ও মাড়ির ব্যথা দ্রুত উপশম করতে সহায়তা করে।
৯। ভিনেগার: অল্প পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার অথবা সাদা ভিনেগার তুলায় নিয়ে ব্যথার জায়গায় চেপে ধরে রাখুন। অল্প সময়ের মধ্যে দাঁত ব্যথা নিরাময় হয়ে যাবে।
১০। পুদিনা: কয়েকটি পুদিনা পাতা মুখের ভেতরে নিয়ে কতক্ষন চিবোলেও দাঁত ব্যথা কমে যায়। পুদিনা পাতা নিয়মিত খেলে শরীরের অনেক উপকারও হয়।
১১। আলু: কাঁচা আলু কুচি করে কেঁটে সামান্য থেঁতলে নিন এবং হালকা লবণ মিশিয়ে ব্যথার জায়গায় চেপে ধরে রাখুন। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ব্যথা কমে যাবে ইনশাআল্লাহ।
১২। লেবু: লেবুর রসও দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে। লেবুর এক অংশ ফালি করে কেটে নিন এবং দাঁতে ও মাড়িতে ঘষে ঘষে লাগান। এছাড়াও নিয়মিত লেবু খেলে ঠোঁটের যেকোন সমস্যায় অনেক কাজে দেয়।
১৩। বেকিং সোডা: একটা কটন বাড অথবা এক টুকরো তুলা একটু পানিতে ভিজিয়ে সোডা লাগিয়ে নিন এবং দাঁত ও মাড়িতে ঘষে ঘষে লাগান।
এক চা চামচ বেকিং সোডা হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে ঘরেই তৈরি করতে পারেন কেমিক্যালবিহীন মাউথওয়াশ।
অন্য একটি পদ্ধতিতেও বেকিং সোডা ব্যবহার করা যায়। এক চামচ বেকিং সোডা এক গ্লাস গরম পানিতে গুলিয়ে সেটা দিয়ে কুলকুচি করে ফেলুন, উপকার হবে।
১৪। টি ব্যাগ: চা বানানোর পর টি ব্যাগটি গরম থাকা অবস্থায় ব্যথার জায়গায় কিছুক্ষণ ধরে রাখুন। চা পাতার ট্যানিন নামক উপাদান দ্রুত ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে।
১৫। বরফ: ঠাণ্ডা বরফের টুকরো দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকর। সরাসরি বরফ দাঁতে না লাগিয়ে বরফকে একটি নরম সুতি কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে নিন এবং ব্যথার জায়গায় আস্তে আস্তে ঘষুণ।
ঠাণ্ডা বরফ দাঁতের ব্যথা কমিয়ে আরাম দেয়। তবে মনে রাখবেন, সরাসরি বরফ দাঁত অথবা মাড়িতে লাগাবেন না। এতে করে ফলাফল উল্টো হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: সাপ কামড়ালে যা করবেন।
পরিশেষে বলতে চাই, সবসময় একটা কথা মনে রাখবেন, আপনার দাঁত ব্যথা করছে তার মানে হলো নিশ্চয়ই দাঁতের ভেতরে কোনো সমস্যা আছে কিংবা হয়েছে এবং অবশ্যই একজন ডেন্টাল ডাক্তার এর কাছে আপনার যাওয়া উচিত।
ঘরোয়া কার্যকরী এই পরামর্শগুলো কেবল আপনাকে কিছুটা সময়ের জন্য ব্যথা থেকে মুক্তি দেবে। তাই বলে ডেন্টাল ডাক্তার দেখানোর কথাটা ভুলে যাবেন না যেন। বিশেষ করে মাড়ি যদি ফুলে যায় তবে বুঝতে হবে ইনফেকশন হয়ে গেছে এবং অতি দ্রুত একজন ডেন্টাল ডাক্তারের (বিডিএস ডিগ্রীধারী) পরামর্শ ও চিকিৎসা নেয়া আপনার প্রয়োজন।
দাঁত অনেক মূল্যবান। এই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত পড়তে পারেন এখানে। অকালে দাঁত পড়ে গেলে কিংবা নষ্ট হয়ে গেলে আপনি শুধু সময়ে সময়ে আফসোস করবেন। তাই দাঁতের সমস্যা হলে অবহেলা না করে এই ঘরোয়া চিকিৎসার পাশাপাশি অবশ্যই একজন ডেন্টাল ডাক্তারের পরামর্শ নিন।