চর্মরোগ দেখা দেয় গায়ের ওপরের চামড়ায়। ওপরের চামড়ায় দেখা দেয় বলেই যে ছোটখাটো রোগ তা কিন্তু নয়। অনেক রোগ আছে যেগুলো ভেতরের রোগের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
ভেতরের রোগ সহজে সারতে চায় না, কিংবা সারতে সময় লাগে অনেক দিন। ওপরের চামড়ায় চর্মরোগগুলি ময়লা পরিষ্কার করলেই সেরে যায়।
কিন্তু ভেতরের রোগ ওভাবে সারানো যায় না, তার জন্য ওষুধ খেতে হবে নিয়মিত এবং প্রয়োজনে বাইরেও ওষুধ লাগাতে হবে। আবার অনেক সময় বাইরে থেকে মনে হয় রোগটি সেরে গেছে, আসলে কিন্তু তখনও সারেনি – ভেতরে বর্তমান আছে রোগটি।
ভেতরে অর্থাৎ চামড়ার গভীরে যেসব চর্মরোগ হয় সেগুলো শ্বাসযন্ত্রকে পর্যন্ত আক্রমণ করে থাকে। এসব রোগকে ওষুধের দ্বারা আরও ভেতরে পর্যন্ত প্রবেশ করানো যায়, কিন্তু তার পরিণাম ভালো হয় না।
এ অবস্থায় মৃত্যুও ঘটতে পারে। সুতরাং যে কোনো চর্মরোগকে ওষুধের দ্বারা বাইরে বের করে আনতে হয়, তারপর ওষুধের দ্বারাতেই সেগুলোকে নির্মূল করতে হয়। এবার চর্মরোগগুলির বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
চর্মরোগ ফোঁড়া (Pierce):
সাধারণত রক্ত দূষিত হলে ফোঁড়া হয়। আবার অনেক সময় আঘাত লাগার কারণেও রোগটা হতে পারে। প্রথমে জায়গাটা লাল হয়, সামান্য ব্যথা হয়, পরে সেখানে ফুলে ওঠে এবং ব্যথা আরো বাড়ে।
ফোঁড়া পাকলে তার মধ্যে পুঁজরক্ত জমে। পরে স্বাভাবিকভাবেই ফোঁড়ার মুখ হয় এবং সেখান দিয়ে ভেতরের পুঁজরক্ত বেরিয়ে যায়। কিন্তু কোনো কারণে যদি মুখ হতে দেরি হয় তাহলে গরম সেঁক দেওয়া দরকার।
সারাদিনে ৪/৫ বার গরম পানির সেঁক দিলে ফোঁড়া পুরোপুরি পেঁকে যায় এবং ভেতরের দূষিত পদার্থ বেরিয়ে আসে। ফোঁড়া ওষুধের দ্বারা বসিয়ে দেওয়া যায়। পরে অন্যত্র তা আত্মপ্রকাশ করে। ফোঁড়া বসিয়ে দিলে অন্য ক্ষতিও হতে পারে।
চিকিৎসা:
আক্রান্তস্থল লাল হলে, ফুলে উঠলে, ব্যথা হলে, ভেতরে দপ-দপ বা ধক-ধক করলে- বেলেডোনা ৩x।
পুঁজ হবার উপক্রম দেখা গেলে- মার্ক সল ৬।
ফোঁড়া পাকার মতো অবস্থা দেখা দিলে- হিপার সাল্ফ ৬। এ ওষুধটি ফোঁড়াকে পাকিয়ে দেয়। যদি ওষুধটিতে কাজ না হয় তাহলে- সাইলিশিয়া ৩০।
ফোঁড়ার ঘা শুকানোর জন্য ওষুধ- অলিভ অয়েলসহ ক্যালেন্ডুলা (মাদার)।
সব রকম ফোঁড়ার জন্য উপকারী ওষুধ- গুয়েকাম। একসঙ্গে ৫ ফোঁটা ওষুধ খাওয়াতে হবে।
চর্মরোগ বিষফোঁড়া:
এই ফোঁড়াটির আকার সাধারণত ছোটমতো হয়, কিন্তু অত্যন্ত কষ্টদায়ক। আক্রান্তস্থলে ব্যথা হয় খুব, যন্ত্রণাও হয়। ভেতরে টন-টন করে।
