মানুষ এতো নিকৃষ্ট হতে পারে সেটা ভাবতেও অবাক লাগে। গরুর জন্য ঘাস কাটার নাম করে প্রায় প্রতিদিনই তিনি রেলাইনের ধারে যেতেন। একাই যেতেন। সাথে কাউকে নিতেন না। আশপাশের লোকজন জানতো, লোকটি ঘাস কাটার জন্যই আসছে। তাই তারা তাকে নজড়ে রাখতেন না। কিন্তু তিনি প্যান্ডেল ক্লিপ চুরি করতেন।
এই ব্যক্তির নাম তুফান হোসেন (বয়স ২২ বছর)। ঘাস কাটার জন্য সাধারণত দরকার কাস্তে কিন্তু এই তরুণ কাস্তের সাথে সাথে একটু হাতুড়িও নিয়ে যেতেন। রেললাইনের ক্লিপ চুড়ির সময় এবার তিনি একদম হাতেনাতে ধরা পড়েছে। তিনি আক্কেলপুর নামক পৌর শহরের ফকিরপাড়া মহল্লার বাসিন্দা।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের বেগুনবাড়ি রেলগেট এলাকায় এক সপ্তাহ আগে থেকে রেলওয়ের প্যান্ডেল ক্লিপগুলো চুরি হচ্ছিল। তখন ওয়েম্যানরা দিনরাত পাহারা দেয়া শুরু করে দেয় যাতে নতুন করে আর কেউ রেলওয়ের প্যান্ডেল ক্লিপ চুরি করতে না পারে।
শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ঐ তরুণকে ২৫টি প্যান্ডেল ক্লিপসহ হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এর আগে ঐ এলাকা থেকে যেসব প্যান্ডেল ক্লিপ চুরি হয়েছে ধারণা করা হচ্ছে আটকৃত তরুণই কাজটি করেছে। রিমাইন্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হয়তো আরও তথ্য বের হবে।
আক্কেলপুর রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে যে, আক্কেলপুর-জামালগঞ্জ রেলস্টেশনের বেগুনবাড়ি রেলগেট এলাকায় উত্তর দিকে ৩০৩ থেকে ৩০৯ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ক্লিপগুলো চুরি হচ্ছিল। পরে নিরাপত্তা বাড়ানোর ফলে হাতেনাতে ঐ তরুণ ধরা পড়ে। বিষ্ময়কর ব্যাপার যে, গত এক সপ্তাহ আগে একই দিনে ১৫০টির অধিক প্যান্ডেল ক্লিপগুলো চুরি হয়ে যায়।
রেললাইনের প্যান্ডেল ক্লিপগুলো খুলে ফেললে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। ক্লিপ চুড়ির ঘটনা ওয়েম্যানদের নজরে আসলে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। তারা চুরি হয়ে যাওয়া প্যান্ডেল ক্লিপ এর জায়গায় নতুন প্যান্ডেল ক্লিপ স্থাপন করে দেয়।
যার জন্য মূলত কোনো দূর্ঘটনা ঘটেনি। সময়মতো এ কাজ না করা হলে হয়তো যেকোন দূর্ঘটনা ঘটতেই পারতো। ওই রেলস্টেশন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান যে, প্যান্ডেল ক্লিপগুলো নতুন করে চুরি যাতে না হয় তাই বেগুনবাড়ি থেকে জামালগঞ্জ পর্যন্ত মোট ১১ জন ওয়েম্যান দিনরাত নিয়মিত পাহারা দিচ্ছিলেন।
সকালবেলা তুফান নামক ঐ ব্যক্তি যখন ঘাস কাটার জন্য আসে তখন তাকে কড়া নজরে রাখা হয়। তিনি ঘাস কাটার পাশাপাশি কিছুক্ষণ পর এদিক সেদিক তাকিয়ে বস্তা থেকে হাতুড়ি বের করে প্যান্ডেল ক্লিপ খুলছিলেন।
আরও পড়ুন: নেপচুন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড এ বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
আর দূর থেকে এই দৃশ্য একজন ওয়েম্যান দেখছিলেন। পরে সহকর্মীদের তিনি বিষয়টি তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেন। পরে কিছুক্ষণ পরে তুফানের কাছে গিয়ে হাতেনাতে তাকে ধরা হয়।
এরপর শান্তাহার রেলওয়ে থানা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে তুফানকে প্যান্ডেল ক্লিপসহ নিয়ে যান। তুফান প্রথমে অস্বীকার করছিলেন কিন্তু বস্তার ভেতরে প্যান্ডেল ক্লিপ থাকায় সে আর কোন কিছু লুকাতে পারেনি।