টাকা আয় বলতে এখানে অনলাইনে টাকা আয়ের কথা বলা হয়েছে। মানুষ এখন কায়িক শ্রমে বিশ্বাসী নয়। নিজের স্বপ্নকে পূরণ করতে চাইলে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সেরকম একটি কাজ নিজের জন্য বেছে নিতে হবে।
অনেকেই ঘরে বসে কম্পিউটার এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করতে চান। এটা সম্ভব তবে এতো সহজ নয়। আপনাকে অনেক কাঠ-খড় পোহাতে হবে যদি আপনি সফল হতে চান।
আপনি সবচেয়ে সঠিক তথ্য এই নিবন্ধের মাধ্যমে জানতে পারবেন। আমরা কোনো ফালতু তথ্য উপস্থাপন করে আপনাদের বিভ্রান্ত করবো না।
ঘরে বসে টাকা আয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় নিয়ে আজ আলোচনা করবো। প্রতিটি উপায়-ই খুব মান সম্মত যদি আপনি সফল হতে পারেন। তো আর কথা নয়, ক্রমিক আকারে টাকা আয়ের উপায়গুলো তুলে ধরা হলো:
১. ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট: অনলাইনে যতোগুলো কাজ রয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মানসম্মত কাজ হলো ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট। এই কাজ আপনাকে প্রথমে শিখতে হবে।
এটা খুব সহজ নয়। আপনাকে কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ (এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভা স্ক্রিপ্ট, জেকুয়েরি, পাইথন, পিএইচপি ইত্যাদি) শিখতে হবে। খুব ভালোভাবেই শিখতে হবে। দিন রাত পরিশ্রম করতে হবে।
তখন আপনি নিজে নিজে ওয়েবসাইট তৈরী করতে পারবেন। ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট করতে পারবেন। তখন বিশ্বের নামকরা মার্কেট প্লেসগুলোতে আপনি কাজ করতে পারবেন।
যদি মার্কেট প্লেসগুলোতে কাজ নাও করেন তবে আপনি লোকালি বিভিন্ন কোম্পানীর কাজ করতে পারবেন কিংবা চাকরি করতে পারবেন।
সত্যিকার অর্থে, এই কাজটি যথেষ্ট কঠিন। আপনি সামান্য শিখে আয় করার চেষ্টা করলে বড় ধরণের বোকামী হবে। বাংলাদেশের ঢাকায় বিভিন্ন ইন্সটিটিউশনে সরাসরি ভর্তি হয়ে শিখতে পারবেন। আবার, অনলাইনেও অনেকে কোর্স করায়।
অনলাইনে তেমন ভালোভাবে শিখতে পারবেন না। ইউটিউব এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও শিখতে পারবেন। যদি আপনার মনোবল দৃঢ় থাকে তবে সব জায়গা থেকেই শেখা সম্ভব।
আপনি একজন ডেভেলপার হতে পারলে সর্বনিম্ন মাসে ১ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন। অনেকে এর চেয়ে অনেক বেশি আয় করেন। কিন্তু ওয়েব ডেভেলপার হওয়ার জন্য তাদের কষ্টও অনেক করতে হয়েছে।
যদি আপনি ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট শিখতে চান তবে বার বার আগে ভাবুন। সময় নষ্ট করা উচিত নয়। সময় চলে গেলে আর ফিরে পাওয়া যায় না। এটি যদি খুব কঠিন মনে হয় তবে আরও অনেক সহজ কাজ আছে, সেগুলো সম্পর্কে জানুন, বুঝুন আর তারপর সিদ্ধান্ত নিন। হুট করে কিছু করতে যাবেন না। জীবন এবং বয়ে যাওয়া সময় দুটোই খুব মূল্যবান।
২. গ্রাফিক্স ডিজাইন: ইন্টারনেট জগৎ বা ফ্রিল্যান্সিং জগতে দ্বিতীয় অবস্থানেই রয়েছে গ্রাফিক্স ডিজাইন। এটা মূলত হলো এক প্রকার ডিজাইনের কাজ।
