ডাক্তার এর চেম্বারে একজন রোগী যেকোন রোগ নিয়েই যায়। ডাক্তার মহোদয় রোগীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করার মাধ্যমে রোগীর ভেতরের অনেক কথা বের করে।
রোগীর কথা বলার মধ্য থেকেও অনেক কিছুর সন্ধান পেয়ে যান ডাক্তার সাহেব। আর ডাক্তার সাহেব যখন রোগীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন তখন রোগীও আনন্দিত হন। কারণ, রোগী ভাবেন, ডাক্তার সাহেব তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
প্রকৃত অর্থে, একজন ডাক্তারের অবশ্যই উচিত তার চেম্বারে যাওয়া রোগীকে যত্নের সাথে চিকিৎসা সেবা দেওয়া। অনেক রোগী আছে যারা ডাক্তারের আচরণে সন্তুষ্ট হয়েই অর্ধেক সুস্থ্য হয়ে যান।
ডাক্তার পৌষ্টিক তন্ত্রের রোগের জন্য যেসব প্রশ্ন করেন:
১. যন্ত্রণা: যন্ত্রণা কোন অংশে হয়? সবসময় হয় কিনা? যদি না হয় তাহলে কখন বেশি হয় এবং কখন কম হয়? খাবার গ্রহণের সহিত যন্ত্রণার কোন সম্পর্ক আছে কিনা?
২. ক্ষুধা: ক্ষুধা ভালো হয় কিনা? ক্ষুদা থাকলেও খেতে ভীতি সঞ্চার হয় কিনা?
৩. বমি: বমি কি পরিমাণ হয়? যন্ত্রণার সহিত বমির কোন সম্পর্ক আছে কিনা? বমি হলে যন্ত্রণা বাড়ে না কমে? বমিতে বুকে বা পেটে কোর সম্পর্ক আছে কিনা? বমির স্বাদ কেমন? বমির রং কেমন?
৪. পেটফাঁপা: বায়ু উপরের দিকে উঠে না সরে? বায়ু নড়াচড়ার ফলে অস্বস্থি কর লাগে কিনা?
৫. মুখে পানি নিঃসরণ: মুখে পানি নিসৃত হয় কিনা? যদি হয় তার স্বাদ কেমন?
৬. ঢোক গিলতে কষ্ট: খাবার গিলতে কোন কষ্ট হয় কিনা যদি হয় তা তরল না কঠিন খাবারের ক্ষেত্রে হয়?
৭. পায়খানা: সারাদিন কতবার পায়খানা হয়? প্রত্যহ পায়খানা হয় কিনা? পায়খানার রং কেমন? মলত্যাগকালীন কোন যন্ত্রণা অনুভূত হয় কিনা?
৮. লিভার: লিভারের স্থানে কোন ব্যথা বা যন্ত্রণা অনুভূত হয় কিনা? প্রস্রাব হরিদ্রাভ হয় কিনা?
ডাক্তার শ্বাস যন্ত্রের রোগের জন্য যেসব প্রশ্ন করেন:
১. সর্দি: সর্দি কতদিন যাবৎ আক্রমণ করেছে? সর্দি তরল না ঘন? নাকের অথবা মাথার যন্ত্রণা আছে কিনা? গলায় কুটকুটানি ভাব আছে কিনা?
২. কাশি: কাশি শুষ্ক অথবা আদ্র কোনটা? কোন সময়ে কাশি বৃদ্ধি পায়? কাশিতে কোথায় ব্যথা অনুভব করে? কাশি ঠান্ডা অথবা গরম কখন বৃদ্ধি হয়।
৩. শ্লেষ্মা: শ্লেষ্মা ভালোভাবে নির্গত হয় কিনা? এটা কি পরিমাণে নির্গত হয়? শ্লেষ্মার রং কি? শ্লেষ্মা গাঢ় না তরল? কোন গন্ধ আছে কিনা?
