সুন্দর ত্বক সবাই পছন্দ করে। ত্বকের ক্ষতি কেউ চায় না। কিন্তু সবার ত্বক প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর হয় না। কেউ দেখতে কালো, কেউ ফর্সা আবার কেউ শ্যামলা।
যদিও সৃষ্টিকর্তার সব সৃষ্টিই সুন্দর। তবে স্বাভাবিকভাবে আমরা বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করার মাধ্যমে ত্বককে সুন্দর করার চেষ্টা করি।
বিভিন্ন লোশন ব্যবহার করি, ক্রিম বা স্নো ব্যবহার করি। কিন্তু ত্বকের জন্য এগুলো মোটেও ভালো কিছু নয়। হয়তো সাময়িক ভালো হয় কিন্তু পরে ক্ষতি হয়।
অনেকেই সপ্তাহে দুই তিন দিন পার্লারে গিয়ে মেকআপ করে। কিন্তু পরবর্তীতে তার ত্বকে বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে। আজ আমরা এই বিষয়গুলোই নিয়ে আলোচনা করবো। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
১. বডি লোশন:
বডি লোশন আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি শীতের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি বস্তু। এটি শরীরের শুষ্ক ভাবকে দূর করতে অনেক সাহায্য করে থাকে।
যদিও বডি লোশন শরীরের শুষ্ক ভাব দূর করতে পটু। সেই জন্য আমাদের দেশে অনেকেই বডি লোশন মুখে মেখে থাকেন।
এটা কিন্তু ঠিক নয়। লোশনে নানা রকম সুগন্ধী উপাদান থাকে যা মুখের জন্য ভালো নয়। মুলত বডি লোশন তৈরি করা হয় শরীরের জন্য, মুখের জন্য নয়।
কারন শরীরের ত্বক মুখের ত্বকের তুলনায় পুরু হয়ে থাকে। আর বডি লোশনকেও সে অনুযায়ী তৈরি করা হয়। সুতরাং আমাদেরকে সেই দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। আমরা যদি লোশন মুখে ব্যবহার করি তাহলে কোমল ত্বকের অনেক ক্ষতি হবে।
২. লেবু:
এ তো বলার অপেক্ষা রাখে না লেবুর কতটা স্বাস্থ্যকর গুণ রয়েছে। তবে লেবু মুখের ত্বকের পিএইচের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই লেবু ত্বকে ব্যবহার করা ঠিক নয়।
৩. গরম পানি:
গরম পানি দিয়ে গোসল বা মুখ ধুতে অনেকে পছন্দ করতে পারে। তবে গরম পানি মুখের ত্বকে লাগানো ঠিক নয়। এটি মুখের ত্বককে শুষ্ক করে তোলে। যার ফলে ত্বকের তারুণ্য ভাব চলে যায়।
৪. হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড:
এই শক্তিশালী উপাদানটি কেটে গেলে ও পুড়ে গেলে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে ব্যবহার কর হয়। তবে এটি ব্রণের চিকিৎসায় কখনোই ভালো উপাদান নয়। এটি প্রদাহ ও অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে। কাজেই এটা একদম ব্যবহার করা যাবে না।
৫. টুথপেস্ট:
আমরা অনেকেই ব্রণ শুকিয়ে ফেলার জন্য টুথপেস্ট ব্যবহার করে থাকি। তবে এ কাজ কখনোই করা যাবে না।
টুথপেস্ট মুখের ত্বকে অস্বস্তি বাড়ায় এবং জটিল সমস্যা তৈরি করতে পারে। যেমন- কেমিক্যাল বার্ন, স্কার্স ইত্যাদি। সুতরাং আমাদের অনেক সচেতন থাকতে হবে ত্বকের যত্নের বিষয়ে।
৬. ভ্যাসলিন:
ভ্যাসলিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সাথে ভ্যাসলিন সারা বিশ্বেই ত্বক আর্দ্রতা করার একটি উৎকৃষ্ট উপাদান। এটি শুষ্ক ত্বক প্রতিরোধে উপকারী।
বিভিন্ন কাটাছেঁড়া বা পোকামাকড়ের কামড়ে এটি ব্যবহার করা যায়। তবে ব্রণ হলে কখনোই ভ্যাসলিন মুখে লাগাবেন না। কারণ, এটি ব্রণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
৭. বেকিং সোডা:
আমরা অনেকেই ভাবি, বেকিং সোডার ব্যবহার ত্বকের মৃতকোষ দূর করার জন্য ভালো মনে হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এর ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে এবং ত্বকের আর্দ্রতা নষ্ট হইয়ে যাবে। তাই মুখে বেকিং সোডা ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
৮. চিনি:
অনেকে ত্বকের মৃতকোষ দূর করার জন্য চিনি ব্যবহার করার কথা মনে করে। তবে এটি লাভের বদলে ক্ষতি বেশি হয়।
এটি ত্বকের নমনীয়তা কমিয়ে দেয়। তাই মুখে এই উপাদান ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। আর খুব প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৯. হেয়ার স্প্রে:
জানি আমাদের জীবনে বিলাসীতা চলে আসেছে। চুলেও আমরা হেয়ার স্প্রে করি। সুতরাং এটি ব্যবহার করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে তা যেন ত্বকে না যায় সেইভাবে ব্যবহার করতে হবে।
কারণ এর অ্যালকোহল ত্বককে শুধু রুক্ষ্মই করে তোলে না, একইসঙ্গে অকালে বলিরেখা ও অ্যালার্জির মতো সমস্যাও সৃষ্টি করে।
১০. রঙ:
চুলে কালার করা এখন তো নতুন ফ্যাশন হয়ে গেছে। চুলে রঙ করতে গিয়ে খেয়াল রাখতে হবে যেন রঙ ত্বকে না লাগে। এগুলো ত্বকের নানা সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী।
১১. ঘি:
ডালডা বা ঘি জাতীয় কোন দ্রব্য কখনই মুখে লাগানো ঠিক নয়। এগুলো মুখের জন্য অত্যন্ত ভারী হওয়ায় লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়। তখন ব্রণসহ ত্বকের আরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১২. ডিওডোরেন্ট:
কম ঘামার জন্য মুখে কখনই ডিওডোরেনট স্প্রে করা ঠিক নয়। এই কাজটিতেও সৌন্দর্য হানি ঘটে।
১৩. শ্যাম্পু:
মাথার ত্বক ও চুলকে পরিষ্কার রাখে শ্যাম্পু। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এটা মুখের ত্বকের জন্যও ভালো। কাজেই যতটা পারা যায় এটি ত্বকে লাগানো থেকে দূরে থাকতে হবে।
১৪. নেইলপলিশ:
অনেক মেয়েরা নেইলপলিশ দিয়ে কপালে টিপ আঁকতে দেখা যায়।এই কাজটিও করা ঠিক নয়। কারন নেইলপলিস এর মধ্যে অনেক রাসায়নিক উপাদান থাকে যা মুখের ত্বকের অনেক ক্ষতি করতে পারে।
১৫. মেয়নিজ:
মেয়োনিজ তৈরি হয় ডিম, তেল আর ভিনেগারের সংমিশ্রণে। এ উপাদানগুলো রুক্ষ চুলের জন্য খুবই উপকারী।কিন্তু এটি মোটেও মুখের ত্বকের জন্য ভালো নয়। কাজেই এটি ব্যবহার না করাই ভালো।
১৬. ভিনেগার:
অনেক ঘরোয়া চিকিৎসায় এটি কাজে লাগলেও তা মুখের জন্য ভালো নয়। শুধু তাই নয়, ভিনেগার ব্যবহারের পর হাত ভালো করে ধুয়ে তবেই মুখে হাত দেওয়া উচিত।
১৭. ভুল পণ্য অবলম্বন:
আমরা অনেকে মনে করি, সাবান বা ফেশওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলেই হল। এটা ঠিক নয়। শুধু মুখ ধুলেই হয় না সেটা ভালভাবে পরিষ্কার করারও প্রয়োজন আছে।
আর এই কারনে ত্বক ভালভাবে পরিষ্কার হয় না। কিন্তু ত্বক ভাল করে পরিষ্কার করলে মুখের ধুলা ময়লা, মেইক-আপ এবং মুখের গ্লানি সব সুন্দর ভাবে পরিষ্কার হয়।
১৮. দুইবারের বেশি মুখ ধুলে:
দিনে আমাদের উচিত এক বা দুইবার ভাল করে মুখ ফেশওয়াশ বা সাবান দিয়ে ধুয়া। কিন্তু আমরা দিনে অনেক বার মুখ ধুয়ে ফেলি।
ফলে ত্বকের অনেক সমস্যা দেখা দেয়। এই দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে আমরা আমাদের মুখ দিনে দুইবার এর বেশি সাবান বা ফেশওয়াশ ব্যবহার না করি।
১৯. মুখে জোরে ম্যাসাজ করলে:
মুখে কখনো বেশি জোরে ম্যাসাজ করা ঠিক নয়। মুখের ভালর জন্য সপ্তাহে ২-৩ বার ম্যাসাজ করা উচিত। কিন্তু অনেক নরম ভাবে ত্বকে ম্যাসাজ করতে হবে। তাহলে মুখে উজ্জ্বলতা আসবে।
২০. নরম গামছা ব্যবহার:
মুখ মোছার সময় আমরা অনেক সময় শক্ত জাতীয় গামছা ব্যবহার করি। যা একদম ঠিক নয়। শক্ত গামছা আমাদের ত্বকের মোলায়েম কে দূরে সরিয়ে দেয়। সুতরাং এই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
২১. ধোঁয়ার পর ময়েশ্চার ব্যবহার:
অনেকে ধোঁয়ার সাথে সাথে মুখ শুকানোর সময় দেয় না। মুখে ক্রিম দেওয়া শুরু করে। যা মোটেও ঠিক নয়। মুখ ধোঁয়ার পর শুকালে ক্রিম দিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, সুন্দর ত্বক আমরা অবশ্যই চাই। এর জন্য প্রাকৃতিকভাবে আমরা চেষ্টা করবো। এমন কিছু ব্যবহার করা উচিত নয় যাতে করে সাময়িক সৌন্দর্য পাওয়া যাবে কিন্তু পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে।
কোনো কোনো মেয়ে এমন সব ক্রীম ব্যবহার করে যার ফলে পরবর্তীতে তাদের মুখে ব্রণের কোনো শেষ থাকে না। তাই সৌন্দর্য চর্চায় বা ত্বকের ক্ষতি হয় এমন সব জিনিস থেকে সাবধান হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: তেজপাতা শুধু মসলা হিসেবে নয় – আরও নানাবিধ উপকার করে।