জাফরান হলো ফুল থেকে সংগৃহীত এক প্রকারের মশলা যা সাধারণভাবে “জাফরান ক্রোকাস” নামে পরিচিত। জাফরন ফুলের প্রাণবন্ত গাঢ় লাল রঙের এবং শৈলীর গর্ভমুণ্ড, যাকে জাফরন আঁশ বলা হয়।
সংগ্রহ এবং শুকানোর মাধ্যমে জাফরন মশলা তৈরি করা হয় যা প্রধানত খাবারের স্বাদ এবং রঙের জন্য ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ওজন এর দিকে দিয়ে জাফরন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মসলা।
আজ আমরা এই জাফরান সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। জানবো জাফরান এর উপকারিতা। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
১. জাফরানে রয়েছে বিস্ময়কর রোগ নিরাময় ক্ষমতা। মাত্র ১ চিমটি জাফরান আপনাকে প্রায় ১৫টি শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। জাফরানে রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদপিণ্ডের সমস্যাজনিত রোগ দূর করে। জাফরান উচ্চ রক্তচাপ দূর করে।
২. হজমে সমস্যা এবং হজম সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে জাফরান।
৩. জাফরানের পটাশিয়াম আমাদের দেহে নতুন কোষ গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষ সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।
৪. এর নানা উপাদান আমাদের মস্তিষ্ককে রিলাক্স করতে সহায়তা করে, এতে করে মানসিক চাপ ও বিষন্নতা জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৫. জাফরানের ক্রোসিন নামক উপাদানটি অতিরিক্ত জ্বর কমাতে সহায়তা করে।
৬. নিয়মিত জাফরান সেবনে শ্বাস প্রশ্বাসের নানা ধরনের সমস্যা যেমন অ্যাজমা, পারটুসিস, কাশি এবং বসে যাওয়া কফ দূর করতে সহায়তা করে।
৭. মেয়েদের মাসিকের অস্বস্তিকর ব্যথা এবং মাসিক শুরুর আগের অস্বস্তি দূর করতে জাফরানের জুড়ি নেই। জাফরান মেয়েদের মাসিকের অস্বস্তিকর ব্যথা দূর করে।
৮. জাফরানের রয়েছে অনিদ্রা সমস্যা দূর করার জাদুকরী ক্ষমতা। ঘুমোতে যাওয়ার আগে গরম দুধে সামান্য জাফরান মিশিয়ে পান করলে অনিদ্রা সমস্যা দূর হবে।
৯. সামান্য একটু জাফরান নিয়ে মাড়িতে ম্যাসাজ করলে মাড়ি, দাঁত এবং জিহ্বার নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১০. গবেষণায় দেখা যায় জাফরান দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে এবং চোখের ছানি পড়া সমস্যা প্রতিরোধেও কাজ করে।
১১. জাফরানের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান বাতের ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা এবং দুর্বলতা দূর করতে অব্যর্থ ঔষুধ।
১২. অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে রেহাই দিতে পারে সামান্য একটুখানি জাফরান।
১৩. জাফরান দেহের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
১৪. মস্তিস্কের গঠন উন্নত করতে জাফরানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তা ক্ষমতা উন্নত করতে এটি খুবই কার্যকরী।
১৫. এটি আলজাইমার (Alzheimer) এবং পার্কিনসন (Parkinson) রোগ থেকে দূরে রেখে অক্সিডেটিভ (Oxidative) স্ট্রেস থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে বাঁচায়।
১৬. কিডনি, যকৃৎ এবং মুত্রথলির রোগ থেকে মুক্তি দেয় জাফরান। ক্যান্সার ও টিউমার নিরাময়েও জাফরান খুবই কার্যকরী। এছাড়াও আমাদের প্রত্যেকেরই প্রতিদিন ১ গ্লাস দুধের সাথে কয়কটি জাফরান মিশিয়ে খাওয়া উচিত।
