ডা. আব্দুল কাদের শেখ একজন বাংলাদেশী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। তিনি হোমিওপ্যাথির প্রতি খুব শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি আজীবন হোমিওপ্যাথির স্বার্থে কাজ করে গেছেন।
ডা. আব্দুল কাদের শেখ কখনো হোমিওপ্যাথির বিরুদ্ধাচরণ করেননি। বরং তিনি হোমিওপ্যাথির উন্নতি কল্পে সর্বদাই চেষ্টা করেছেন।
আজ আমরা তার চিকিৎসা জীবনের সামান্য অভিজ্ঞতার কথা জানবো। ডা. আব্দুল কাদের শেখ কোন অসুখের কোন লক্ষণে কি ওষুধ কতোটা মাত্রায় প্রয়োগ করে সফল হয়েছেন সেই ব্যাপারে কিছু তথ্য জানবো।
যারা বর্তমানে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হিসেবে প্রাকটিস করছেন কিংবা যারা ছাত্রছাত্রী তাদের অবশ্যই কাজে লাগবে। আর যারা সাধারন পাঠক আছেন তারা অনুগ্রহ করে কেবল একটি লক্ষণের উপর ভিত্তি করে কখনোই ওষুধ সেবন করতে যাবেন না।
কারণ, এতে ক্ষতি হতে পারে। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি ডা. আব্দুল কাদের শেখ এর হোমিওপ্যাথি বিষয়ক মর্মবানীতে।
ডা. আবদুল কাদের শেখ এর হোমিওপ্যাথি মর্মবানী:
উচ্চশক্তির ওষুধ ব্যবহার: হৃৎপিন্ড, ফুসফুস, বৃক্ক ইত্যাদির ক্ষয় বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এমন ক্ষেত্রে ওষুধের সর্বপ্রকার প্রয়োগ লক্ষণ মিলে গেলেও ১এম বা উচ্চশক্তির ওষুধ প্রথমে ব্যবহার করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে উচ্চশক্তির ওষুধ প্রয়োগে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এন্টিডোট প্রয়োগ: হঠকারী করে একবার ওষুধ প্রয়োগ করে আবার তার এন্টিডোট প্রয়োগ করা আবার এন্টিডোট ওষুধ প্রয়োগের পর তৎক্ষণাৎ নির্বাচিত ওষুধটি প্রয়োগ করা, এমন যাতে করা না হয়।
এন্টিসোরিক ওষুধ প্রয়োগ: চিররোগে যেখানে তিনটি মায়াজমে মিশ্রিত লক্ষণ থাকে, সুস্পষ্ট কোনো একটি মায়াজমের লক্ষণ না পাওয়া যাবে , সেখানে প্রথমে এন্টিসোরিক মেডিসিন প্রয়োগ করা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত।
এন্টিসোরিক ওষুধের প্রয়োগ: প্রধান এন্টিসোরিক ওষুধগুলো পুরাতন ও চিররোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সকালেই প্রয়োগ বিধেয়। এসব ওষুধ যখন তখন প্রয়োগে কুফল হয়।
তরুণ রোগে ওষুধের ব্যবহার: তরুণ রোগের প্রবল উচ্ছাসে ওষুধের নিম্নশক্তি ব্যবহৃত হবে। আবার পুরাতন বা জটিল রোগের কোনো লক্ষণ যদি তরুণ রোগের মত কষ্টের আধিক্য ও অভিব্যক্তি বা যন্ত্রণা ও ব্যথাবেদনাসমূহে আড়ষ্টতা বা চনচনেভাব বর্তমানে থাকে।
অথবা প্রস্রাবের জ্বালায় অস্থির হয়ে যাওয়া, পেটের যন্ত্রনায় কাতর হয়ে যাওয়া, পায়ের যন্ত্রনায় দড়ি দিয়ে বাঁধতে থাকা ইত্যাদিতে নিম্ন বা মধ্যশক্তির ওষুধ যথা ৩০ বা ২০০ ব্যবহার করা যাবে।
সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে তরুণ রোগে উচ্চশক্তির ওষুধ ব্যবহার করা অবিধেয় ও বিপজ্জনক। এমনকি তরুণ আমাশয় বা উদরাময়ে নাক্স ভম ২০০ শক্তি ব্যবহার বিপজ্জনক।
