টোটকা চিকিৎসা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই। যারা জানে তারা সময়ে সময়ে তা ঠিকই কাজে লাগায়। আর যারা জানে না তারা তো সামান্য বিষয় নিয়েই হাসপাতাল পর্যন্ত দৌড়ায়।
আজ আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু টোটকা চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করবো। টোটকা চিকিৎসার জন্য সাধারণত কোনো কিছু তেমনভাবে কেনার প্রয়োজন পড়ে না। যা দরকার পড়ে তা সাধারণত বাড়িতেই পাওয়া যায়।
টোটকা চিকিৎসাগুলোকে মূলত কবিরাজি চিকিৎসায় আওতায় ধরা হলেও এগুলো মূলত ভেষজ চিকিৎসার মধ্যে পড়ে। কারণ, বেশিরভাগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন গাছ-গাছালী। তো চলুন, মূল আলোচনা শুরু করি।
বিভিন্ন রোগের টোটকা চিকিৎসা:
১. ম্যালেরিয়া: চায়ের কাপের আধ কাপ শিউলি পাতার রস এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে হবে সকালে ও সন্ধ্যায় পর পর ১৫ দিন।
২. আমাশয়: একটি কাঁচা কলা বাকলা সহ ৩-৪ টুকরো করে দুই কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে রাত্রে। পরদিন সকালে খালি পেটে ঐ পানিটা খেতে হবে। ৭ দিনের আমাশয় হলে ১-২ দিন খেলেই ভালো হবে। পুরনো আমাশয় হলে ৫-৭ দিন খেতে হবে।
৩. অর্শ: একটা পানি পদ্ম পাতার অর্ধেকটা বেটে গরম ভাতের সঙ্গে খেলে অর্শের রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
৪. নালী ঘা: গাঁদাল পাতার রস আধকাপ করে খেতে হবে রোজ একবার করে। অন্তত ১ মাস খেতে হবে।
৫. বাত: বড় এলাচের গুঁড়ো আধা চামচ পরিমাণ মধুসহ খেতে হবে রোজ ১ বার করে অন্তত ১ মাস।
৬. আঘাত ও মচকা: পাকুড় গাচের শিকড়ের ছাপ বেটে গরম করে প্রলেপ দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে আরাম হয়।
৭. উচ্চ রক্তচাপ: কলা গাছের থোড়া থেতো করে আধা কাপ রস খেতে হবে রোজ একবার করে ১৫ দিন।
৮. পোড়া: পুরানো তেঁতুল ভালো করে পানিতে গুলে ঐ পানি লাগালে ফোস্কা পড়ে না এবং ঘা হয় না।
৯. ব্রণ: ১০ গ্রাম সাদা সরষে এবং ১০ মিলি গ্রাম কাঁচা দুধ একত্রে বেটে মুখে মেখে রাখতে অন্তত আধ ঘন্টা। এরপর ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে রোজ ১ বার করে ১৫ দিন মাখতে হবে।
১০. কোষ্ঠকাঠিন্য: এক গ্লাস গরম পানিতে বা গরম দুধে দুই চামচ ইষবগুলের ভুষি এবং সাথে ১ চা চামচ চিনি মিশিয়ে খেতে হবে রাত্রে শোবার আগে। রোজ খাবার দরকার নেই। তবে প্রয়োজন হলে খেতে হবে।
১১. ধাতু দূর্বলতায়: ৫০ গ্রাম মাসকলাই আধা লিটার পানিতে সিদ্ধ করে ২৫০ গ্রাম হলে নামিয়ে নিতে হবে। ঐ পানি ঠান্ডা হলে খেতে হবে রোজ সকালে টিফিনের পরে। একবার করে অন্তত ১ মাস।
১২. সাদা স্রাব: ২ চামচ দুর্বার রস আধা গ্লাস চাল ধোয়া পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে রোজ ১ বার করে সকালে টিফিনের পরে। ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে উপকার পাওয়া যাবে।
১৩. উঁকুন: ১টি মতিহার তামাক পাতার চার ভাগের এক ভাগ, আধা কাপ পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ঐ পানি মাথায় মাখতে হবে গোসলের আধ ঘন্টা আগে। পর পর তিন চার দিন ব্যবহার করলে আশাতীত ফল পাওয়া যাবে।
১৪. ডায়াবেটিস: কালোজামের বিচি গুড়ো করে ১ চামচ পরিমাণ খেতে হবে দিনে ২ বার করে ১ মাস। নয়নতারা পাতার রস ৪ চামচ করে দিনে ২ বার খেতে হবে অন্তত ১ মাস।
১৫. টিউমার: চালতা পাতা বেটে প্রলেপ দিলে টিউমার ভালো হয়। নিশিন্দা পাতা ও কচি কদমছাল চন্দনের মত বেটে গরম করে প্রলেপ দিলে টিউমার ভালো হয়। পরপর কয়েকদিন দিতে হবে।
আরও পড়ুন: এলার্জি কেন হয়? প্রতিকার জেনে নিন।
পরিশেষে বলা যায়, আপনি টোটকা চিকিৎসাগুলোর উপর পুরোপুুরি কখনোই নির্ভর করবেন না। কারণ, এই আধুনিক যুগে টোটকা চিকিৎসার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা সম্পূর্ণ বোকামী।
তাই উপরোক্ত সমস্যাগুলোর কোনটি যদি আপনার হয় কিংবা পরিবারের হয় তবে সাময়িক সময়ের জন্য সেগুলো প্রয়োগ করতে পারেন। অবস্থার উন্নতি হলে চালিয়ে যান আর যদি অপরিবর্তিত বা খারাপ দিকে যায় তবে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা নিতে ভুলবেন না যেন।
সূত্র: আদি ও আসল গাছ-গাছড়া ও লতা-পাতার হাজারগুণ রোগ মুক্তি মুক্তি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নামক বই।