জরায়ুর টিউমার নিয়ে বেশ ভালো আলোচনা হয় মহিলাদের মধ্যে। একেক জন না জেনেই বিভিন্নরকমের মন্তব্য করে। আসলে সবার আগে ভালো করে জানা উচিত।
জরায়ুতে যে কোন নারীর টিউমার হতে পারে। এই টিউমার সাধারণত শরীরের জন্য খুব বেশি ক্ষতিকর নয়। তবে সন্তান ধারণে সমস্যা তৈরী করে। আজ আমরা জরায়ুর টিউমার নিয়ে বিস্তারিত জানবো। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
মহিলাদের প্রজননক্ষম বয়সে জরায়ুতে সবচেয়ে বেশি যে টিউমারটি হতে দেখা যায় তা হলো ফাইব্রয়েড বা মায়োমা। জরায়ুর পেশির অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে এই টিউমারের সৃষ্টি হয়।
৩০ বছরের ঊর্ধ্বে নারীদের মধ্যে ২০ শতাংশই এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। ফাইব্রয়েড এক ধরনের নিরীহ টিউমার, এটি ক্যানসার বা বিপজ্জনক কিছু নয়।
তবে দুটো সমস্যার কারণে সুচিকিৎসা দরকার। প্রথমত, এর ফলে অতিরিক্ত মাসিক হওয়া এবং তার জন্য রক্তশূন্যতা হতে পারে। দ্বিতীয়ত, এটিকে বন্ধ্যাত্বের একটি অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এ ধারণা সব সময় সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। কেননা ২৫ শতাংশ ফাইব্রয়েড টিউমার আজীবন কোনো সমস্যাই করে না।
মোটামুটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কমবেশি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা অনিয়মিত মাসিক বা তলপেট ভারী বোধ হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হয়। তবে ২৭ থেকে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রেই কেবল এটি বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়ে উঠতে পারে, যদি নিচের ঘটনাগুলো ঘটে। যেমন-
১. যদি ফাইব্রয়েডের কারণে জরায়ু অতিরিক্ত বড় হয়ে যায়;
২. জরায়ুর ভেতরের দেয়ালে রক্তনালির সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ভ্রূণ ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে না এবং
৩. জরায়ু ও ফ্যালোপিয়ান টিউবের সংযোগস্থলে বা এমন কোনো জায়গায় টিউমারটির অবস্থান হয়, যা ভ্রূণকে সুস্থিত হতে বাধা দেয়।
যাদের বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যা দেখা যাচ্ছে বা বারবার গর্ভপাত হচ্ছে, তাঁদের ফাইব্রয়েড থাকলেও বন্ধ্যাত্বের অন্য কারণগুলোকে শনাক্ত করা উচিত।
কারণ, মূল সমস্যাটি ফাইব্রয়েড নাও হতে পারে। মায়োমেকটমি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ফাইব্রয়েডকে জরায়ুর দেয়াল থেকে তুলে এনে আবার তা সেলাই করে দেওয়া হয়।
জরায়ু কেটে ফেলার প্রয়োজন হয় না। বর্তমানে এই অস্ত্রোপচার পেট কেটে বা ছিদ্র করে উভয় পদ্ধতিতেই করা হয়। তবে অস্ত্রোপচার দরকার হোক বা না হোক, কিছু বিষয় জেনে রাখা জরুরি। যেমন-
১. এই অস্ত্রোপচারে বেশ রক্তপাত হতে পারে। ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের সময় জরায়ু কেটে ফেলে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।
২. অস্ত্রোপচারের পর আবার ফাইব্রয়েড হওয়ার সম্ভাবনা ১০ থেকে ১৫ ভাগ থাকে।
৩. অস্ত্রোপচারের পর গর্ভধারণের সম্ভাবনা ৪০ থেকে ৬০ ভাগ। এটি নির্ভর করে ফাইব্রয়েড টিউমারের সংখ্যা, আকার এবং অস্ত্রোপচারের সফলতার ওপর। ফাইব্রয়েড অস্ত্রোপচারের পর গর্ভধারণ করলে অবশ্যই ভালো সুযোগ-সুবিধা আছে এমন হাসপাতালে সন্তান প্রসব করাতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, বিয়ের পরে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই সন্তান নেয়ার চেষ্টা করুন। তখন যদি সন্তান না হয় তবে জরায়ুর বিভিন্ন পরীক্ষা করুন।
কোন কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষা না করেই ঘাবড়ে যাবেন না। কারণ, এই টিউমার এই ধরণ আপনার জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। তবে সন্তান ধারণে বাধা হতে পারে। প্রয়োজনে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুন: শিশুর স্মরণশক্তি বৃদ্ধির কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় জেনে নিন।