জ্বরের প্রাথমিক চিকিৎসা:
জ্বর খুব স্বাভাবিক একটি রোগ। সচরাচর এটা সবার মধ্যেই কমবেশি হয়। থার্মেোমিটারে যদি দেহের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট কিংবা তার বেশি হয় তবেই তাকে জ্বর বলে।
যেমন তেমন ভাবে জ্বর মাপলেই হবে না। জ্বর মাপার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে জেনে নিতে হবে। অতিরিক্ত জ্বর হলে কয়েক ঘন্টা পর পর জ্বরের রেকর্ড লিখে রাখতে হয়।
মানুূষকে খুব সহজেই বিভিন্ন ধরণের ফ্লু আক্রান্ত করে ফেলে। সাধারণত এগুলো ভাইরাস দিয়ে ছড়ায় এবং সহজেই পাশের সুস্থ্য ব্যক্তিকেও আক্রান্ত করতে পারে। পরিবারে কারও জ্বর হলে অন্য সদস্যরা সাধারণত ভীত হয়ে পড়েন। আজকের আলোচনায় জ্বরের জন্য কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
জ্বর ১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার উপরে হলে প্রাথমিকভাবে করণীয়:
- রোগীর পুরো শরীর স্পঞ্জিং করে দিতে হবে। রোগীকে যদি একটানা ১০ মিনিট স্পঞ্জিং করা যায় তবে জ্বর কিছুটা কমে আসবে।
- স্পঞ্জিং করার সময় ঘরের মধ্যে হালকা করে ফ্যান চালু করে রাখতে পারেন। রোগীর শরীরে যেনও সরাসরি বাতাস না লাগে।
- রোগীর পুরো শরীর পরিষ্কার কাপড় (রুমাল বা গামছা বা অন্য কিছু) পানিতে ভিজিয়ে চিপে নিয়ে মুছে দিতে হবে। প্রয়োজনে শুকনো গামছা দিয়ে আবার মুছে দিতে হবে।
- এ রোগ হলে অনেকেই গোসল করাতে চান না। কিন্তু অন্তত দিনে একবার রোগীকে গোসল করানো উচিত। তবে রোগীর নিউমোনিয়া থাকলে ভিন্ন কথা।
- জ্বর হলে রোগীর শরীরের জন্য স্পঞ্জিং খুবই উপকারী এবং এটা দিন কিংবা রাতের যেকোন সময়ই করা যায়।
জ্বর অতিরিক্ত মাত্রায় চলে গেলে যা করবেন:
রোগীর শরীরে জ্বরের মাত্রা যদি ১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইট কিংবা তার বেশি হয়ে যায় তবে তা কিন্তু ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে বুঝতে হবে।
এসময় রোগী জ্ঞান হারাতে পারেন কিংবা খিঁচুনি হতে পারে। রোগীর বয়স যদি পাঁচ বছরের মতো হয় তবে এ ধরণের সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়।
আগে থেকেই খিঁচুনির ইতিহাস থাকলে রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে এই সময় ডায়াজিপাম এবং ফেনারগন দেয়া যায়।
উচ্চ মাত্রার জ্বর এর ক্ষেত্রে রোগীর শরীরে বিশেষ করে মাথায় পানি ঢালা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীকে শুইয়ে দিতে হবে। যদি রোগীর নিউমোনিয়া হয়ে থাকে তবে গোসল করানো থেকে বিরত থাকাই ভালো।
জ্বর ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার উপরে উঠলে প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট বা সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সাধারণত প্রতিদিন তিনবার ট্যাবলেট ব্যবহার করা যায়। তবে যে কোন ওষুধই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে।
১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার বেশি জ্বর টানা তিনদিন থাকলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াতে পারেন।
তবে কখনোই নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াবেন না। তাৎক্ষণিক ফলাফল ভালো পেলেও পরবর্তীতে রোগীর জন্য খারাপ কিছু তা ডেকে নিয়ে আসতে পারে।
এ রোগে সাধারণত ফ্লুইড বা পানীয় জাতীয় খাবারের প্রতি জোর দেয়া হয়। এতে রোগীর শরীরে হাইড্রেশন হয় এবং দেহের তাপমাত্রা বের হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস রোগ থেকে মুক্তির উপায় – গাছ-গাছড়ার ওষুধ।
সাধারণত রোগীকে ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, ফলের রস, কোমল পানীয় এগুলো খাবার খাওয়ানো যেতে পারে। বিভিন্ন ধরণের স্যুপ, দুধ এবং হরলিক্সও খাওয়ানো যেতে পারে।
জ্বর হলে রোগীর মুখ তেঁতো হয়ে যায়। রোগী কিছু খেতে চায় না। তাই ভিটামিন সি জাতীয় ফলমুল খাওয়ানো যেতে পারে। প্রয়োজনে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ওষুধও খাওয়ানো যেতে পারে। এতে করে মুখের তেঁতো ভাব দূর হবে এবং রুচি বাড়ার সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।