অনেক সময় সেখানে আঙুল ঠেকানোও যায় না। জ্বরও হয় অনেক সময়। বিষফোঁড়া সম্পূর্ণ না সারা পর্যন্ত রোগীকে কষ্টভোগ করতে হয়।
চিকিৎসা:
প্রথম মুখেই রোগীকে খাওয়াতে হবে- হাইপেরিকাম ২০০। সেই সঙ্গে ফোঁড়ার ওপর সেঁক দেওয়া দরকার।
রক্ত দূষিত হলে এবং এই ফোঁড়া দেখা দিলে, সেই সঙ্গে জ্বালা থাকলে- আর্সেনিক ৩০ বা অ্যাম্ব্রাসিস ৩০।
ফুস্কুড়ি বসন্তের মতো হলে- ম্যালেন্ড্রিনাম ৩০।
ফুস্কুড়ি লালচে রঙের হলে- ল্যাকেসিস ৬।
কোনো রকম ফোঁড়ায় তেল লাগাতে নেই। তবে অলিভ অয়েলের সঙ্গে ক্যালেন্ডুলা (মাদার) মিশিয়ে লাগালে ঘা শুকিয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি।
চর্মরোগ ক্ষত (Ulcer):
ক্ষত হয় নানা কারণে। আঘাত লাগার জন্য ক্ষত হতে পারে, ফেটে বা ছড়ে যাওয়ার জন্য ক্ষত হতে পারে, আগুনে পুড়ে গেলেও ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে।
আবার অনেক সময় রক্ত দূষিত হবার কারণেও ক্ষত হতে পারে। ক্ষত হলে সেখানে ঘায়ের সৃষ্টি হয়। আক্রান্তস্থলে ব্যথা হয়, জ্বালা করে, দপ-দপ করে, আবার কখনো বা কুট-কুট করে। ক্ষতের রস বা পুঁজরক্ত খুবই দূষিত। তাই সব সময় ঢেকে রাখা উচিত।
তরুণ ক্ষতে চিকিৎসা:
রক্ত দূষিত হয়ে ক্ষত হলে- লাইকোপোডিয়াম ৩০।
পুরনো ক্ষতে- মাইরিস্টিকা ১২।
পুঁজ জন্মালে- মারকিউরিয়াস ৬।
পুঁজ বের করার জন্য- হিপার সালফার ৩০।
কোনো ওষুধে কাজ না হলে- সালফার ৩০।
ক্ষতের শ্রেষ্ঠ ওষুধ- আর্সেনিক ৬।
পুরনো ক্ষতের চিকিৎসা:
উপদংশ-জনিত ক্ষতে- নাইট্রিক অ্যাসিড ৬ বা মারকিউরিয়াস ৬।
ক্ষত পঁচবার উপক্রম হলে- ল্যাকেসিস ৬।
দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজরক্ত বের হতে থাকলে- হিপার সালফার ৬।
কোনো ওষুধে কাজ না হলে- সাইলিশিয়া ২০০ বা পালসেটিলা ৬।
এ রোগের শ্রেষ্ঠ ওষুধ- আর্সেনিক বা সিলিকা ৩০০।
ক্যানসার (Cancer):
রোগটি অতীব ভয়াবহ। অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ চিকিৎসক ভিন্ন রোগের চিকিৎসায় হাত দেওয়া উচিত নয়। রোগের প্রথম অবস্থায় ছোট্ট অর্বুদের সৃষ্টি হয়। পরে অর্বুদটি বড় হয়।
বেদনা থাকে, জ্বালা করে। রাত্রে শোবার পর রোগের বৃদ্ধি ঘটে। হাত-পা ঠান্ডা হয়, মাথাটা গরম হয়। রোগী বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
চিকিৎসা:
বেদনা ও জ্বালা থাকলে- আর্সেনিক ৬।
বুকে বা স্তনের ওপর অর্বুদ হলে- কোনায়াম ৩০ বা কন্ডিউরেঙ্গো ১x।
রোগের প্রথম অবস্থায়- বেলেডোনা ৬ বা হাইড্রাস্টিস ১x।
রাত্রিকালীন রোগবৃদ্ধি, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর নিস্তেজ ভাব, হাত-পা ঠান্ডা, মাথা গরম প্রভৃতি লক্ষণে- সালফার ৩০।
