ডা. এস শওকত আলী একজন স্বনামধন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিষয়ক বই লিখেছেন।
ব্যক্তিজীবনে হোমিওপ্যাথির উন্নতি সাধণে তিনি বরাবরই চেষ্টা করেছেন। বহু জটিল রোগীকে রোগ থেকে মুক্ত করেছেন।
হোমিওপ্যাথির কখনো বিরুদ্ধাচরণ করেননি। আজ আমরা ডা. এস শওকত আলীর হোমিও চিকিৎসা বিষয়ক তথ্য জানবো।
ডা. এস শওকত আলী যেসব রোগের চিকিৎসা করে বার বার সফল হয়েছেন এমন কিছু রোগ ও সেগুলোতে প্রয়োগ করা ওষুধ সম্পর্কে জানবো। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
ডা. এস. শওকত আলী ও তার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:
আর্নিকা মন্ট: প্রায় দেড় বছর পূর্বে এক ব্যক্তির নাকের পাশে আঘাত লাগে এবং তা কয়েক দিনের মধ্যেই কোনো চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়।
এর ৫/৬ মাস পর থেকে হাত-মুখ ধোয়ার সময় তার নাক দিয়ে নিয়মিত রক্ত ঝরতে শুরু করে। আমি তাকে আর্নিকা মন্ট ২০০ শক্তি প্রয়োগ করলে সে পুরোপুরি সুস্থ হয়।
আর্নিকা মন্ট: একজন বয়স্ক ব্যক্তির চোখে আঘাত লাগার কারণে চোখের চার পাশের টিস্যুতে অত্যন্ত ব্যথা হয়, চোখ ফুলে ওঠে, চোখ হালকা নিল হয়ে যায়, চোখে ক্ষতকর এবং টাটানি ব্যথা হয়। মাঝে মধ্যে চোখ থেকে লাল রঙের পুঁজ বের হয়।
এসব লক্ষণ আমি তাকে আর্নিকা মন্ট ওষুধের মূল আরক লোশন করে লাগাতে দিলে এবং আর্নিকা মন্ট ওষুধ ৩০ শক্তি খাওয়ালে সে পুরোপুরি ভালো হয়।
আর্সেনিক এল্ব: আর্সেনিক এল্বের জ্বরে, জিহ্বা শুষ্ক, লালবর্ণ, ফাটা কিংবা কালো বর্ণের দৃষ্ট হয়। আবার আর্সেনিক এল্ব সাধারণত জ্বরে বর্ধিত অবস্থাতেই প্রয়োজন হয়, কিন্তু এর চরিত্রগত লক্ষণের সমাবেশ না থাকলে এই ওষুধ কখনও প্রয়োগ করা উচিত নয়।
ইস্কুলাস হিপ: যেসব ব্যক্তির অর্শপীড়া রয়েছে এবং সর্দির ধাতু এবং যারা প্রায়ই পাকাশয়ের গোলযোগে ভোগে, সবসময় বিমর্ষ থাকে এবং সহজেই জেদ পরায়ণ হয়, তাদের ক্ষেত্রে ইস্কুলাস হিপ উপকারী।
একটিয়া রেসিমোসা: একটিয়া রেসিমোসা রসবাত রোগের একটি প্রধান ওষুধ। দুই পায়ের ডিমে বা শরীরের সমস্ত পেশির বাত বেদনা, আক্রান্ত পেশি আড়ষ্ট, অসাড় ও সঙ্কুচিত ভাব বোধ, কাঁধে, ঘাড়ে, কোমরে, পিঠে ও পাঁজরের মধ্যে বেদনা এবং বিশেষত তা কোনো প্রকার জরায়ু পীড়া সংশ্লিষ্ট হলে একটিয়া রেসিমোসা অধিকতর উপকারী।
একটিয়া রেসিমোসা: প্রসবের পর স্রাব বন্ধ হয়ে বা অন্য কোনো কারণে মাথা ব্যথা, বিকার, প্রলাপ বকা, চিৎকার, ভূতের ভয় ইত্যাদি নানাবিধ উপসর্গ প্রকাশ পেলে একটিয়া রেসিমোসা উপকারী।
একোনাইট: কোনো কারণে হঠাৎ ভয় পেয়ে রজঃবোধ ও সেকারণে হৃৎকম্প, অজ্ঞান, মূর্ছা যাওয়া, শ্বাসকৃচ্ছ্রতা ও প্রানের ব্যাকুলতা ইত্যাদি লক্ষণ উপস্থিত হলে একোনাইট বিশেষ উপকারী।
একোনাইট: সোরা, সাইকোসিস ধাতুবিশিষ্ট রোগীদেহে প্রমেহ পীড়ায় একোনাইট প্রকৃত ওষুধ নয়। কিন্তু প্রদাহের প্রথমাবস্থায় যখন ঘন ঘন প্রসাবের বেগ সহ অল্প অল্প প্রসাব হয়, জ্বালযুক্ত প্রসাব হয়, প্রসাব গরম থাকে ও প্রমেহ স্রাব নিঃসরণ হয়।
উপরোক্ত লক্ষণের সাথে জ্বর, পিপাসা, অন্তর্দাহ, অস্থিরতা ইত্যাদি লক্ষণ এসে পড়ে তখন একোনাইট নিম্নক্রম ঘন ঘন প্রয়োগ করা হয়। পরে লক্ষণ বিশেষ এন্টিসোরিক, এন্টিসাইকোটিক প্রভৃতি ওষুধের প্রয়োজন হয়।
এলো সকোট্রিনা: এলো সকোট্রিনা ক্ষেত্রে ‘আইলো আর গেলো’ এই কথাটি সবসময় স্মরণ রাখা উচিত। কারণ বাহ্যের বেড় পাওয়া বাহ্য হয়ে পড়ে, তা যে কেবল পাতলা বাহ্য হলেও হয় তা নয়, শক্ত বাহ্যের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোগ্য।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসাড়ে বাহ্য হয়, কখন যে বাহ্য হয় তা অনেক সময় রোগী নিজেই জানতে বা টের পায় না।
পরিশেষে বলা যায়, ডা. এস শওকত আলী ডাক্তার হিসেবে শুধু নয় – মানুষ হিসেবেও অনন্য ছিলেন। আপনারা যারা বর্তমানে হোমিওপ্যাথি প্রাকটিস করছেন কিংবা পড়াশোনা করছেন তাদের জন্য উপরের তথ্যগুলো খুবই কাজের।
তবে সাধারন পাঠক যারা আছেন তারা কখনো শুধুমাত্র একটি লক্ষণের উপর ভিত্তি করে এখানে উল্লেখিত ওষুধগুলো প্রয়োগ করতে যাবেন না। এতে রোগীর ক্ষতি হতে পারে।
যেকোন রোগের ক্ষেত্রে আপনার নিকটস্থ অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সবসময় ভালো থাকুন।
আরও পড়ুন: হোমিও চিকিৎসা শিখুন – পরিবারের চিকিৎসার খরচ কমান।