ডা. নীলকমল বর্মণ একজন স্বনামধন্য হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার ছিলেন। তিনি হোমিওপ্যাথির স্বার্থে পুরো জীবনটাই পার করেছেন।
তিনি রোগীদের খুব যত্ন করে চিকিৎসা করতেন। হোমিওপ্যাথির প্রকৃত বিধান তিনি সবসময়ই মেনে চলতেন। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি ডা. নীলকমল বর্মণ এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাবিষয়ক মূল আলোচনায়।
অস্টিলাগো: ঋতুস্রাবের পূর্বে স্তনে ব্যথা হলে অস্টিলাগো ২০০ শক্তি বেশ উপকারী।
আর্জেন্ট নাইট: অম্লশূল রোগে আজেন্ট নাইট ৩০ শক্তি অদ্বিতীয়।
আর্জেন্ট নাইট: উঁচু ফ্ল্যাট বাড়ির পাশ দিয়ে হাঁটার সময় মাথা ঘোরালে আর্জেন্ট নাইট ২০০ শক্তি উপযোগী।
আর্সেনিক আয়োড: অতিরিক্ত হাঁচিতে আর্সেনিক এল্ব প্রয়োগে রোগী আরোগ্য লাভ না করলে আর্সেনিক আয়োড ৩০ শক্তি উত্তম ফল দেয়।
আর্সেনিক এল্ব: প্রচুর জল পিপাসা স্বত্তেও অল্প অল্প জল পান করে এবং জল পান করা মাত্রই বমি করে এমন লক্ষণে আর্সেনিক এল্ব ভালো ফল দেয়।
আর্সেনিক এল্ব: আর্সেনিক এল্ব যে কোন ধরণের হাঁপানি কমিয়ে দিতে পারে।
ইস্কুলাস হিপ: অর্শ্বের সাথে কোমরে ব্যথা হলে ইস্কুলাস হিপ বেশ উপকারী।
ইস্কুলাস হিপ: কোষ্ঠবদ্ধতার সাথে কোমরে ব্যথা থাকলে ইস্কুলাস হিপ বেশ ভালো কাজ করে।
এবিস নায়াগ্রা: অনিয়মিত ঋতুস্রাব, বিশেষ করে ২/৩ মাস অন্তর ঋতুস্রাব আবার অকারণে ২/৩ মাস ঋতু স্রাব বন্ধের ইতিহাস থাকলে এবিস নায়াগ্রা দিনে ২ বার করে দিলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়।
এমোন কার্ব: সকালে ঘুম ভাঙার পরে মাথা ঘুরালে এমোন কার্ব ২০০ শক্তি সর্বোত্তম।
এমোন কার্ব: বুক ভরা সর্দি, শ্বাসকষ্ট, কোন অবস্থাতেই শান্তি পাচ্ছে না এমন অবস্থায় এমোন কার্ব ৩০ শক্তি প্রতি ২ ঘন্টা অন্তর সেবন করালে নিশ্চিত উপকার দর্শে।
ওষুধের মাত্রা নির্বাচন প্রসঙ্গে: তরুণ রোগ, পুরানো রোগ, মায়াজম, রোগীর বয়স, চরিত্র, ওষুধের উৎস, রোগের কারণ ইত্যাদি বিষয় মেনে ওষুধের মাত্রা নির্বাচন করা হয়।
ওষুধের মাত্রা প্রসঙ্গে: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় মাত্রার ব্যাপারটি অনেকটা টেইলার্স মাস্টারের মতো। এখানে রেডিমেড জিনিসের কোনো স্থান নেই।
মাপ নিয়ে খেটেখুটে প্রতিটি মানুষের জন্য তার মাপের তৈরি জামা যেমন তৈরি করে দিতে হয়ে, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ক্ষেত্রেও তেমনটি করতে হয়।
অর্থাৎ কত শক্তির ওষুধ কত ফোঁটা দিয়ে কয়টা মাত্রা কতক্ষণ পরপর সেবন করতে হবে, তা হোমিওপ্যাথির নিজস্ব স্টাইল।
ককুলাস ইন্ডিকা: মাথা ঘোরা রোগে অতি সাধারন অথচ গুরুত্বপূর্ণ ওষুধটি হলো ককুলাস ইন্ডিকা যা ৩০ শক্তিতে খুব ভালো ফল দেয়।
কলিনসোনিয়া: অর্শ্ব থেকে প্রচুর ও ক্রমাগত রক্তস্রাব হয়ে থাকে লক্ষণে কলিনসোনিয়া বিশেষ ফলপ্রদ।
কলোসিন্থ: যেকোন ধরণের রক্ত আমাশয় রোগে যদি পেট ব্যথা থাকে তবে কলোসিন্থ ২০০ শক্তি প্রয়োগ করলে ব্যথা দ্রুত কমে যায়।
