জন্ডিস রোগ এর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। সচরাচর প্রায় মানুষেরই জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়। জন্ডিস হলে শরীর হলুদ হলে যায়। আজ আমরা জন্ডিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
জন্ডিসকে অনেকেই রোগ বলে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে জন্ডিস (Jaundice) কোনো রোগ নয়, বরং রোগের উপসর্গ। ফরাসি Jaune শব্দ থেকে Jaundice নাম করণ করা হয়েছে।
ফরাসি ভাষায় শব্দটির অর্থ হলো হলুদ। এই রোগে আক্রান্ত হলে চামড়া ও চোখ হলুদ দেখায় কারণ শরীরে বিলিরুবিন নামে হলুদ রঙের পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়।
মানব দেহে বিলুরুবিনের স্বাভাবিক পরিমাণ ১ হতে ১.৫ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার। রক্তে এই উপাদানের মাত্রা এর দ্বিগুণ হলে বাইরে থেকে তা বোঝা যায়।
কিছু ক্ষেত্রে প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হয়ে যায়। রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে চামড়া পাণ্ডুর বা ফ্যাকাশে দেখা যায় বলে জন্ডিসকে আগে পাণ্ডুরোগ বলা হত। ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ডিসের একটি প্রধান কারণ হল ভাইরাস ঘটিত হেপাটাইটিস।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালের গ্যাস্ট্রো এন্ট্রোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মাহবুব আলমের সাথে আমরা এ রোগ নিয়ে কথা বলেছিলাম।
বিলুরুবিনের পরিমাণ নানা কারণে বেড়ে যেতে পারে। লিভার বা যকৃত কোষে নানা ধরণের ভাইরাসের আক্রমণের ফলে এমনটি হতে পারে অথবা যকৃতে যে বিলিরুবিন তৈরি হয় তা বের হয়ে যাওয়া পথে কোনো বাঁধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার কারণেও এমনটা হতে পারে।
ভাইরাসের কারণে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে চিকিৎসক’রা লিভার প্রদাহ বা প্যারেন্টাইনাল ডিজিজ বলেন।
যে সব ভাইরাস লিভার বা যকৃতে সংক্রমণ ঘটিয়ে বিপদ ডেকে আনে তার মধ্যে সেগুলোর নাম হলো এ, ই এবং বি ভাইরাস। অনেকেই হেপাটাইটিস বি’ ভাইরাসকে নীরব ঘাতক বলে অভিহিত করে থাকেন।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস যা মুলত লিভারকে আক্রমণ করে। এর সংক্রমণের ফলে পৃথিবীর অন্যতম ঘাতক ব্যাধি লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি বাহক এবং এদের ২০ শতাংশ লিভার ক্যান্সার ও সিরোসিসের কারণে মারা যেতে পারে।
বাস্তবে হেপাটাইটিস-বি এইডস রোগের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি সংক্রামক এবং প্রতি বছর এইডস রোগের কারণে পৃথিবীতে যত লোক মৃত্যুবরণ করে তার চেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণে।
তবে আশার কথা হলো হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা আছে। এ টিকা যে কোনো বয়সে নেয়া যায়। হেপাটাইটিস বি এর টিকা ৪ টি ডোজে নিতে হয়।
প্রথম তিনটি ১ মাস পর পর এবং চতুর্থ ডোজটি প্রথম ডোজের ১ বছর পর নিতে হয়। হেপাটাইটিস বি এবং ই ভাইরাস রক্তের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়।
এ ছাড়া অন্যান্য ভাইরাস দূষিত পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়। সাধারণ ভাবে বিশ্রাম নিলে জন্ডিসে আক্রান্ত রোগী চার থেকে ছয় সপ্তার মধ্যে ভাল হয়ে যায়।
কিন্তু জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য যদি কেউ হারবাল বলে কথিত কোনো চিকিৎসা পদ্ধতির দিকে ঝুকেন তবে রোগ জটিল হয়ে উঠতে পারে।
ছয় সপ্তাহ দুরের কথা ছয় মাসেও রোগী ভাল নাও হতে পারেন। কাজেই এ ধরণের চিকিৎসা থেকে রোগীর স্বার্থেই সবার দূরে থাকা উচিত।
তা না হলে চিকিৎসা করাতে গিয়ে রোগকে আরো জটিল করে তোলা হবে। তাই কোনো অবস্থায় হাতুড়ে ডাক্তার বা কবিরাজ দিয়ে জন্ডিসের রোগীর চিকিৎসা করাবেন না।
আরও পড়ুন: যৌন রোগ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার কয়েকটি জটিল টিপস।