জিরা পানির নামটি হয়তো কেউ কেউ শুনে থাকবেন। শরীরের জন্য এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আজ আমরা জিরা পানি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি, আলোচনাটি সবার জন্য ফলপ্রসু হবে। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
সারাদেশে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এই গরমে দেহকে পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করে আর্দ্র রাখার জন্য আমাদের সবারই উচিত প্রচুর পানি খাওয়া। কিন্তু অনেকেই শুধু পানি খেতে চান না বা পারেন না।
তাদের জন্য একটি স্বাস্থ্য সম্মত সমাধান হচ্ছে জলজিরা বা জিরা পানি। স্বাদে ও পুষ্টিতে ভরপুর এটি ভারতের গ্রীষ্মকালীন একটি জনপ্রিয় পানীয় এবং এটা আমাদের দেশেও বেশ পরিচিত। এর রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা।
জিরা পানির স্বাস্থ্য উপ কারিতা জিরা পানি পানের ফলে এটি দেহকে ঠাণ্ডা করতে এবং দেহে উৎপন্ন অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমিয়ে দেহ সতেজ করে।
এটি খুব স্বাস্থ্য সম্মত ভা বে পেটের দূষিত পদার্থ কমাতে সহায়তা করে। তাই জিরা পানি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা ব্যাখ্যা করতে এর কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা তুলে ধরছি।
১. ওজন কমাতে জিরা পানি: এর একটি উপকারিতা হচ্ছে ওজন কমাতে সাহায্য করে। দিনে দু’বার এই জিরা পানি খেলে এটি পেটের ক্ষুধা কমিয়ে দেয় যার ফলে খাওয়ার ইচ্ছেটা কমে যায়।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে: জিরা আয়রনের চমৎকার একটি উৎস। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কাজ প রিচালনা করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এতে আয়রনের পাশাপাশি বেশ ভালো পরিমান ভিটামিন এ ও সি থাকে যা থেকে অ্যান্টি অক্সিডেণ্টের সুবিধা পাওয়া যায়।
৩. রক্তশূন্যতার চিকিৎসায়: জিরাতে থাকা আয়রন রক্তস্রোতে অক্সিজেন বহনকারী হিমোগ্লোবিনের পরিমান বৃদ্ধি করে। এছাড়া জিরা পানি আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতার জন্য বেশ উপকারী।
৪. অ্যাসিডিটি কমাতে: এটা অ্যাসিডিটির সমস্যার জন্য ভালো। যেকোন ভারী খা বার খাওয়ার পর ধীরে ধীরে জিরা পানি খেয়ে নিলে অ্যাসিডিটির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে: জিরা পানি পানের আ র একটি স্বাস্থ্য উপকারিতা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তারা দিনে দুইবার এই পানীয়টি পান করতে পারেন।
৬. গ্যাসের সমস্যা দূরীকরণে: পেটের গ্যাস কমাতে জিরা পানি সাহায্য করে। যদি গ্যাসের কারনে পেট ফুলে থাকে তাহলে ধীরে ধীরে জিরা পানি খেতে পারেন যতক্ষন না পেটের গ্যাস দূর হয়।
৭. বমি বমিভাব দূর করতে: জিরা পানি বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে তাই গর্ভবতী নারীরা এটি পান করতে পারেন ‘মর্নিং সিকনেস’ থেকে মুক্তি পেতে।
৮. পানিশূন্যতা দূরীকরণে জিরা পানি: এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতার মাঝে একটি হচ্ছে গরম কালে এটি দেহকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। এটিতে স্বাস্থ্যসম্মত মশলা জিরা থাকার কারনে এটি প্রাকৃতিক ভাবে দেহের তাপমাত্রা কমায়।
৯. ভালো ঘুমের জন্য: যাদের মাঝে ইন্সমোনিয়া বা ঘুমের সমস্যা আছে তাদের জন্য জিরা পানি খুব উপকারী। নিয়মিত খেলে ভালো ঘুম হয়।