কার্বোভেজ: বেশি খাবার পর রাতে বদহজম হয়ে উপর পেটে বায়ু জমলে কার্বোভেজ ৩০ শক্তি দিতে হয়।
ক্যালক্যারিয়া কার্ব: নাক, কান, গলা ও মহিলাদের জরায়ুর টিউমারে ক্যালক্যারিয়া কার্ব ২০০ শক্তি উপকারী। পরে প্রয়োজন অনুযায়ী ১০০০ শক্তি বা ১০০০০০ শক্তি মাসে ১ মাত্রা খেতে দিতে হবে।
ক্যালক্যারিয়া কার্ব: শিশুদের বিলম্বে কথা বলার ক্ষেত্রে ক্যালক্যারিয়া কার্ব ৫০ এম সর্বোত্তম ওষুধ। এটি দু’মাস অন্তর ১ মাত্রা করে প্রয়োগ করতে হয়।
ক্যালি আয়োড: অতিরিক্ত হাঁচিতে ক্যালি আয়োড সর্বাপেক্ষা ভালো ওষুধ।
ক্যালি কার্ব: ভোর রাতে হাঁপানির কষ্ট বৃদ্ধি পেলে ক্যালি কার্ব ৩০ শক্তির কথা অবশ্যই ভাবতে হবে।
কোনিয়াম: যেকোন টিউমার বা অর্বুদ যদি পাথরের মতো শক্ত হয়, তবে কোনিয়াম ২০০ শক্তি অবশ্যই দিতে হবে। তবে অবশ্যই পরে ১০০০ শক্তি দিতে হবে।
ক্লোরাম: স্মৃতিশক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ করে নিজের নাম পর্যন্ত ভুলে যায় লক্ষণে ক্লোরাম ৩০ শক্তি দিনে ২ বার করে এক সপ্তাহ প্রয়োগ করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
চায়না: শাকসবজি, ফলমূল খেয়ে বদহজম হলে চায়না ৩০ শক্তি ভালো ফল দেয়।
ডেমিয়ানা: কুমারী মেয়েদের ঋতুস্রাবকে স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে ডেমিয়ানা মূলারিষ্ট খুবই উপকারী।
নাক্স ভম: বামদিকের হার্নিয়ার ক্ষেত্রে নাক্স ভম ২০০ শক্তির কোনো বিকল্প নেই। অনেক ক্ষেত্রে ১০০০ শক্তিরও প্রয়োজন পড়ে। তিন বা চারদিন অন্তর ১ মাত্রা করে সেবন করতে হয়।
নাক্স ভম: খুব মশলাজাতীয় খাদ্যগ্রহণ করার পর অন্ত্রপ্রদাহ হলে নাক্স ভম ৩০ শক্তি দুই ঘন্টা পর পর খেলে ভালো কাজ দেয়।
নেট্রাম মিউর: রোদ বৃদ্ধির সাথে মাথা ব্যথা শুরু হলে নেট্রাম মিউর ২০০ শক্তি অব্যর্থ।
নেট্রাম সালফ: মৃগীরোগের ক্ষেত্রে যদি মাথায় আঘাত লাগার ইতিহাস থাকে, তবে নেট্রাম সালফ ২০০ শক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রয়োজনে ১০০০ শক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
পালসেটিলা: চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে বদহজম হলে পালসেটিলা দিতে হবে।
পালসেটিলা: চোখে অঞ্জনিসহ রাতে চোখে পিঁচুটি হলে পালসেটিলা ২০০ শক্তি খুব ভালো কাজ করে।
ফলিকুলিনাম: ঋতুস্রাবের পূর্বে স্তনে ব্যথা থাকলে ফলিকুলিনাম ৩০ শক্তি অব্যর্থ।
ফেরাম পিক্রেটা: পায়ে কড়া পড়লে ফেরাম পিক্রেটা ২০০ শক্তি প্রতিদিন ১ মাত্রা করে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ব্যারাইটা কার্ব: ছোট বেলা থেকেই যারা প্রকৃতই বোকা ব্যারাইটা কার্ব ২০০ শক্তি তাদের জন্য উপযুক্ত ওষুধ। পরবর্তীকালে প্রয়োজনে ১০০০ শক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রতি সপ্তাহে ১ মাত্রা করে প্রয়োগ করা যায়।
