জ্বর ও সাধারন ব্যথায় আমরা নিজেরাই অনেক ওষুধ ব্যবহার করি। বাজারে ওটিসি হিসেবে এসব ওষুধ পাওয়া যায়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিরেকে আমরা কোন ওষুধ ব্যবহারেই উৎসাহিত করি না।
এখানে জ্বর ও সাধারন ব্যথায় খুব বেশি ব্যবহার করা হয় এমন কিছু ওষুধের সব ধরনের তথ্য দেয়া হলো। নিজেরা কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করতে যাবেন না। শুধুমাত্র জানার স্বার্থে শেয়ার করা হলো। জ্বর ও সাধারন ব্যথায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
১. এইস্ – Ace
উপাদান: প্যারাসিটামল। ৫০০ মি.গ্রা. ট্যাবলেট, ৬৬৫ মি.গ্রা. এক্সটেন্ডেড রিলিজ ট্যাবলেট, ১২০ মি.গ্রা./ ৫ মি.লি. সিরাপ, ১২০ মি.গ্রা./৫ মি.লি. সাসপেনশন, ৮০ মি.গ্রা./মি.লি. পেডিয়াট্রিক ড্রপস্ এবং ৬০, ১২৫, ২৫০ ও ৫০০ মি.গ্রা. সাপোজিটরি।
নির্দেশনা:
জ্বর, সর্দিজ্বর এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা। মাথাব্যথা, দাঁত ব্যথা, কানের ব্যথা, শরীর ব্যথা, স্নায়ু প্রদাহ জনিত ব্যথা, ঋতুস্রাব জনিত ব্যথা এবং মচকে যাওয়ার ব্যথা।
অন্ত্রে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, অস্ত্রোপচার পরবর্তী ব্যথা, প্রসব-পরবর্তী ব্যথা, ক্যান্সার জনিত দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, প্রদাহ জনিত ব্যথা ও শিশুদের টিকা দেবার পরের জ্বর ও ব্যথা। বাত ও অষ্টিওআর্থ্রাইটিস এর দরুণ সৃষ্ট ব্যথা ও অস্থিসংযোগ সমূহের অনমনীয়তা।
মাত্রা ও ব্যবহার বিধি:
ট্যাবলেট :
প্রাপ্ত বয়স্ক: ১-২ টি ট্যাবলেট ৪-৬ ঘন্টা পর পর দিনে সর্বোচ্চ ৮ টি ট্যাবলেট।
শিশু (৬-১২ বছর): আধা থেকে ১টি দিনে ৩-৪ বার।
সিরাপ এবং সাসপেনশন:
শিশু (৩ মাসের নীচে): ১০ মি.গ্রা. হিসাবে (জন্ডিস থাকলে ৫ মি.গ্রা. হিসাবে) দিনে ৩-৪ বার।
৩ মাস – ১ বছরের নীচে: ১/২ থেকে ১ চা চামচ দিনে ৩-৪ বার।
১-৫ বছর: ১-২ চা চামচ দিনে ৩-৪ বার।
৬-১২ বছর: ২-৪ চা চামচ দিনে ৩-৪ বার।
প্রাপ্তবয়স্ক: ৪-৮ চা চামচ দিনে ৩-৪ বার।
এক্স আর ট্যাবলেট: ২ টি করে ট্যাবলেট দিনে ৩ বার।
সাপোজিটরি:
৩ মাস- ১ বছরের নীচে: ৬০-১২০ মি.গ্রা. দিনে ৪ বার।
১-৫ বছর: ১২৫-২৫০ মি.গ্রা. দিনে ৪ বার।
৬-১২ বছর বয়সের শিশুদের জন্য:২৫০-৫০০ মি.গ্রা. দিনে ৪ বার।
প্রাপ্ত বয়স্ক ও ১২ বছরের বেশী বয়সের শিশুদের জন্য: ০.৫-১ গ্রাম দিনে ৪ বার।
পেডিয়াট্রিক ড্রপস্:
শিশু: ৩ মাস বয়স পর্যন্ত : ০.৫ মি.লি. (৪০ মি.গ্রা.), দিনে ৪ বার।
৪-১১ মাস বয়স পর্যন্ত: ১ মি.লি. (৮০ মি.গ্রা.), দিনে ৪ বার।
১-২ বছর বয়স পর্যন্ত: ১.৫ মি.লি. (১২০ মি.গ্রা.), দিনে ৪ বার।
সতর্কতা ও যেসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না: প্যারাসিটামলের প্রতি অতি সংবেদনশীলতা, গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানকালে ব্যবহার ছাড়া সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার করা নিরাপদ।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে হিমাটোলজিক্যাল প্রতিক্রিয়া, অগ্নাশয়ের প্রদাহ, চামড়ায় ফুসকুড়ি ও অন্যান্য এলার্জি দেখা দিতে পারে।