নাক্স ভম: নাক্স ভম নন মায়াজমেটিক ওষুধ হওয়া সত্ত্বেও তা সকালের প্রথমদিকে প্রয়োগ না করাই সঙ্গত। তবে পায়খানা পেটব্যথা বা বমির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সকালে প্রয়োগ করা যায়।
তরুণ রোগে এন্টিসোরিক ওষুধের ব্যবহার: তরুণ রোগে এন্টিসোরিক ওষুধের যখন হখন ব্যবহার তেমন ক্ষতিকর হয় না।
ওষুধ প্রয়োগের সময়: রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধ নির্বাচিত হলেও কোনো ওষুধই তার বৃদ্ধিকালের মধ্যে প্রয়োগ বা সেবন করানো উচিত নয়।
মায়াজম প্রসঙ্গে: মায়াজমকে চিনতে ও জানতে হলে সিম্পটমস বা লক্ষণের সাহায্যেই জানতে হয়। সিম্পটমস হলো মায়াজমের বহির্প্রকাশ। প্রভেদটা হলো মায়াজম নিজ সত্ত্বায় বিরাজিত থেকে অবিচ্ছেদ্যভাবে জীবনীশক্তি মন ও দেহের সাথে চিরস্থায়ীভাবে সংযুক্ত থেকে লক্ষণসমূহের প্রকাশ ঘটিয়ে থাকে।
একমাত্র লক্ষণানুযায়ী এন্টিমায়াজমেটিক ওষুধ প্রয়োগ ব্যতীত তাকে উচ্ছেদ করা যায় না এবং রোগী স্থায়ী আরোগ্য লাভ করতে পারে না।
আর মায়াজমবিহীন লক্ষণসমূহ হলো, এটি একটি কেবল শারীরিক অনুভূতিশীল অস্থায়ী কষ্টকর শক্তিবিশেষ, যা আবহাওয়া কারণে, পরিবেশের কারণে, অনিয়ম আহারে-বিহারে সৃষ্ট হয় এবং সুস্থ জীবনীশক্তি তাকে আরোগ্য করতে পারে, বা সাধারণ শক্তিশালী যে কোনো প্যাথির ওষুধের সাহায্যে তা দূরীভূত হতে পারে।
স্বল্প ক্রিয়াশীল ওষুধের ব্যবহার: দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, স্বল্প ক্রিয়াশীল ওষুধ দিয়ে মৃত্যুন্মুখ ব্যক্তি অধিকতর সুস্থ হয়ে বেশ কিছুদিন বেঁচে থেকে প্রায় সুস্থ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে পরে মৃত্যু হয়েছে।
হোমিওপ্যাথিক প্রসঙ্গে: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি যেন প্রকৃতির নিজস্ব এক দান, এর নিয়মবিধি প্রাকৃতিক নিয়মের (Law of Nature) উপর প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং পূর্ণিমা বা অমাবস্যা বা সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ যেগুলো প্রকৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা যার প্রভাব পৃথিবীর উপর পরিলক্ষত হয়, সেগুলোর বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন।
পরিশেষে বলা যায়, হোমিওপ্যাথি এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে রোগের চিকিৎসা করা হয় না, রোগীর চিকিৎসা করা হয়। তাই যেকোন সমস্যায় নিকটস্থ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সুস্থ্য থাকুন। মনে রাখবেন, হোমিওপ্যাথি অ্যালোপ্যাথির তুলনায় অনেকটা নিরাপদ অর্থাৎ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাই বললেই চলে।
আরও পড়ুন: ডা. কেস হোমিও চিকিৎসা নিয়ে যেসব অভিজ্ঞতা রেখে গেছেন।