৪. শ্বাসকষ্ট: কখন হয়? শুয়ে থাকলে অথবা কর্মরত অবস্থায় কখন বৃদ্ধি পায়? কাশির পর শ্বাসকষ্ট কমে না বৃদ্ধি পায়? শ্বাসকষ্ট ঠান্ডা অথবা গরম কখন বৃদ্ধি পায়? বুকে কোন যন্ত্রণা অনুভূত হয় কিনা? গলা বা বুকে সাঁই শব্দ হয় কিনা?
৫. বুকের যন্ত্রণা: যন্ত্রণা হঠাৎ আনম্ভ গয়েছে কিনা? কাশিল পর বৃদ্ধি পায় কিনা? শ্লেষ্মা নির্গত হলে কমে কিনা? কোন অংশে বেশি যন্ত্রণা অনুভুত হয়?
প্রস্রাবের পীড়ায় যেসব প্রশ্ন করেন:
১. প্রস্রাবের পরিমাণ কেমন? রাত্রে প্রস্রাব হয় কিনা? প্রস্রাবের রং কেমন এবং তা পরিবর্তনশীল কিনা? প্রস্রাব বাহির হবার সময় তা স্বচ্ছ না অস্বচ্ছ দেখায়?
প্রস্রাব সাদাটে রং হয় কিনা? প্রস্রাব খুব বেশি হয় কিনা? প্রস্রাব ত্যাগের সময় কোন জ্বালা অনুভূত হয় কিনা? প্রস্রাবে কোন রক্ত বা পুঁজ নির্গত হয় কিনা? প্রস্রাবের সাথে কোন কঠিন পদার্থ নির্গত হতে কোন সময় দেখা যায় কিনা?
চর্মরোগের ক্ষেত্রে যেসব প্রশ্ন করেন:
১. চর্মরোগটি কতদিন দেখা গেছে? পূর্বে অন্য কোন চর্মরোগ হয়ে সেরে গিয়েছে কিনা? বংশে অন্য কোন ব্যক্তির ঐ রোগ আছে কিনা? বা পূর্বে ছিল কিনা? শরীরে অন্যান্য কোন রোগ আছে কিনা?
রোগটি হঠাৎ দেখা দেয় না কোন পূর্ব লক্ষণ ছিল? রোগটির কোন বৃদ্ধি বা উপশম লক্ষ্য করা যায় কিনা? যদি হয় তার সাথ আবহাওয়া অথবা কোন খাবারের কোন সম্মন্ধ আছে কিনা?
রোগটির জন্য তার কোন পেশাগত কানণ জড়িত আছে কিনা? পূর্বে কোন চিকিৎসা হয়েছে কিনা? রোগটিতে কোন কষ্ট উপলব্ধি হয় কিনা? কোন জ্বালা বা চুলকানি বা যন্ত্রণা অনুভূত হয় কিনা? এছাড়া উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে আরও প্রশ্ন করা যায়।
পরিশেষে বলা যায়, কেবল প্রশ্ন করার মাধ্যমে একটি রোগ সম্বন্ধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়। কারণ, সব রোগের বহিঃপ্রকাশ কেবল শরীরের বাইরে হয় না।
এমন কিছু রোগ আছে যেসব রোগের জ্বালা-যন্ত্রণা কেবল একজন রোগী তার মুখেই প্রকাশ করতে পারে। যেমন, ব্যথার কথাই যদি বলি – এটা কি বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় আছে? কখনোই না।
রোগী তার মুখে শরীরের যে স্থানে ব্যথার কথা বলবে সেটাই সঠিক। চিকিৎসার সাফল্যের ক্ষেত্রে রোগীর মুখের উত্তরগুলো একজন ডাক্তারের সর্বোচ্চ কাজে লাগে।
তাই সম্মানিত ডাক্তার মহোদয়গণের উচিত, তাদের চেম্বারে যেসব রোগী আসে তাদের সাথে খুব সুন্দর আচরণ করা এবং বিভিন্ন প্রশ্ন করার মাধ্যমে রোগীর রোগের বিস্তারিত তথ্য জানা। কম কথার মাধ্যমে হয়তো কোনো কোনো সময় রোগের বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব হয় না।
আরও পড়ুন: যৌন রোগ কেন হয়? ভয়াবহ কয়েকটি যৌন রোগ সম্পর্কে জানুন।