সরবরাহ:
এইস্ ট্যাবলেট: ৫০ x ১০ টি।
এইস্ এক্স আর ট্যাবলেট: ১০ x ১০ টি।
এইস্ সিরাপ: ৬০ মি.লি. এবং ১০০ মি.লি.।
এইস্ সাসপেনশন: ৬০ মি.লি.।
এইস্ পেডিয়াট্রিক ড্রপ: ১৫ মি.লি ও ৩০ মি.লি।
এইস্ ৬০ সাপোজিটরি: ২ x ৫ টি।
এইস্ ১২৫ সাপোজিটরি: ৪ x ৫ টি।
এইস্ ২৫০ সাপোজিটরি: ৪ x ৫ টি।
এইস ৫০০ সাপোজিটরি: ৪ x ৫ টি।
২. এইস প্লাস – Ace Plus
উপাদান: প্যারাসিটামল ৫০০ মি.গ্রা. এবং ক্যাফেইন ৬৫ মি.গ্রা./ ট্যাবলেট।
নির্দেশনা: জ্বর, মাথা ব্যথা, মাইগ্রেইন, মাংসপেশীর ব্যথা, পিঠে ব্যথা, দাঁত ব্যথা এবং ঋতুস্রাব জনিত ব্যথা।
মাত্রা ও ব্যবহার বিধি: ১-২ টি ট্যাবলেট ৬ ঘন্টা পর পর। দিনে সর্বোচ্চ ৮ টি ট্যাবলেট। ১২ বছরের নীচে শিশুদের ক্ষেত্রে অনুমোদিত নয়।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: নিউট্রোপেনিয়া, গ্যাস্ট্রো ইন্টেসটাইনাল সমস্যা ইত্যাদি।
অন্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া: এটা ক্লোরামফেনিকল এবং কুমারিনের রক্ত জমাট বিরোধী গুন বাড়িয়ে দেয়। অ্যালকোহল সেবনকারী অথবা যে সমস্ত রোগী খিঁচুনীর ওষুধ সেবন করছেন তাদের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামলের মাধ্যমে যকৃতে বিষক্রিয়া তৈরীর ঝুঁকি বাড়তে পারে।
গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানকালে ব্যবহার: প্যারাসিটামল গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে নিরাপদ সত্ত্বেও ব্যবহারের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
সরবরাহ:
এইস্ প্লাস ট্যাবলেট: ২০ x ১০ টি।
৩. এসিট্রাম™ – Acetram™
নির্দেশনা: এসিট্রাম™ ট্যাবলেট: প্যারাসিটামল বি.পি. ৩২৫ মি.গ্রা.এবং ট্রামাডল হাইড্রোক্লোরাইড বি.পি. ৩৭.৫ মি.গ্রা.।
নির্দেশনা: এসিট্রাম™ ট্যাবলেট মাঝারী এবং মাঝারী থেকে তীব্র ব্যথায় প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে নির্দেশিত। এসিট্রাম™ ট্যাবলেট তীব্র ব্যথার মেয়াদী (৫ দিন অথবা এর কম) চিকিৎসায়ও নির্দেশিত।
মাত্রা এবং সেবনবিধি:
এসিট্রাম™ খাবারের আগে বা পরে যেকোন সময় সেবন করা যেতে পারে। মাঝারী অথবা মাঝারী থেকে তীব্র ব্যথায় ১-২টি ট্যাবলেট প্রতি ৪ অথবা ৬ ঘন্টা পর পর এবং দিনে সর্বোচ্চ ৮টি ট্যাবলেট সেবন করা যায়। তীব্র ব্যথায় স্বল্প মেয়াদী (৫ দিন অথবা এর কম) চিকিৎসায় ২টি ট্যাবলেট প্রতি ৪ অথবা ৬ ঘন্টা পর পর (দিনে সর্বোচ্চ ৮টি ট্যাবলেট) সেবন করা যায়।
প্রতি নির্দেশনা:
ট্রামাডল, প্যারাসিটামল অথবা এ ওষুধের অন্য যে কোন উপাদান বা অপিয়ড -এর প্রতি সংবেদনশীল রোগীকে এ ওষুধটি দেয়া উচিত নয়। যে সকল ক্ষেত্রে অপিয়ড প্রতিনির্দেশিত, সেসব ক্ষেত্রে এ ওষুধটিও প্রতিনির্দেশিত।
সতর্কতা:
এটি গাড়ী চালানো অথবা মেশিন পরিচালনার মত জটিল কাজ করতে যে পরিমান মানসিক ও শারীরিক দক্ষতার প্রয়োজন হয় তার ব্যঘাত ঘটাতে পারে। এই ওষুধটি অ্যালকোহলযুক্ত কোমল পানীয়র সাথে সেবন করা উচিত নয়।