এতে আমাদের অজানা অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ১ গ্লাস জাফরান মিল্ক আপনার বাচ্চার মস্তিষ্ক সক্রিয় করতে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া ভেতর থেকে ত্বক উজ্জ্বল করতে চাইলেও দুধের সাথে জাফরান মিক্স করে খান। কারণ ত্বকের বাহিরে যা কিছুই মাখি না কেন ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা আমাদের সবার চাওয়া থাকে।
জাফরান ত্বকে বলিরেখা দূর করতেও সহায়তা করে। এছাড়াও দুধের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে মাথায় লাগালে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
স্যাফরন বা জাফরানের সঠিক কিছু ব্যবহার আছে। আসুন স্টেপ বাই স্টেপ জেনে নেই এর সঠিক ব্যবহার।
১. জাফরান ও চন্দন মাস্ক:
প্রস্তুত প্রণালী:
একটি পাত্রে ৪ চা চামচ দুধের মধ্যে জাফরান দিয়ে জাফরানের হলুদ রঙ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। হলুদ রঙ আসলে এর সাথে চন্দন মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট বানিয়ে পুরো ফেইসে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট।
এই মাস্কটি স্কিনকে এক্সফোলিয়েট (Exfoliate) করে পরিষ্কার করবে এবং ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল করবে। এটি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করলেই কার্যকরী ফল পাওয়া যাবে।
২. ব্রণ দূর করতে জাফরান ও কাঁচা দুধ:
প্রথমে জাফরান আর কাঁচা দুধ মিশিয়ে দুই ঘন্টা রেখে দিন। এবার মিশ্রণটি ফেইসে লাগিয়ে একটু ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১-২ ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
৩. গ্লো ফেইস মাস্ক জাফরান, দুধ, অলিভ অয়েল, চিনি প্রথমে একটি বাটিতে ১ চামচ চিনি, ৩ চা চামচ কাঁচা দুধ, ৪-৫টি জাফরান আর একটু অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
এবার মিশ্রণটি ঘার সহ পুরা ফেইসে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন ব্যবহারেই আপনি পাবেন উজ্জ্বল ত্বক
৪. ড্রাই স্কিনের জন্য মাস্ক একটু অলিভ অয়েলের সাথে টক দই এবং জাফরান মিশিয়ে রাতের বেলা ফেইসে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
মিল্ক পাউডার, জাফরান এবং গোলাপজল ভালো করে মিশিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে নিন। এবার এই প্যাকটি ফেইসে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ভালো করে ধুয়ে নিন। এই প্যাক দু’টি ত্বকের শুষ্কতা দূর করার পাশাপাশি ত্বকের সেনসিটিভিটি, র্যাশ, এবং স্কিনের চামড়া ওঠা দূর করবে।
৫. জাফরান ও আমন্ড মাস্ক প্রথমে আমন্ড এবং জাফরান একসাথে ব্লেন্ড করে নিন। এবার এতে অল্প একটু মধু মিশিয়ে ফেইসে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আমন্ড এর ন্যাচারাল অয়েল আর জাফরানের এন্টি অক্সিডেন্ট মিলে স্কিনের ডেড সেলস, ডার্ক সার্কেল, ব্ল্যাক স্পট দূর করে স্কিনকে সফট আর হেলদি করে।
পরিশেষে বলা যায়, জাফরান এর গুণাবলী বলে শেষ করা যাবে না। বিভিন্ন কবিরাজগণ যখন কোন কোরআনের আয়াত কিংবা প্রয়োজনীয় দোয়া তাবিজ করে দেন তখনও জাফরানের কালি ব্যবহার করেন।
তাই নিজের বাসায় খানিকটা জাফরান রাখতে পারেন। কারণ, বিভিন্ন সময় আপনার নিজের প্রয়োজনেই এটা অনেক কাজে লাগবে। দরকারি জিনিস কষ্ট হলেও ঘরে রাখা ভালো।
আরও পড়ুন: তেতুল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।