টেনশন রোগ:
টেনশন শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। অল্প টেনশন স্বাভাবিক কিন্তু বেশি হলেই রোগ । বেশি টেনশনের কারণে শরীরে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।
এই রোগ ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সের মানুষের মধ্যে বেশি হয় । মেয়েদের মধ্যে বেশি লক্ষ করা যায় । মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫ ভাগ লোক এ রোগে ভুগে থাকে।
টেনশন রোগের বিভিন্ন উপসর্গ:
১. সর্বদা উৎকণ্ঠায় থাকা;
২. যে কোনো বিপদের ভয় করা;
৩. ভীতিকর অনুমান;
৪. বিরক্তি ভাব;
৫. অল্প শব্দে বিরক্তিভাব আসা;
৬. অস্থিরতা;
৭. মনোযোগের অভাব;
৮. ভীতিমূলক চিন্তা-ভাবনা করা;
৯. মুখ শুকনো লাগা;
১০. ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া;
১১. উপরের পেটে অসুবিধা দেখা দেওয়া;
১২. পেটে গ্যাস;
১৩. ঘন ঘন পাতলা পায়খানা;
১৪. বুক চেপে আসা কষ্ট হওয়া এবং ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া;
১৫. বুক ধড়ফড় করা;
১৬. মনে হয় হার্ট বিট মিস হয়ে যাবে এমনটা মনে হওয়া;
১৭. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া;
১৮. শক্তি কমে যাওয়া;
১৯. বুকে অস্বস্তিবোধ হওয়া;
২০. যৌন উত্তেজনা কমে যাওয়া;
২১. মাসিকের সমস্যা হওয়া;
২২. মাসিক একেবারেই না হওয়া ;
২৩. আবার ঘন ঘন মাসিক হওয়া;
২৪. হাত -পা কাঁপা ও মাংসপেশিতে খোঁচা-খোঁচা ভাব লাগা;
২৫. মাথা ভন ভন করা;
২৬. মাথা ব্যথা হওয়া এবং মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভব করা;
২৭. ঘুম না হওয়া;
২৮. ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়া ও চোখে ঝাপসা দেখা;
২৯. রাতে ঘুমে দুঃস্বপ্ন দেখাসহ ইত্যাদি।
টেনশন রোগটি এককভাবে প্রকাশ হতে পারে, আবার অন্য যে কোনো রোগের উপসর্গ আকারে থাকতে পারে। মনে রাখতে হবে আমাদের মনে নির্দিষ্ট একমাত্রায় টেনশন থাকা প্রয়োজন যা আমাদের কাজের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে ।
আবার টেনশনের মাত্রা বেশি হলে কাজের ব্যাঘাত ঘটে। শরীরের অ্যাড্রেনালিন, নর -অ্যাড্রেনালিন রাসায়নিক পদার্থগুলোর আধিক্য টেনশন রোগের কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
মানুষ মাত্রই টেনশন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সেটা কম আর বেশি। টেনশন করেই মানুষ বাঁচে। জাগ্রত অবস্থায় তো বটে, ঘুমন্ত অবস্থাতেও টেনশন মানুষের শরীরে ক্রিয়া করে। এর ফলাফল পাওয়া যায় ঘুমের ব্যাঘাতে এবং বিভিন্ন দুঃস্বপ্ন থেকে।
ব্যক্তি বিশেষে টেনশন সহ্য করার ক্ষমতা একেক রকম। এই সহ্য করার ক্ষমতার ওপরই নির্ধারিত হয় কে স্বাভাবিক মানুষ আর কে টেনশনের রোগী। অনেক ব্যক্তিকে দেখবেন বহু টেনশনের মাথায় স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কাজকর্ম করছেন, খাওয়া-দাওয়া করছেন এবং ঘুমাচ্ছেন।
আবার অনেককে দেখবেন সামান্যতেই অতি টেনশনে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে ছটফট করছেন, কাজকর্মে মন বসছে না এবং একটা অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে বাস করছেন।
আমার আপনার আশেপাশেই এদের পাওয়া যাবে। যারা অল্প টেনশনেই ভেঙে পড়েন, তাদের মধ্যে যদি উপরে বর্ণিত উপসর্গগুলো পাওয়া যায় তবে তাদের চিকিৎসা করা দরকার।
জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল জনসংখ্যার মধ্যে টেনশনের উপসর্গ একই রকম। টেনশনের সময় তারা একই আচরণ করে। বলা চলে, চিকিৎসা পদ্ধতিও প্রায় একই রকম।
চিকিৎসা:
বিভিন্ন টেনশন নাশক ওষুধ প্রয়োগ করে টেনশনের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। এরপর বিভিন্ন ধরনের সাইকোলজিক্যাল থেরাপি যেমন- বিহেভিয়ার থেরাপি, সাইকোথেরাপি ও কগনিটিভ থেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে। টেনশন রোগের ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা পদ্ধতিও রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভেষজ গুণ জেনে নিন – বহেড়া, আদা এবং আমের ফুল।
আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে আরো কিছু চিকিৎসা রয়েছে এই রোগীদের জন্য। কোনো রোগী যদি অনেক দিন ধরে টেনশন রোগে ভুগে থাকেন কিন্তু কোনো চিকিৎসা না নিয়ে থাকেন তাবে তার রোগ ক্রনিক পর্যায়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
উৎস: ডা. ফাইজুল হক – ১৯ বছরের অভিজ্ঞ চিকিৎসক, শিক্ষক ও লেখক; (সামান্য পরিমার্জিত)
সম্মাণিত ডা. ফাইজুল হক এর চেম্বার অ্যাড্রেস: