মিসরীয় লোক কাহিনী থেকে জানা যায়, সৌন্দর্য্য বর্ধনকারী প্রকৃতি কন্যার লাতিন নাম অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী। বাংলায় যার নাম হলো ‘তরুণী ঔষধি গাছ’।
ভেষজ হিসেবে এর কদর অতুলনীয়। তবে আমাদের দেশে এটি ঘৃতকুমারী নামেই বেশি পরিচিত। অনেকে একে শুধু ‘কুমারী’ নামেও ডাকে।
ঘৃতকুমারী একটি রসালো উদ্ভিদ প্রজাতি। ‘অ্যালো’ পরিবারের একটি উদ্ভিদ ঘৃতকুমারী। মানবদেহের জন্য যে ২২টি অ্যামিনো অ্যাসিড প্রয়োজন তার ৮টিই রয়েছে ঘৃতকুমারীতে।
এছাড়া এতে রয়েছে ২০ রকমের খনিজ পদার্থ। একইসাথে ঘৃতকুমারীতে রয়েছে ভিটামিন A, B1, B2, B6, B12, C এবং E। গোটা বিশ্বজুড়ে এই গাছের জুস ক্যাপসুল বা জেলের আকারে বিক্রি হচ্ছে।
ঘৃতকুমারী বহু বর্ষজীবি ভেষজ উদ্ভিদ এবং দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মতো। এর পাতা পুরু, দুধারে করাতের মতো কাঁটা এবং ভেতরে থাকে স্বচ্ছ পিচ্ছিল শাঁস।
ঘৃতকুমারী চাষ করা যায় প্রায় সব রকম জমিতেই। তবে দোআঁশ ও অল্প বালি মিশ্রিত মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
নিয়মিত পানি সেঁচের দরকার হলেও গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সাধারণত শেকড় থেকে বেরুনো ডালের সাহায্যে এই গাছের বংশবৃদ্ধি হয়।
ঘৃতকুমারী গাছের ব্যবহার:
ঘৃতকুমারীর পাতা ও শাঁস দুই-ই ভেষজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ভেষজ কি তা আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। বাজারে ঢুকলেই দেখা যায়, অনেকে ভ্যানে করে ঘৃতকুমারীর রস বিক্রি করছেন।
নানা ধরণের গুণাবলী:
ঘৃতকুমারী পাতার রস ত্বকের ওপর লাগালে ত্বকের উজ্জলতা বাড়ে এবং রোদে পোড়া ত্বকের ক্ষেত্রেও উপকারী।
নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস পানে পরিপাক প্রক্রিয়া সহজ হয়। ফলে দেহের পরিপাকতন্ত্র সতেজ থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
তাছাড়া ডায়রিয়া সারাতেও ঘৃতকুমারীর রস দারুণ কাজ করে। নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস সেবনে শরীরের শক্তি যোগানসহ ওজনকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
দেহে সাদা ব্লাড সেল গঠন করে যা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে। দেহ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণে ঘৃতকুমারীর রস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ওষুধের কাজ করে।
ঘৃতকুমারীর রস সেবনের ফলে শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের মিশ্রণ ও খনিজ পদার্থ তৈরি হয় যা আমাদেরকে চাপমুক্ত রাখতে এবং শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
ঘৃতকুমারীর শরবত:
প্রথমে ঘৃতকুমারীর জেল বা শাস চামচ দিয়ে বের করে আনতে হবে। ভেতর থেকে শাঁস নিয়ে পানি, মধু, বিট লবণ, কাঁচা মরিচ দিয়ে মিশিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে। কাঁচা মরিচের বদলে লেবু আর গোল মরিচের গুড়াও দেওয়া যায়।
উপকারিতা:
ঘৃতকুমারী কোষ্ঠকাঠিন্য ও খুশকি সারাতে ভালো কাজ করে। মেছতা দূর করার আরেকটি উপাদান হলো- অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী পাতার জেল।
এই জেলে রয়েছে ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর করার ক্ষমতা। ঘৃতকুমারী পাতার রস, ২-৪ চামচ করে দিনে একবার খেলে যকৃতের ক্রিয়া বৃদ্ধি করে।
একজিমায় ঘৃতকুমারী শাঁস প্রতিদিন নিয়ম করে কয়েক সপ্তাহ লাগালে চুলকানি খেকে আরাম পাওয়া যায়। কোমরে ব্যথা হলে শাঁস অল্প একটু গরম করে মালিশ করতে বলেন ভেষজ।
দেহ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণে ঘৃতকুমারীর রস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ওষুধির কাজ করে। ঘৃতকুমারীর রস হাড়ের সন্ধিকে সহজ করে এবং দেহে নতুন কোষ তৈরি করে। এছাড়া হাড় ও মাংশপেশির জোড়াগুলোকে শক্তিশালী করে।
এক চামচ ইসবগুলের ভুসি ও দুই চামচ অ্যালোভেরার রস পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে বাড়তি মেদ থাকবে না। দূর হবে বাতের ব্যথাও। অ্যা
অ্যালোভেরার রস মাথার তালুতে ঘষে এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেললে চুল গজাবে। মধুর সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বকের দাগ দূর করে ত্বক করে তুলবে আরও উজ্জ্বল।
পরিশেষে বলা যায়, ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার গুনাবলী বলে শেষ করা যাবে না। এখন ঘৃতকুমারী দিয়ে নানা ধরণের কসমেটিক্স সামগ্রী তৈরী করা হচ্ছে। মানুষের জীবনে নানা সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হিসেবে কাজে লাগে ঘৃতকুমারী। তাই যদি পারেন এটি বাসার আঙিনায় লাগিয়ে রাখুন।
আরও পড়ুন: কাঁচা হলুদের যতো গুণাগুণ ও ব্যবহার এবং উপকারিতা।