টিকটক নামটি জানেন না এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বর্তমানে ইন্টারনেট দুনিয়ায় টিকটক সবচেয়ে কমন একটি নাম। টিকটক নিয়েই আজ কিছু কথা বলবো। আশা করছি, পুরো আলোচনাটি আপনাদের ভালো লাগবে।
যত ধরণের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে তন্মধ্যে টিকটক অন্যতম। তবে এটা ফেইসবুক বা টুইটারের মতো নয়। টিকটকে কেবল শর্ট ভিডিও প্রকাশ করা যায়।
ভিডিওগুলোর দৈর্ঘ্য গড়ে ১৫ সেকেন্ড হতে শুরু হয়ে ৩ মিনিট ও ১৫ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। জেনে রাখা ভালো যে, টিকটক ২০১৬ সালে চালু হয় যার কর্ণধার চীন দেশ।
অতি অল্প সময়ে এই অ্যাপটি সবার কাছে জনপ্রিয়তা পায়। কয়েক বছরের মধ্যে গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করা সর্বাধিক অ্যাপের তালিকায় নাম যোগ হয়।
যাই হোক, টিকটকের ভালো মন্দ দুটো বিষয়েই কথা বলবো। এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। আপনার যদি দ্বিমত থাকে তবে কমেন্ট করে জানাবেন।
টিকটক মানুষকে দিনের দিন বোকা বানাচ্ছে। মানুষকে মূর্খ বানাচ্ছে। মানুষ টিকটক থেকে মূর্খতার সংস্কৃতিতে ফিরে যাচ্ছে।
কেউ যখন টিকটক করে তখন অন্যের তৈরী করা গানে হয়তো নাচে, হয়তো অন্যের কথায় মুখ নড়ায়, নয়তো অন্যের একটি অভিনয়কে নিজের মতো করে ফোকাস করে ইত্যাদি ইত্যাদি।
আবার, এমন আজগুবি কিছু চুল কাটিং, বডি স্টাইল, পোশাক দেখা যায় যা আসলেই কুরূচিপূর্ণ। এসব ভদ্র সমাজে কখনো মানায় না। টিকটক যেসব ছেলেমেয়ে করে তাদের হিতাহিত জ্ঞানও ধীরে ধীরে কমে যায়। সবার কথা বলছি না। তবে বেশিরভাগই এমন হবে।
১৫ সেকেন্ড হতে ৩ মিনিটে কি এমন শেখা যাবে? আপনি চাইলেও তেমন কিছু শিখতে পারবেন না। ভিডিওগুলো শর্ট, খুব সহজেই পাল্টানো যায় তাই সবার মনেই আনন্দ লাগে।
আপনি যদি লক্ষ্য করেন টিকটক ভিডিওতে থাকা কমেন্টগুলো তাহলে দেখবেন শতকরা ৭৫ কিংবা এর অধিক পরিমাণ বানান ভুল।
আমরা মোবাইলে লিখলেও যদি সঠিক বানানটা জানি তাহলে সঠিকটাই লিখার চেষ্টা করি। কিন্তু আসলে তারা তো সঠিক বানান-ই জানে না।
আবার, টিকটকের সেলিব্রেটিরা সেগুলো কমেন্টের রিপ্লাই কি সুন্দর করে দিচ্ছে। তারা বানান ভুলের ব্যাপারটিকে উহ্য করে দেখছে। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বললাম, আজ থেকে ১০ কিংবা ১৫ বছর পরে টিকটকে প্রকাশিত কমেন্ট এবং টাইটেলগুলো যদি এখনকার মানুষগুলো পড়ে তাহলে অনেক কিছুই বুঝবে না।
কারণটা বিস্তারিত বলবো না। শুধু এই টুকুই বলবো, আমি নিজে যখন শুদ্ধ বানানটি জানি তখন অশুদ্ধ বানান লিখলে আমার মনে আগুন ধরে যায়। কিন্তু টিকটকে যারা ভুল বানানে লেখালেখি করে তারাতো শুদ্ধ বানান-ই জানে না। তারা আর সঠিক লিখবে কি? হ্যা, ৫০টি শব্দের মধ্যে ২ বা ৩টি বানান ভুল হতেই পারে। এটা মেনে যায়। কিন্তু ২ লাইনেই ৫টি বানান ভুল সেটা মেনে নেয়া যায় না।
যারা টিকটক ভিডিওগুলো নিয়মিত দেখে (বিশেষ করে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা) তারা তো সবসময়ই এই বানানগুলো দেখছে। তারা একসময় মনে করছে এটিই বোধ হয় সঠিক বানান। এর ফলে ভুল শব্দটি কিংবা ভুল বানানটি তাদের মনে গেঁথে যাচ্ছে।
এটা তো একটা সিম্পল ব্যাপার। কিন্তু এই সিম্পল ব্যাপারটিই একদিন পুরো জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে।
এখন তো স্কুল কলেজে ছেলেমেয়েরা টিফিন টাইমে কিংবা একটু অবসর সময়ে বই নিয়ে চর্চা করে না। তারা টিকটকের চর্চা করে। অন্যগুলোর নাম না হয় আর নাই বললাম। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর টিকটক এবং লাইকির মতো অ্যাপগুলো।
