ডায়াবেটিস মেলাইটাস:
পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ ডায়াবেটিস মেলাইটাস রোগে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস মেলাইটাস এর অর্থ হলো রক্তে সুগার (চিনি) এর মাত্রা বেশি হয়ে যাওয়া। ইনসুলিনের অভাবে এই রোগ হয়।
অগ্নাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গার হ্যানস নামক স্থানের বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন হরমোন নিঃসৃত হয়। রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মান ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ করে।
আর তাই ইনসুলিনের অভাব ঘটলে শরীরের রক্তের মধ্যে ধীরে ধীরে ব্লাড সুগার বাড়তে থাকে। নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করার পর মূত্রের সঙ্গে ক্রমাগত রক্তের অতিরিক্ত চিনি (গ্লুকোজ) বেরিয়ে যেতে থাকে। ফলে বার বার প্রস্রাব হতে থাকে বেশিরভাগ সময়ই এবং দেহ ক্রমশঃ দূর্বল হতে থাকে।
ডায়াবেটিস মেলাইটাস রোগের লক্ষণ:
এই রোগের শুরুতে বারবার এবং বেশী করে প্রস্রাব হয়। প্রস্রাবের সময় মূত্রদ্বারে জ্বালা করতে পারে। প্রায় সময়ই পানি পিপাসা বেড়ে যায়। দেহের বিভিন্ন স্থানে চুলকানি দেখা দিতে পারে। মেয়েদের লিউকোরিয়া হয়ে থাকে।
বেশিরভাগ সময় রোগীর চামড়া শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। রোগী খিটখিটে স্বভাবের হয়ে যায়, রাগ বেড়ে যায়। সামান্য কারণে উত্তেজিত হয়ে যায়। চোখের দৃষ্টিশক্তি আস্তে আস্তে কমে যেতে শুরু করে।
আরও দেখা গেছে যে, উচ্চ রক্তচাপ শুরু হয়, মাথার চুল পড়ে যায়। এছাড়াও প্রবল ক্ষুধা লাগা ও তৃষ্ণা পাওয়া, বারবার প্রস্রাবের চাপ আসা কিংবা প্রস্রাব হওয়া, শরীর শীর্ণাকৃতির হয়ে যাওয়াসহ প্রভৃতি এই রোগের লক্ষণ।
যেসব পরীক্ষা করতে হবে:
সাধারণত প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমেই এই রোগ শনাক্ত করা হয়। তবে বর্তমানে প্রস্রাবের সাথে সাথে রক্তও পরীক্ষা করতে হয়। শুধুমাত্র রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেও এই রোগ শনাক্ত করা যায়।
আরও পড়ুন: বায়োক্যামিক চিকিৎসার ইতিহাস ও চিকিৎসা পদ্ধতি জানুন।
চিকিৎসা:
এখানে চার প্রকার চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি চিকিৎসাই সময়সাপেক্ষ। আপনি ধৈর্য্য সহকারে যদি ওষুধ সেবন করতে পারেন তবে আশা করা যায় সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা ৯০%। এখানে এমন সব ওষুধের কথা বলা হয়েছে যা খুবই সহজলভ্য এবং আপনার পরিবেশের আশেপাশেই এগুলো পাবেন।
আর এই ওষুধগুলো শারিরীক ক্ষেত্রে তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। আপনি নিশ্চিন্তে সেবন করতে পারেন। সহজ কথায়, তেমন কোনো সাইড ইফেক্ট নাই।
- দু’বেলা খাবারের সঙ্গে (সকালে ও রাতে) ১টি করে ১ কোয়া রসুন চিবিয়ে খেতে হবে ৪৫ দিন।
- কাঁচা আম পাতা শুকিয়ে গুড়ো করে ৫ গ্রাম এর মতো এবং কালো জামের বিচি শুকিয়ে গুঁড়ো করে ২ গ্রাম নিয়ে একত্রে মিশিয়ে রোজ খেতে হবে দিনে দু’বার অন্তত ৪৫ দিন।
- কালোজিরা ভর্তা দিয়ে নিয়মিত ভাত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়।
- এছাড়াও কালোজামের বিচি গুঁড়ো করে ১ চামচ পরিমাণ খেতে হবে দিনে ২ বার ১ মাস।
পথ্য:
ভাত না খেতে পারলে সবচেয়ে ভাল । না পারলে এক বেলা ভাত, এক বেলা রুটি । মিষ্টি দ্রব্য ও মাটির নিচের জিনিস খাওয়া নিষেধ ।
ডায়াবেটিস রোগীদের অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। নিয়ম মেনে চললে দ্রুত সুস্থ্য হওয়া যায় এবং ভালো থাকা যায়। সাধারণত ভাত না খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। রুটি খাওয়ার কথা বলা হয়। তবে ভাত খেয়ে না থাকতে পারলে ১ বেলা ভাত ও ১ বেলা রুটি খাওয়া যেতে পারে।
সাধারণত সকালে কোনো হালকা নাস্তা এবং দুপুরে সামান্য ভাত ও রাতে রুটি খাওয়াটাই ভালো। এভাবে বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকর্মীই রোগীদের পরামর্শ দিয়ে থাকে। মিষ্টি দ্রব্য বেশি পরিমাণে না খাওয়া এবং মাটির নিচের জিনিস না খাওয়া ভালো।
ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে হাটা-চলা করতে হবে। সকালে ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত সালাত আদায় করতে হবে। আশা করা যায়, এসব কিছু মেনে চললে একজন ডায়াবেটিস রোগী অনেক ভালোভাবে তার সময়টা কাটাতে পারবেন এবং ভালো থাকবেন।