এ রোগের শ্রেষ্ঠ ওষুধ- কারসিনোসিন ৩০-২০০। ওষুধটি ১৫ দিন পর পর এক মাত্রা সেব্য।
চর্মরোগ একজিমা (Eczema):
প্রথমে আক্রান্তস্থল লাল হয় ও ফুস্কুড়ির মতো দেখা দেয়। ঐ ফুস্কুড়ির ভেতরে থাকে জলীয় পদার্থ। ফুস্কুড়ি খুব চুলকায়। চুলকালে ফুস্কুড়ি গলে যায় ও সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
ক্ষত ক্রমশঃ বড় হয় ও তাতে পুঁজ-রক্ত জমতে থাকে। রোগটা বাইরের মনে হয় বটে কিন্তু এর বিস্তৃতি চামড়ার অনেক ভেতরে পর্যন্ত। আক্রান্তস্থলে ব্যথা হয়, জ্বালা করে, আবার কখনো বা চুলকায়। এ ক্ষত সহজে সারতে চায় না।
বেশ কিছুদিন চিকিৎসা করলে তবে সারে। অনেক সময় ওপরে কড়া পড়ার মতো দেখতে হয় ক্ষতটা। ওপরের মামড়ি তুললে দেখা দেয় দগদগে ঘা।
চিকিৎসা:
চামড়া বেশি লাল হলে- আর্সেনিক ৩।
গ্রন্থিতে একজিমা হলে- মারকিউরিয়াস ৩ (প্রথমে), হিপার সালফার ৬ (পরে)।
একেবারে প্রথম অবস্থায় রোগীকে খাওয়ানো দরকার- রাসটক্স ৩।
আর একটি একজিমার ওষুধ- ল্যাপ্পামেজর (মাদার)। দু’ফোটা করে দিনে তিনবার খাওয়াতে হবে। ৭ দিন একই নিয়মে খাওয়ানো দরকার।
ক্ষত থেকে রস ঝরতে থাকলে- পেট্রোলিয়াম ৩০ বা সালফার ৩০।
চর্মরোগ কড়া (Corns):
পায়ের তলায় কাঁটা, পাথর বা ইটের টুকরো ফুটে গিয়ে অনেক সময় কড়া পড়ে। জুতা পরায় চামড়ার ঘর্ষণেও কড়া পড়ে থাকে। শরীরের কোথাও আঘাত লেগেও কড়া পড়ে।
কড়া পড়লে ওপরটা শক্ত হয়ে থাকে। অনেকে কড়ার ওপরের অংশ ব্লেড বা ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে দেন। কাটার সময় লাগে না।
কিন্তু এভাবে কড়া কাটা কখনই উচিত নয়। কড়ার নিচের নরম অংশ কেটে গেলে রক্ত বেরুতে থাকবে – সে রক্ত সহজে বন্ধ করা যায় না। তাছাড়া ক্ষতেরও সৃষ্টি হতে পারে। এই ক্ষত খুবই ভোগায়। সারতে সময় নেয় বহুদিন।
চিকিৎসা:
ক্ষতযুক্ত কড়ায় প্রদাহ থাকলে- নাইট্রিক অ্যাসিড ৩০।
বাইরে লাগাবার ওষুধ- থুজা (মাদার)।
ধাতুগত দোষে কড়া পড়লে দিতে হবে- সালফার ৩০।
তরুণ কড়ায় খাওয়াতে হবে- ফেরাম পিউরিক ৩।
আর একটি লাগাবার ওষুধ- ক্যালেন্ডুলা (মাদার)। ওষুধটি গরম করে কড়ার ওপর লাগালে উপকার হয়।
খুস্কি (Dandruff):
খুস্কি হয় মাথায়। অনেকে আবার একে ‘মরামাসও’ বলে থাকেন। চুলের গোড়ায় মাথার খুলির ওপরে মাছের আশের মতো এক রকম পদার্থ জমে।
চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ালে এই সব খুস্কির টুকরো অংশ ঝরতে থাকে। মাথার চুল খুস্কির জন্য নোংরা দেখতে হয়। কখনো কখনো এই সব খুস্কি খুব চুলকায়।
সাবান বা শ্যাম্পু দিলে খুস্কির কিছু অংশ উঠে যায় বটে, কিন্তু আবার জমে। চিরুনি দিয়ে বার-বার আঁচড়ালে প্রচুর পরিমাণে খুস্কির টুকরো ওঠে।
কিন্তু এভাবে আঁচড়ালে বা সাবান-শ্যাম্পু দিয়ে খুস্কি ভালো করা যায় না। এ রোগ সারাতে হলে নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
দীর্ঘদিন ওষুধ ব্যবহার করলে খুস্কি ভালো হয়। দিনে বার-কয়েক মাথা আঁচড়াতে হবে চিরুনি দিয়ে, সেই সঙ্গে ওষুধও সেবন করতে হবে।
চিকিৎসা:
খুস্কির শ্রেষ্ঠ ওষুধ- সালফার ৩০।
খুস্কি যদি শুকনো খসখসে হয়- আর্সেনিক ৩।
খুস্কি শুকনো না হলে- সিপিয়া ৬।
খুস্কি যদি পুরনো হয়- কেলি সালফ্ ৩x।
চর্মরোগ আমবাত (Urticaria):
সাধারণত কোষ্ঠবদ্ধতা, অজীর্ণতা-দোষ প্রভৃতি কারণে আমবাত হয়। তবে গুরুপাক দ্রব্য, আচার, কাঁকড়া বা চিংড়ি খেয়েও এ রোগ হতে পারে।
সারা গায়ে প্রথমে লাল লাল চাকা চাকা দাগ পড়ে, তারপর ঐসব জায়গায় ফুলে ওঠে। বোলতা কামড়ালে যেভাবে ফুলে ওঠে ঠিক সে-রকম দেখায়।
আমবাত হলে খুব চুলকায়। এ রকম হলে অনেক সময় জ্বর হয়, প্রদাহও হতে পারে। রোগীর তৃষ্ণা বা তৃষ্ণা তৃষ্ণা ভাব থাকে।
চিকিৎসা:
সব রকম আমবাতের উপকারী ওষুধ- এপিস মেল ৩০।
আর একটি ভালো ওষুধ- আর্টিকা ইউরেন্স ৩x।
পানিতে ভিজে আমবাত হলে- ডালকামারা ৩০ বা রাসটক্স ১২।
রোগীর জ্বর হলে, প্রদাহ থাকলে এবং সেই সঙ্গে পিপাসা থাকলে- অ্যাকোনাইট ৩০।
পাকাশয়ের গোলযোগ হেতু আমবাত হলে- পালসেটিলা ৬ বা নাক্সভমিকা ৬।
এক্ষেত্রে আর একটি উপকারী ওষুধ- অ্যান্টিম ক্রুড ৬।
রোগ পুরনো হলে খাওয়াতে হবে- নেট্রাম মিউর ৩০।
যদি কোনো ওষুধে কাজ না হয় তাহলে খাওয়াতে হবে- স্কুকাম চক্ ৩x বিচূর্ণ।
এই রোগে প্রলেপ লাগানোর ওষুধ- আর্টিকা (মাদার)।
চর্মরোগ চুলকানি ও পাঁচড়া (Itching & Scabies):
দীর্ঘদিন শরীরে সাবান না দিলে চামড়ার ওপরে ময়লা পড়ে। দিনের পর দিন এইভাবে ময়লা জমলে একটা বিশ্রী রকমের গন্ধ বের হয়।
ময়লার এই আস্তরণ থাকায় চামড়ায় এক রকমের কীটাণু বাঁসা বাধে। এইসব কীটাণুই সৃষ্টি করে চুলকানি ও পাঁচড়া। এ দুটোই হলো চর্মরোগ।
চামড়ার ওপরেই এগুলো হয়। তবে দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করালে ঘা অনেকটা ভেতরে চলে যায়। তখন সারাতে যথেষ্ট সময় লাগে।
চুলকানি ও পাঁচড়া হলে ব্যথা হয়, জ্বালা করে, কখনো বা কুটকুট করে চুলকায়। পাঁচড়ায় পুঁজ কিংবা রক্ত’ও জমতে পারে।
চিকিৎসা:
এ রোগের শ্রেষ্ঠ ও উপকারী ওষুধ- সালফার ৩০ বা মারকিউরিয়াস ৬।
যদি ওষুধ দুটিতে কাজ না হয় তাহলে খাওয়াতে হবে- কষ্টিকম ৬।