আপনি যদি ইউটিবের কথা বলেন তবে আমি বলবো টিকটকের চেয়ে হাজার গুণ ভালো হলো ইউটিউব। কারণ, ইউটিউব থেকে আপনি হাজার হাজার বিষয়ে শিখতে পারবেন। কিন্তু টিকটক থেকে আপনি কিছুই শিখতে পারবেন না।
মানুষ এখন শুধু শর্টকাট পছন্দ করে। কিন্তু এই শর্টকার্ট যে মানুষকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা মানুষ নিজেই জানে না।
আর ইউটিউবে আপনি পর্দা থেকে ভিডিও বাছাই করে কিংবা কোন বিষয়ে সার্চ করে ভিডিও দেখতে পারবেন। কিন্তু টিকটকে এটা মোটেও এতোটা সুক্ষ্মভাবে সম্ভব নয়।
আসলে যারা আজেবাজে কন্টেন্ট নিয়ে টিকটকে কাজ করে তাদের মাথায় যে কি আছে তা কেবল আল্লাহই জানে।
টিকটকেও অনেক ভালো ভালো ভিডিও আছে। টিকটকে যারা কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে তাদের মধ্যে সবাই যে খারাপ তা কিন্তু নয়। অনেকেই খুব ভালো ভালো ভিডিও তৈরী করে।
কিন্তু আপনি যখনই উপরে টানবেন তখন পরের বার কোন ভিডিওটি আসবে তা কিন্তু জানেন না। তাই নিজের চরিত্রকে ঠিক রাখা খুব মুশকিল।
যাই হোক, আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুক। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে – টিকটক এবং লাইকি এর মতো অ্যাপগুলোর কারণে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে।
ছাত্র শিক্ষক সবাই এতে জড়িয়ে যাচ্ছে। কাকে কি বলবেন। কিছু উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা সমাজের জন্য ভয়ানক হয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না।
জানি না, পরবর্তী প্রজন্মের কি হবে? তারা আদৌ সঠিক মানুষ হতে পারবে কিনা। নিজেদেরকেই ঠিক রাখতে পারছি না আর তাদের কথা কি বলবো!
তবে সবার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, যারা টিকটক কিংবা লাইকি অ্যাপ ব্যবহার করেন তারা ভালো ভালো বিষয় নিয়ে কাজ করুন।
সমাজের মধ্যে এমন বিনোদন প্রকাশ করবেন না যা সমাজের মধ্যে অবক্ষয়তার হার বৃদ্ধি করে। আর পড়াশোনা সংক্রান্ত ভিডিও তৈরী করুন। অল্প সময়েই যাতে অনেকেই অনেক কিছু শিখতে পারে।
নিজের শরীর দেখিয়ে কিংবা সৌন্দর্য দেখিয়ে টাকা কামানোটা মনে হয় না কেউ ভালো চোখে দেখে। পৃথিবীর কোথাও কি দেখেছেন যে, শুধুমাত্র শরীরের সৌন্দর্যের কারণে ভালো একটা চাকরি দেয়। চাকরি হয় মেধা, মননে, কর্মে এবং যোগ্যতায়।
সৃষ্টিকর্তা আপনাকে অপার সৌন্দর্য দিয়েছেন তা কি মানুষকে বিলিয়ে দেয়ার জন্য। নিজের সৌন্দর্যের যত্ন নিন। মনে রাখবেন, সৌন্দর্য আপনার একদিন ঠিকই হারিয়ে যাবে কিন্তু কর্মটা কিন্তু ইহকাল এবং পরকালে দুকালেই থাকবে।
আর বেশি শর্টকাট ওয়ে খুঁজতে যায়েন না। তাহলে সব কূলই হারাবেন। আসলে জীবনে শর্টকার্ট বলতে কোন কথা নেই। টিকটক এবং লাইকি অ্যাপ নির্মাতাদের কোন দোষ নেই। তারা আপনাকে বলে দেয় নাই যে, আপনি সবসময় ভুল বানানে কমেন্ট করেন। তারা ভালো উদ্দেশ্যেই হয়তো এসব তৈরী করেছেন কিন্তু আপনি আমি এসবের অপব্যবহার করছি। সবাই ভালো থাকবেন।
জানি না আমার এই লিখা কারও মনে সামান্য সচেতনতাও তৈরী করবে কিনা। কারণ, এতো বড় লিখা ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার মানুষ হয়তো খুঁজে পাবো না। আর কেউ যদি পড়েও থাকেন শেষ পর্যন্ত তাহলে আপনার কমেন্টে আপনার মোবাইল নাম্বারটা দিয়ে যাবেন। ধন্যবাদস্বরূপ, কিছু টাকা ফ্লেক্সিলোড করে দিয়ে কৃতজ্ঞ থাকবো।
লিখেছেন: মো. আজগর আলী (করতোয়া’র প্রতিষ্ঠাতা)
আরও পড়ুন: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং এ থেকে বাঁচতে আমাদের করণীয়।