অন্যান্য ট্রামাডল অথবা প্যারাসিটামল যুক্ত ওষুধের সাথে এবং OTC ওষুধের সাথে একত্রে এই ওষুধটি সেবন করা উচিত নয়। ট্রানকুলাইজার, হিপনোটিকস অথবা অন্যান্য অপিয়ড এনালজেসিক এর সাথে সেবন করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
শিশু এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে ব্যবহার:
শিশুদের ক্ষেত্রে এ ওষুধটির নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা এখনো নিরীক্ষা করা হয়নি। সাধারণত বয়স্কদের ক্ষেত্রে মাত্রা নির্ধারণে সতর্ক হওয়া উচিত। সমসাময়িক অন্য রোগ এবং এ সকল রোগের বিবিধ চিকিৎসার কারণে যকৃত, কিডনি অথবা হৃদপিন্ডের কাযর্কারিতা হঠাৎ করে কমে যাওয়ার সম্ভাবনার উপর পর্যালোচনা করে মাত্রা নির্ধারণ করা উচিত।
বৃক্ক সংক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার:
এসিট্রাম বৃক্কের সমস্যাজনিত রোগীদের ক্ষেত্রে নিরীক্ষিত নয়। যে সকল রোগীদের ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স ৩০ মি.লি./ মিনিট এর কম তাদের ক্ষেত্রে দুটি মাত্রার মধ্যবর্তী সময় বাড়াতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রতি ১২ ঘন্টায় ২টি ট্যাবলেটের বেশি না হয়।
যকৃতের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে: এসিট্রাম™ যকৃতের সমস্যাগ্রস্থ রোগীদের উপর নিরীক্ষিত নয়। তাই এর ব্যবহার এ ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে নির্দেশিত নয়।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:
এসিট্রাম™ সেবনে নিম্নলিখিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে:
এসথেনিয়া, অবসন্নতা, হটফ্লাস, ঝিঁমুনি, মাথাব্যথা, কাঁপুনি, পেটব্যাথা, কোষ্টকাঠিন্য, ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, মুখগহ্বরের শুষ্কতা, বমি, এনোরেক্সিয়া, উৎকন্ঠা, দ্বিধা, ইউফোরিয়া, র্নিঘূমতা, বিচলতা, সোমনোলেন্স, পু্ররাইটাস, র্যাশ, অতিরিক্ত ঘাম ইত্যাদি।
গর্ভবস্থায় ও স্তন্যদানকালে ব্যবহার :
প্রেগনেন্সি ক্যাটাগরি-সি। গর্ভবতী মহিলাদের উপর এখনো কোন পর্যাপ্ত এবং সুনিয়ন্ত্রিত তথ্য পাওয়া যায়নি। কেবল ভ্রূনের ক্ষতির ঝুকির তুলনায় চিকিৎসায় মায়ের উপকারের পরিমান অতিমাত্রায় বিবেচিত হলে, কেবলমাত্র সে ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থায় এ ওষুধটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
যেহেতু নবজাতক এবং ইনফেন্টদের উপর এ ওষুধটির নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত নয়, তাই অবসটেট্রিক্যাল প্রি-অপারেটিভ মেডিকেশন এবং ডেলিভারী পরবর্তী এনালজেসিক হিসেবে নার্সিং মায়েদের ক্ষেত্রে এ ওষুধটি নির্দেশিত নয়।
সরবরাহ: প্রতি বাক্সে আছে ৩০টি ট্যাবলেট ব্লিস্টার প্যাক -এ।
আরও পড়ুন: কালা জ্বর হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয় ও চিকিৎসা কি?