চুলকানি বেশি হলে এবং খুব চুলকাতে থাকলে- মেজেরিয়াম ৩০ বা ফ্যাগোপাইরাম ৩০।
উপরের ওষুধগুলোতে কাজ না হলে দিতে হবে- আর্সেনিক ৬।
চর্মরোগ দুষ্টব্রণ (Carbuncle):
এটিও এক জাতের ফোঁড়া। রক্ত দূষিত হয়ে পড়লে এ রোগ দেখা দেয়। স্বাস্থ্য ভঙ্গের কারণেও রোগটা হতে পারে। ফোঁড়াটা দেখতে বোলতার চাকের মতো।
মুখ হয় অনেক। প্রতিটি মুখ দিয়ে পুঁজ-রক্ত বের হয়। ফোঁড়া পাকলে মুখের কাছে সাদা হয়, তারপর ফেটে যায় আপনা-আপনি। দুষ্টব্রণ রোগীকে খুবই কষ্ট দেয়।
প্রচন্ড ব্যথা হয়, যন্ত্রণা থাকে, টনটন করে, মাঝে মাঝে কিটকিট করে, সামান্য চুলকানিও থাকে। পুঁজ-রক্ত সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে না গেলে রোগী আরাম পায় না।
এ অবস্থায় জ্বরও হতে পারে। জ্বালা-যন্ত্রণা রাতের দিকেই বেশি হয়। অস্থিরতা, দুর্বলতা, তৃষ্ণা প্রভৃতি এ রোগের অন্যান্য লক্ষণ।
চিকিৎসা:
এ রোগের শ্রেষ্ঠ ওষুধ- অ্যানথ্রাসিনাম ৩০। ওষুধটি রোগের প্রথম অবস্থায় খাওয়ালে খুব উপকার হয়।
তরুণ রোগে- আর্নিকা ৩০।
রাতের দিকে রোগ বৃদ্ধি পায়, জ্বালা করে, দুর্বলতা ও অস্থিরতা থাকে, তৃষ্ণা থাকে প্রভৃতি লক্ষণে- আর্সেনিক ৩।
এই অবস্থায় জ্বর থাকতে পারে বা জ্বর-জ্বর ভাব হতে পারে। রোগী যদি মদ্যপানকারী হয় তাহলে তাকে খাওয়াতে হবে- নাক্সভমিকা ৩০।
অনিদ্রা, চকচকে দাগ প্রভৃতির ক্ষেত্রে- বেলেডোনা ৩x।
এ অবস্থায় বাইরে লাগাবার ওষুধ- বেলেডোনা Q।
দুষ্টব্রণের রঙ যদি কালো হয় তাহলে- কার্বোভেজ ৬।
দুষ্টব্রণ থেকে যখন পুঁজ-রক্ত ঝরতে থাকবে তখন রোগীকে খাওয়াতে হবে- সিলিকা ৬।
চর্মরোগ কাউর (Eczema):
এ রোগটা এক ধরণের একজিমা। যে-সব কারণে একজিমা হয়, এটিও হয় সেসব কারণে। রোগটাকে পাঁচড়া রোগের অন্তর্ভুক্তও বলা চলে। সাধারণত কাউর ঘা হয় পায়ে।
চিকিৎসা:
এ রোগের পক্ষে উপকারী ওষুধগুলো হলো- সিলিকা ৩০, মারকিউরিয়াস সল ৬, সালফার ৩০, রাসটক্স ৬, গ্রাফাইটিস ৩০ ও মাইরিস্টিকা ৬। যে-কোন একটি ওষুধ সেব্য।
নখের রোগ (Nail Diseases):
নখের নানারকম রোগ হতে দেখা যায়। নখ বসে যাওয়া, নখ পুরু বা মোটা হওয়া, নখের চারপাশে ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া, নখ ফেটে যাওয়া প্রভৃতি রোগ হয়।
রোগগুলো খুব যন্ত্রণাদায়ক। ব্যথা হয় প্রচন্ড, সেই সঙ্গে যন্ত্রণাও থাকে অনবরত। ক্ষতস্থানে কিছু ঠেকলেই যন্ত্রণায় ককিয়ে ওঠে রোগী।
চিকিৎসা:
নখ পুরু হলে- গ্রাফাইটিস ৬।
নখ বসে গেলে- নাইট্রিক অ্যাসিড ৬। ২/৩ ঘন্টা অন্তর খাওয়াতে হবে।
লাগাবার ওষুধ- হাইড্রাস্টিস (মাদার)। ওষুধটি ভেসলিনের সঙ্গে মিশিয়ে ক্ষতে লাগাতে হবে।