আপনাকে এক্ষেত্রে শিখতে হবে কিছু সফ্টওয়ারের ব্যবহার এবং থাকতে হবে সৃজনশীলতা। নিজের মতো করে মুহূর্তেই একটি ডিজাইন করা জানতে হবে।
সাধারণত কমন যে সফ্টওয়ারগুলো আপনাকে ভালোভাবে জানতে হবে তা হলো Adobe Photoshop এবং Adobe Illustrator. এর বাইরেও আরো অনেক সফ্টওয়ার রয়েছে। কিন্তু এই দুটো যদি ভালোভাবে রপ্ত করতে পারেন তবে আপনার কাজ কেউ আটকাতে পারবে না।
লোকাল মার্কেট এবং আন্তর্জাতিক মার্কেট দুই জায়গায়-ই আপনি কাজ করতে পারবেন। তবে অবশ্যই ধৈর্য্য লাগবে। হুট করে কখনো সফল হওয়া যায় না। শ্রম দিতে হবে। ইন্টারনেট থেকে খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন বিষয় জানতে হবে।
গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখার জন্যও আপনি অনলাইন এবং অফলাইনে কোর্স করতে পারেন। অবশ্যই ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবেন। ইচ্ছে থাকলে কেবল অনলাইনের মাধ্যমে অর্থাৎ গুগল ও ইউটিউবের মাধ্যমেই শেখা সম্ভব।
আর বর্তমানে বাংলাদেশের সব জায়গায় প্রতারণার ফাঁদ রয়েছে। যেখানেই ভর্তি হন দেখে শুনে ভর্তি হবেন। আপনার কষ্টের টাকা যেন জলে না যায়। এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে।
৩. ইউটিউবে ভিডিও তৈরীর মাধ্যমে: যদি আপনার কোনো বিশেষ প্রতিভা থাকে তবে আপনার জন্য সবচেয়ে সহজ টাকা আয়ের উৎস হতে পারে ইউটিউব। আপনাকে ভিডিও তৈরী করা শিখতে হবে। সেখানে কথা দিতে হবে।
কারও কথা বা অন্য কোনো কিছু নকল করা উচিত নয়। কপিরাইট করা যাবে না। তাহলে ইউটিউবের রুলস অনুযায়ী আপনার চ্যানেলে যখন ১ বছরের মধ্যে ৪ হাজার ঘন্টা ওয়াচ টাইম এবং ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার হয়ে যাবে তখন আপনি মনেটাইজেশন পাবেন।
অর্থাৎ তখন আপনার চ্যানেলের ভিডিওগুলো অন্য কেউ দেখলে আপনার ইনকাম হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
আপনি বেশ কয়েকদিন ইউটিউবের নানারকম ভিডিওগুলো দেখুন। তারপর নিজেই বুঝতে পারবেন কোনটা আপনার পক্ষে সহজ। আর ইউটিউব চ্যানেল খোলা এবং সেখানে বিভিন্ন সেটিংস করা পানির মতো সহজ। ভালো মানের ভিডিও তৈরী করতে পারলে ১০ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকা মাসে আয় করা সম্ভব।
৩. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: টাকা আয়ের এটাও একটা ভালো মাধ্যম। এটাকে বলা হয় প্যাসিভ ইনকাম অর্থাৎ সরাসরি না – একটু পরোক্ষভাবে ইনকাম হয়।
সহজ করে বলি, আপনার একটা ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখানে মাসে ১ লক্ষ ভিজিটর আসে। আপনি অ্যামাজন এর মতো ওয়েবসাইটে একটি অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্ট খুলবেন। তারপর অ্যামাজন কর্তৃপক্ষ আপনাকে তাদের পণ্যের অ্যাডভার্টাজিং কোড প্রোভাইড করবেন।
সেই কোড আপনি আপনার ওয়েবসাইটে (অ্যাডসেন্সের মতো) অ্যাড করবেন। তখন অ্যামাজনের পণ্যটির অ্যাড আপনার ওয়েবসাইটে শো করবে।
আপনার ওয়েবসাইটের যারা ভিজিটর তারা যদি তখন আপনার ওয়েবসাইটের ঐ অ্যামাজনের অ্যাড হিসেবে থাকা পণ্যটি আপনার দেয়া লিঙ্কের মাধ্যমে ক্রয় করে তাহলে আপনি কিছু কমিশন পাবেন।
গ্রাহক কিন্তু সরাসরি অ্যামাজন.কম ওয়েবসাইটে ঢুকেও পণ্যটি ক্রয় করতে পারে। কিন্তু সেটা না করে আপনার ওয়েবসাইট এ প্রথমে ঢুকলো। তারপর সেখানে আপনি অ্যামাজনের যে অ্যাড বসিয়েছেন সেখানে ক্লিক করে অ্যামাজন.কমে ঢুকলো এবং পণ্যটি কিনলো।
শুধু অ্যামাজন নয়, বিশ্বের বড় বড় সব বিক্রয় প্রতিষ্ঠান থেকেই আপনি অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্ট পাবেন। এমনকি বাংলাদেশের অনেক লোকাল কোম্পানীও এটা প্রোভাইড করে।
সত্যিকার অর্থে, আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর বেশি থাকলে অ্যাফিলিয়েট থেকে আপনি অনেক বেশি টাকা আয় করতে পারবেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে এখান থেকে আরও বিস্তারিত পড়ুন।
৪. কন্টেন্ট রাইটিং: আপনার যদি প্রতিভা থাকে এবং লেখনীতে যদি আপনি দক্ষ হয়ে থাকেন তবে এই কাজটি আপনার জন্য। তবে ভালো টাকা আয় করতে হলে আপনাকে ইংরেজী জানতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটগুলোতে কন্টেন্ট রাইটিং এর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ফ্রিল্যান্সার হায়ার করা হয়ে থাকে। আপনি যদি ভালোভাবে কয়েকটি কাজ সম্পন্ন করতে পারেন তবে আপনাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।
বাংলাদেশেও বর্তমানে কিছু লোকাল কোম্পানী কন্টেন্ট রাইটার হায়ার করে। ইচ্ছে করলে আপনি পার্ট টাইম জব হিসেবে বাংলাদেশের ঐসব কোম্পানীতেও কাজ করতে পারেন।
কন্টেন্ট রাইটিং-এ ভালো করতে হলে বিভিন্ন বিষয় বস্তুর উপর আপনার ভালো ধারণা থাকতে হবে। কপিরাইট করা যাবে না। ভাষা সহজ সরল ও সাবলীল হতে হবে। নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে।
৫. ব্লগিং করা: এটি ঠিক উপরের কাজটির মতোই। তফাৎ শুধু এটুকুই যে, উপরের কাজটি অন্যের অধীনে করবেন আর ব্লগিং হচ্ছে নিজের অধীনে। দুই জায়গায়-ই আপনাকে লিখতে হবে।
ব্লগিং করার মাধ্যমে আপনি যে বিষয়ে ভালো জানেন তা মানুষের কাছে তুলে ধরবেন। ব্লগিং করতে হলে অবশ্যই আপনাকে ওয়েবসাইট তৈরী করতে হবে। এটি আপনি ফ্রি-তেও করতে পারবেন আর কিনে নিয়েও করতে পারবেন।
টাকা আয় করার জন্য ব্লগিং হলো সবচেয়ে সহজ উপায়। আপনি ভালো ভালো লিখা উপহার দিতে পারলে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর এর সংখ্যা আশাতীত বাড়বে, সাথে আপনার ইনকামও বাড়বে।
অনলাইনে টাকা আয় করার জন্য আরও অনেক বিষয় রয়েছে। সব একদিনে প্রকাশ করা হলো না। কারণ, প্রবন্ধ অনেক বড় হয়ে যাবে।
পরবর্তীতে হয়তো এই লিখা আপডেট করা হবে অথবা নতুন করে পোস্ট করা হবে। করতোয়া.কম এর নোটিফিকেশন অন করে রাখুন। তাহলে পোস্ট পাবলিশ করা মাত্রই আপনার কাছে চলে যাবে।
আরও পড়ুন: ল্যাপটপ কেন গরম হয়? সমাধান জেনে নিন।
পরিশেষে যে কথা বলছিলোম, কম্পিউটার থাকলেই আয় করা সম্ভব যদি কেউ ইচ্ছে করে। ইচ্ছের সাথে সাথে তাকে যথেষ্ট চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে হবে।
হয়তো প্রথম প্রথম অনেক কিছুতেই আপনি ফেইলর হবেন কিন্তু ভেঙে পড়লে চলবে না। লেগে থাকতে হবে। মনে রাখবেন, প্রতিটি সফলতার পেছনেই একটি ব্যর্থতার গল্প থাকে।