১০. স্মৃতিশক্তি উন্নত করে: জিরা মস্তিস্কের শক্তিকে উন্নত করে।তাই অল্প বয়স থেকেই যদি জিরা পানি খাওয়া যায় তাহলে তা উল্লেখযোগ্য ভাবে স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে তীক্ষ্ণ করে।
১১. শরীরের দূষণ দূরীকরণে: জিরা পানি যকৃতের ও পাকস্থলীর জন্য খুবই উপকারী। জিরার মাঝে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট দেহের এবং ভেতরের অঙ্গের বিষাক্ততা দূর করে।
১২. গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের বাড়তি পুষ্টির জন্য: জিরাতে থাকা আয়রন গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মায়েদের জন্য খুবই ভালো। এটা গর্ভস্থ ভ্রুণের, বাচ্চার এবং মায়ের আয়রনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।
১৩. তলপেটের ব্যথা কমাতে: মাসের বিশেষ দিনগুলোতে তলপেটে ব্যাথা অনুভব করেন অনেক নারীই, তাদের এই ব্যাথা কমাতে অল্প অল্প করে সারাদিন জিরা পানি খেতে পারেন।
১৪. ত্বকের জন্য জিরা পানির স্বাস্থ্য উপকারিতা: যখন দেহ আভ্যন্তরীণভাবে স্বাস্থ্যবান থাকে তা ত্বকের মাঝে প্রতিফলিত হয়।
এই জিরা পানি দেহকে আভ্যন্তরীণ ভাবে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান করে তাই করে এর ফলে ত্বক এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পরে।
১৫. ত্বকের পুষ্টি যোগাতে: আগেই বলা হয়েছে জিরা পানি হজমক্রিয়াকে বাড়িয়ে দেয় বলে এটা ত্বককে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান শুষে নিয়ে স্বাস্থ্যবান ও পুষ্ট থাকতে সাহায্য করে।
১৬. অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সরবরাহ করে: নিয়মিত জিরা পানি পানে দেহ পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন এ, সি ও ই পায় যেগুলো এন্টিঅক্সিডেন্ট ও এন্টিএজিং গুনাগুনের জন্য পরিচিত। এটা পান করার ফলে ত্বক পরিপূর্ণ হয় এবং অকাল বুড়ীয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
১৭. ব্রণের চিকিৎসায়: জিরা পানি ব্রণের জন্য প্রাকৃতিক ঔষধের কাজ করে।
১৮. ত্বকের আরামের জন্য: জিরা পানি ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
যেভাবে বানাবেন জিরা পানি?
পানি ১ লিটার ও জিরা দেড় চা চামচ চুলায় একটি হাঁড়িতে পানি ফুটিয়ে জিরা দিয়ে আরো ৮-১০ মিনিট ফুটিয়ে পানি পৌনে ১ লিটার হলে নামিয়ে ছেঁকে ঠাণ্ডা করতে হবে। এটি চাইলে কুসুম গরম বা বরফ শীতল দু ইভাবেই খাওয়া যায়।
আরো সুস্বাদু করার জন্য এর সাথে সামান্য চিনি, বিট লবন, গোলমরিচ গুঁড়ো, লেবুর রস ধনেপাতা/পুদিনাপাতা কুচি ও চাইলে কাঁচা আম যোগ করে ব্লেন্ড করে নেয়া যায়।
নিম্নে জিরার শরবত তৈরি করার পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:
উপকরণ:
তেঁতুল গুলা ২ টেবিল চামচ, আখের গুড় ৫ টেবিল চামচ, চিনি ২ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, জিরা হালকা করে ভাজা ২ চা চামচ, বিট লবণ ১ চা চামচ, পানি ৬ কাপ, সাদা গোল মরিচ গুড়াা হাফ চামচ প্রস্তুত প্রণালী:
প্রথমে আখের গুড় ও চিনি পানিতে গুলে নিন। তারপর তেঁতুলের মাড় ও লেবুর রস মিশিয়ে ছেকে নিন। এবার বাকি সমস্ত উপকরণ একসাথে মিশিয়ে বরফ কুচি দিয়ে গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করুন জিরা শরবত।
পরিশেষে বলা যায়, জিরা শরবত বিভিন্ন দিক থেকে আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশে এর ব্যবহার কম। কারণ, মানুষ জানে না। তাই এর ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সরকারের ভূমিকা রাখা উচিত।
আরও পড়ুন: থানকুনি পাতার ভেষজ উপকারিতা জেনে নিন।