নখের চারপাশে ক্ষত হলে- ফসফরাস ৬।
নখ ভেঙে বা ফেটে গেলে- সিলিকা ৬ বা আর্সেনিক ৩।
রোগ অনেক দিনের পুরনো হলে- থুজা ২০০ বা অ্যান্টিম ক্রুড ২০০।
চর্মরোগ আঙুলহাঁড়া (Whitlow):
আঙুলের ডগার দিকে এক রকমের ফোঁড়া হয়। সাধারণ ফোঁড়ার মতো প্রথমে জায়গাটা লাল হয়, পরে দেখা দেয় ফোঁড়া। এর পরে ফোঁড়ায় পুঁজ-রক্ত জমে।
তখন প্রচন্ড ব্যথা ও যন্ত্রণা হয়। ক্ষতের ভেতরে কট-কট ধক-ধক করতে থাকে। ফোঁড়া পেঁকে পুঁজ-রক্ত না বের হয়ে যাওয়া পর্যন্ত যন্ত্রণা কমে না।
ছোট বেগুনের মধ্যে গর্ত করে তার মধ্যে ঐ আঙুলটি ঢুকিয়ে রাখলে একটু আরাম পায় রোগী। এ রকম হলে হাত বেঁধে ওপর দিকে তুলে রাখা উচিত – কারণ ঝুলে থাকলে যন্ত্রণা বাড়ে।
চিকিৎসা:
রোগের প্রথম অবস্থায় লাগাবার ওষুধ- ফসফরাস ৩x। ওষুধটি ওপরে লাগিয়ে দিলে রোগ বাড়তে পারে না।
রোগের তরুণ অবস্থায় খাওয়াতে হবে- বেলেডোনা ৬ বা আর্নিকা ৬।
যদি এতে কাজ না হয় তাহলে খাওয়াতে হবে- মারকিউরিয়াস ৬।
পুঁজ জমলে- হিপার সালফার ৬ বা সিলিকা ৬।
রোগ যদি খুব ভোগায় অর্থাৎ রোগের প্রবল অবস্থায় খাওয়ানো দরকার- সাইলিশিয়া ২০০।
আরও কয়েকটি চর্মরোগ এর চিকিৎসা:
আঁচিল: খাওয়ার ওষুধ- থুজা ৩০, নাইট্রিক অ্যাসিড ৩০, কষ্টিকম ২০০। যেকোন একটি ওষুধ সেব্য। লাগানোর জন্য- থুজা (মাদার)।
ছুলি: পুরুষদের সেবনের ওষুধ- নেট্রাম মিউর ৩। মেয়েদের সেবনের ওষুধ- সিপিয়া ৬।
দাদ: সকালে- আর্সেনিক ৬ ও রাতে- সিপিয়া ৬। ৭ দিন সেব্য। এতে কাজ না হলে- সালফার ৩০। এ রোগের একটি শ্রেষ্ঠ ওষুধ- ব্যাসিলিনাম ২০০। কার্বলিক সাবান দিয়ে প্রতিদিন ক্ষত পরিষ্কার করা উচিত।
গা ফাটা: লাগানোর ওষুধ- ট্যামাস (মাদার)। গ্লিসারিনের সঙ্গে সমভাগে মিশিয়ে লাগাতে হয়। শীতকালে গা ফাটলে খাওয়াতে হবে- অ্যাগারিকাস ৬।
ঘামাচি: খাওয়ার ওষুধ- রাসটক্স ৬ বা অ্যাকোনাইট ৩। বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে অনেক সময় ঘামাচি ভালো হয়।
আরও পড়ুন: সোরিয়াসিস (Psoriasis) নামক চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার গল্প।
পরিশেষে বলা যায়, লক্ষণের সাথে মিলে গেলেও নিজে নিজে ওষুধ সেবন করতে যাবেন না। কারণ, লক্ষণের সাথে মিলে গেলেও একজন চিকিৎসক আরো অনেক কিছু জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে আপনার জন্য আসল ওষুধটি নির্বাচন করেন।
সর্বোত্তম উপকারিতার জন্য শরীরে কোথাও কোনো চর্মরোগ দেখা দিলে দেরী না করে নিকটস্থ কোনো অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা গ্রহণ করুন।