ব্রায়োনিয়া: হঠাৎ করে দাঁড়ালে যদি মাথা ঘোরায় তবে ব্রায়োনিয়া ২০০ শক্তি অত্যন্ত উপকারী।
বেলেডোনা: পেটের অন্ত্রের যাবতীয় প্রদাহে বেলেডোনা ৩০ শক্তি অতি উত্তম।
মাইরিস্টিকা: হেপাটাইটিস-বি এবং হেপাটাইটিস-সি এর ক্ষেত্রে মাইরিস্টিকা এস বা কার্ডুয়াস এর মূলারিষ্ট ১০ ফোঁটা করে দিনে তিন বার সেবন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
মার্ক সল: মোটা বোঁটাযুক্ত আঁচিলে মার্ক সল ১ এম ১৫ দিন অন্তর ১ মাত্রা খেতে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
লাইকোপোডিয়াম: ডানদিকের হার্নিয়ায় লাইকোপোডিয়াম ২০০ শক্তি প্রতিদিন সকালে ১ মাত্রা করে সেবন করলে অব্যর্থ ফল পাওয়া যায়।
লাইকোপোডিয়াম: নিয়মিত মাথার ডানদিকে ব্যথা হলে লাইকোপোডিয়াম ২০০ শক্তির কথা ভাবতে হবে।
ল্যাপিস এলবাস: দেহের যেকোন স্থানে থলথলে মাংসবৎ অর্বুদ সারাতে ল্যাপিস এলবাস ২০০ শক্তি সপ্তাহে ২ দিনে সেবন করতে দিতে হবে।
লোবেলিয়া: যেকোন ধরণের শ্বাসকষ্টে লোবেলিয়া মূলারিষ্ট ১০ ফোঁটা করে দিনে তিন বা চার বার প্রয়োগ করলে খুব ভালো কাজ করে।
স্ট্যাফিসেগ্রিয়া: কোনো ব্যক্তির বার বার অঞ্জনি হলে অবশ্যই স্ট্যাফিসেগ্রিয়া দিয়ে চিকিৎসার কাজ শুরু করতে হবে।
স্ট্যাফিসেগ্রিয়া: সরু বোঁটাওয়ালা আঁচিলে স্ট্যাফিসেগ্রিয়া ২০০ শক্তি বেশ উপকারী।
স্ট্যাফিসেগ্রিয়া: স্কুল পড়ুয়া ছাত্রদের স্বপ্নদোষ বা শুক্রস্খলন যদি হয় তবে স্ট্যাফিসেগ্রিয়া ২০০ শক্তি খুব কাজ করে।
স্যালিক্স নায়াগ্রা: মলত্যাগের সময় কোঁথ দিলে যদি শুক্রস্খলন হয় তবে স্যালিক্স নায়াগ্রা ৩০ শক্তি দিনে ২ বার প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
স্ট্রেপটোকক্সিন: যেকোন ধরণের রক্ত আমাশয় রোগে স্ট্রেপটোকক্সিন ২০০ শক্তি চার মাত্রা করে প্রয়োগ করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
সিফিলিনাম: রোগ রোগ বাতিক থাকলে সিফিলিনাম ১ এম ভালো ফল দেয়। একইসাথে নাক্স ভম ২০০ শক্তি তিন দিন অন্তর ১ মাত্রা করে প্রয়োগ করতে হবে।
হিপার সালফ: অঞ্জনি পেকে পূঁজ হয়ে যদি অত্যন্ত ব্যথা হয় তবে হিপার সালফ ২০০ শক্তি দিনে ২ বার খেতে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
পরিশেষে বলা যায়, ডা. নীলকমল বর্মণ সবসময়ই রোগীর রোগ কিভাবে ভালো হয় সে ব্যাপারে চিন্তা করতেন। হোমিওপ্যাথির সর্বোচ্চটা উনি দেয়ার চেষ্টা করতেন।
এখানে যে চিকিৎসার কথাগুলো তুলে ধরা হয়েছে তা হোমিওপ্যাথিতে পড়াশোনা করছেন বর্তমানে এমন ছাত্রছাত্রী এবং প্রাকটিসরত ডাক্তার – উভয়ের জন্য খুবই কাজে দেবে।
তবে সাধারন পাঠকগণ যারা আছেন তারা অনুগ্রহ করে এখানে লক্ষণানুযায়ী যে চিকিৎসার (ডা. নীলকমল বর্মণ) কথা বলা হয়েছে তা সরাসরি প্রয়োগ করতে যাবেন না। তাহলে ক্ষতি হতে পারে।
অবশ্যই যেকোন সমস্যার ক্ষেত্রে নিকটস্থ অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন।
আরও পড়ুন: যৌনাঙ্গে চুলকানি হওয়ার কয়েকটি কারন ও প্রতিকার।