প্রুরিটাস বা চুলকানি হলো একটি রোগ লক্ষণ। এটি সাধারণত দু’ধরনের হয়ে থাকে। মহিলাদের বাহ্যিক যৌনাঙ্গের চুলকানি এবং পায়খানার রাস্তার চারপাশে চুলকানি।
এটি এমন এক অশান্তিদায়ক অনুভুতি যা মানুষকে খামচাতে অর্থাৎ চুলকাতে উৎসাহিত করে থাকে। খামচানো থেকে মাঝে মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের রোগের সংক্রমণ দেখা দেয়।
প্রুরিটাস বা এসব রোমাঞ্চকর চুলকানির উল্লেখযোগ্য কারনগুলির মধ্যে আছে এলার্জি, জীবাণু সংক্রমণ, জন্ডিস, লিম্ফোমা, পাইলস, ডারমাটাইটিস (Contact Dermatitis), সোরিয়াসিস (Psoriasis), ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis), সুতা কৃমি, ত্বকের ইরিটেশন, ক্যানডিডিয়াসিস, ছত্রাকের (Fungus) আক্রমণ ইত্যাদি।
সর্বোপরি মানসিক (Psychogenic) কারণেও প্রুরিটাস হতে পারে। এসব জায়গা দীর্ঘদিন একনাগারে চুলকানোর কারনে ফুলে মোটা হয়ে যেতে পারে এবং শক্ত হয়ে যেতে পারে।
সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো এটি ক্যান্সারে রূপ নিয়ে রোগীর জীবনকে মৃত্যুর দুয়ারে নিয়ে হাজির করতে পারে।
চুলকানি’র লক্ষণ অনুসারে ওষুধ:
Calendula Officinalis: ক্যালেণ্ডুলা (ঔষধটি ভ্যাসেলিনের সাথে মিশিয়ে মলম আকারে ব্যবহার করে) অথবা আরো কিছু ঔষধ আছে যা ব্যবহার করে সাময়িক আরাম পেতে পারেন।
কিন্তু এই জাতীয় চিকিৎসার উপকার নেহায়েত সাময়িক এবং সেই কারণেই অযৌক্তিক। স্থায়ীভাবে রোগ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসা করতে হবে রোগের কারণ অনুযায়ী। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো রোগীর মায়াজম বা রোগপ্রবনতা (Miasm/ Susceptibility) অর্থাৎ সামগ্রিক মনো দৈহিক বা ধাতুগত দিকে লক্ষ্য রেখে ঔষধ নির্বাচন করতে হবে।
তবে প্রায় ক্ষেত্রেই নোসোড (Nosode) বা জীবাণু থেকে তৈরী ঔষধগুলির সাহায্য নিতে পারেন। পাশাপাশি যকৃত (Liver) এবং প্লীহাতে (Spleen) কোনও সমস্যা আছে কিনা তাও লক্ষ্য করা দরকার। সেক্ষেত্রে এসব সমস্যা আগে দূর করতে হবে।
Caladium Seguinum: বার্নেটের মতে ক্যালাডিয়াম ঔষধটি (শক্তি ৬, ১২, ৩০, ২০০) অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রুরিটাস নির্মূলে সফল হয়ে থাকে।
Mercurius Sol: মার্ক সল ঔষধটির প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো প্রচুর ঘাম হয় কিন্তু রোগী আরাম পায় না, ঘামে দুর্গন্ধ বা মিষ্টি গন্ধ থাকে, ঘুমের মধ্যে মুখ থেকে লালা ঝরে, পায়খানা করার সময় কোথানি, পায়খানা করেও মনে হয় আরো রয়ে গেছে, অধিকাংশ রোগ রাতের বেলা বেড়ে যায়। রোগী ঠান্ডা পানির জন্য পাগল। ঘামের কারণে যাদের কাপড়ে হলুদ দাগ পড়ে যায়, তাদের যেকোন রোগে মার্ক সল উপকারী।
Sepia: ক্যালাডিয়াম ঔষধটির পরে আসে সিপিয়া ঔষধটির পালা। এটিও প্রুরিটাসের একটি সেরা ঔষধ।
Sulphur: সালফার চুলকানির একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। সালফারের প্রধান প্রধান লক্ষণগুলো যেমন সকাল ১১টার দিকে ভীষণ খিদে পাওয়া, শরীর গরম লাগা, রাতে চুলকানি বৃদ্ধি পাওয়া, গরমে চুলকানি বৃদ্ধি পাওয়া, মাথা গরম কিন্তু পা ঠান্ডা, মাথার তালু-পায়ের তালুসহ শরীরে জ্বালাপোড়া ইত্যাদি পাওয়া গেলে অবশ্যই সালফার প্রয়োগ করতে হবে।
Lapis Alba: লেপিস স্ত্রী যৌনাঙ্গের চুলকানিতে একটি কাযর্কর ঔষধ। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো জ্বালাপোড়া, সূঁই ফোটানো-হুল ফোটানো ব্যথা, রাক্ষুসে ক্ষুধা, মিষ্টি খাবারের প্রতি ভীষণ লোভ ইত্যাদি।
শুধুমাত্র আপনাদের জ্ঞান অর্জনের স্বার্থে এখানে ওষুধের নামগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। অনুগ্রহ করে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিরেকে কেউ নিজেই নিজের উপর ওষুধ প্রয়োগ করতে যাবেন না।
এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। এখানে যে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আপনার যদি সেসব সমস্যা থাকে তবে একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আশা করি, উপকৃত হবেন।
আরও পড়ুন: অনিদ্রা দূর করার সর্বোত্তম উপায় – হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা