তেলাকুচা এক প্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। এর বোটানিক্যাল নাম Coccinia grandis বা Coccinia Cordifolia Cogn। এটি Cucurbitaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং ভেষজ নাম হলো Coccinia.
প্রচলিত নাম হলো তেলাকুচা, তেলাকুচো, কুন্দ্রি শাক। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক তেলাকুচা গাছের ওষুধি (Medicine) গুণাগুণ সম্পর্কে। সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
১. ডায়াবেটিস:
নানা কারণে আমাদের দেহে ডায়াবেটিস (Diabetes) বাসা বাঁধে যা ধীরে ধীরে আমাদের শরীরকে অকেজ করে দিতে থাকে। তাই যাদেরডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের অবশ্যই এই রোগ(Disease) নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি।
এক্ষেত্রে তেলাকুচা গাছ খুবই কার্যকরী। তেলাকুচার কান্ডসহ পাতা ছেঁচে রস তৈরি করে নিন। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে এই রস আধাকাপ পরিমাণ পান করুন। এছাড়াও তেলাকুচার পাতা রান্না করে খেলে ডায়াবেটিস রোগে উপকার হয়।
২. জন্ডিস:
জন্ডিস হলে অনেকেই ভয় পেয়ে যান। তবে ভয় না পেয়ে ভরসা রাখুন এই তেলাকুচা গাছের উপর। যা খুব উপকারী (Useful)। জন্ডিস সারাতে তেলাকুচার মূল (Original) ছেঁচে রস তৈরি করে নিন।
এবার প্রতিদিন সকালে আধাকাপ পরিমাণ এই রস পান করুন। এতে উপকার পাবেন। পা ফুলে যাওয়া কিংবা শোথ রোগ অনেকেরই হয়ে থাকে। দীর্ঘ সময় গাড়িতে ভ্রমণ করা বা অনেকক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে এই সমস্যা দেখা দেয়।
এক্ষেত্রে তেলাকুচার মূল ও পাতা ছেঁচে এর রস ৩ থেকে ৪ চা চামচ প্রতিদিন সকালে ও বিকালে পান করুন। এতেই সমস্যার সমাধান মিলবে।
৩. শ্বাসকষ্ট ( হাঁপানি নয়):
অনেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগে থাকেন। বিশেষ করে বুকে সর্দি (Cold) বা কাশি (Cough) বসে যাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।
এর থেকে রক্ষা পেতে তেলাকুচার মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে নিন। এবার ৩ থেকে ৪ চা চামচ পরিমাণ তিন থেকে সাত দিন প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে খান। শ্বাসকষ্টের সমস্যা মিটে যাবে।
৪. কাশি:
কাশির উপশমেও তেলাকুচা খুব উপকারী। যদি শ্লেষ্মা কাশি হয় তবে শ্লেস্মা তরল করতে এটি বেশ কাজ করে। কাশির উপশমে ৩ থেকে ৪ চা চামচ তেলাকুচার মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে নিন।
এবার এর সঙ্গে আধা চা চামচ মধু মিশিয়ে ৩ থেকে ৭ দিন প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে খান। এতেই উপকার মিলবে।
৫. শ্লেষ্মা জ্বর:
শ্লেষ্মা জ্বর (Mucus fever) থেকে রক্ষা পেতে ৩ থেকে ৪ চা চামচ তেলাকুচার মূলও পাতার রস হালকা গরম করে নিন। এবার এটি ২ থেকে ৩ দিন সকাল ও বিকেলে খান। এক্ষেত্রে তেলাকচুর পাতা পাটায় বেঁটে রস করে নিতে হবে।
৬. স্তনে দুধ স্বল্পতা:
সন্তান প্রসবের পর অনেকের স্তনে দুধ আসে না। আবার শরীর(Body) ফ্যাকাশেও হয়ে যায়। এ অবস্থা দেখা দিলে ১টি তেলাকুচা ফলের রস হালকা গরম করে মধু (Honey) মিশিয়ে নিন। এবার এই রস পরিমাণ মতো সকাল ও বিকেল ১ সপ্তাহ খান। এতে স্তনে দুধের স্বল্পতা দূর হয়ে যাবে।
৭. ফোঁড়া ও ব্রণ:
ফোঁড়া ও ব্রণ (Acne) সারাতে তেলাকুচা পাতা জাদুর(Magic) মতো কাজ করে। তেলাকুচা পাতার রস বা পাতা ছেঁচে ফোঁড়া ও ব্রণে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে ব্যবহার করুন। এতে দ্রুত মুক্তি মিলবে।
৮. আমাশয়:
প্রায়ই আমাশয় (Dysentery) হতে থাকলে তেলাকুচার মূল ও পাতার রস ৩ থেকে ৪ চা চামচ প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে খান। ৩ থেকে ৭ দিন নিয়ম করে এই রস পানেই উপসম মিলবে।
৯. অরুচিতে:
অনেকেরই সর্দিতে মুখে অরুচি হয়। এই অবস্থায় তেলাকুচার পাতা একটু সিদ্ধ করে পানিটা ফেলে দিন। এবার এটি ঘি দিয়ে শাকের মত রান্না করে নিন। খেতে বসে প্রথমেই এই শাক খেলে খাওয়াতে রুচি আসবে।
পরিশেষে বলা যায়, তেলাকুচা আসলে আমাদের ব্যক্তিজীবনে অনেক উপকারে আসে। বাড়ির আঙিনায় এর চাষ করা সম্ভব। বিভিন্ন প্রয়োজনে খুব সহজেই ভেষজ উপকারিতা পেতে তেলাকুচা অবশ্যই বাড়িতে রাখুন।
আরও পড়ুন: জলপাই পাতার নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা।