পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বর্তমানে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। মানুষজন খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছে। যারা গরীব ও খেটে খাওয়া মানুষ তাদের অবস্থা আরও করুণ। আজ পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
“হাবারে, কি করিমু – মাইনশির কাজ না করিলে ভাত কুঠে পাম? হামরা তো কামলা দিয়া খাও। একদিন কাজোত না গেইলে হামার না খাইয়া থাকিবার নাগিবে। যে ঠান্ডা তারপরত হামার কিছু করার নাই” – কথাগুলো বলছিলেন দিনমজুর কমলাকান্ত রায়।
বেশ কয়েকদিন ধরে পঞ্চগড় জেলা ও তার আশেপাশে শীতের তীব্রতা চরম আকারে বেড়ে গেছে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাতের ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল হাওয়ায় সবাই উপভোগ করছে হাঁড় কাপানো শীত। রাতে আবার টিপ টিপ করে বৃষ্টি ঝড়ছে। যদিও সেটা বৃষ্টি নয়, মূলত ঘন কুয়াশা।
রাতে টিপ টিপ করে যে কুয়াশা পড়ছে তা সকাল ১০টা অবধি থাকছে। যারা খেটে খাওয়া মানুষ তারা কোনরকমে কাজে চলে যাচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত ঠান্ডায় কাজ করার কারণে অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে যে, গত দুই দিন ধরে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। আজকে সকাল ৯.০০ টার সময় তাপমাত্রা রেকর্ড করে পাওয়া গেছে ১০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এর আগে গতকাল সোমবার সকাল ৯.০০ টায় তেঁতুলিয়া ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
যারা বাংলা বছরের হিসাব রাখেন তারা জানেন যে, পৌষ মাসের শুরুতেই উত্তরের এই জনপদগুলোতে জেঁকে বসে শীত। তাপমাত্রা দিনের দিন কমতে থাকে। ঘন কুয়াশার সাথে ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাস বাড়িয়ে দেয় শীতের তীব্রতা।
পঞ্চগড়ে বর্তমানে সকাল ১০.০০ টার পূর্বে সূর্য দেখাই যায় না। কারণ, রোদের তীব্রতা নাই বললেই চলে। দুপুর বেলাতেও শীতের তীব্রতা কিছুটা থাকে। রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। দেখা গেছে, দিনের বেলাতেও কেবল কুয়াশার কারণে যানবাহনগুলোতে হেডলাইট জ্বালানো ছিল। কারণ, দূর্ঘটনা এড়াতে হেডলাইট জ্বালানো একটি উত্তম উপায়।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বলেছেন যে, তেঁতুলিয়ার আকাশের উপরিভাগে ঘন কুয়াশা রয়েছে। এ জন্য রোদের তীব্রতা কম মনে হচ্ছে। এ ছাড়া উত্তরের হিমেল বাতাসে শীত অনুভূত বেশি মনে হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, মৌসুমের স্বাভাবিক একটি লঘুচাপ বর্তমানে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। তবে তেঁতুলিয়ায় বৃষ্টিপাত না হলেও লঘুচাপটি কেটে গেলে এই এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দার দেয়া তথ্য মতে, প্রতি বছরই পঞ্চগড়ে এমন শীতের তীব্রতা দেখা দেয়। সেটা একটানা কয়েকদিন থাকে। তারপর আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। তারা আশা করছেন, আগামী ১০ দিনের মাথায় শীতের তীব্রতা কিছুটা কমে আসবে।
আরও পড়ুন: রাজধানীর নয়া পল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে নিহত ১ জন