কোমর ব্যথার চেয়ে কম হলেও ঘাড়ের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় ভুগছে এমন রোগীর সংখ্যাও অনেক। শোয়ার সমস্যা থেকে শুরু করে মেরুদণ্ডের উপরিভাগের হাড় সরে যাওয়া, প্রদাহ যেমন-আর্থাইটিস, স্পন্ডালাইটিস, হাড়ের ক্ষয়রোগ, টিউমার প্রভৃতি কারণে ঘাড়ের ব্যথা হতে পারে।
জার্মানির বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘস্থায়ী ঘাড় ব্যথার আরেকটি কারণের দিকে মনোযোগ দিতে বলেছেন। তাঁরা বলছেন, শুধু শারীরিক কারণেই নয়, মানসিক চাপ, বিশেষত বিষন্নতা ও উদ্বেগজনিত রোগের কারণেও দীর্ঘস্থায়ী ঘাড়ব্যথার উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
বিএমসি মাস্কুলোস্কেলিটাল ডিসঅর্ডার জার্নালে এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘাড়ের স্থায়ী ব্যথায় আক্রান্তদের মধ্যে ২০ শতাংশ ভুগছে বিষন্নতা রোগে এবং ২৮ শতাংশ আক্রান্ত উদ্বেগজনিত রোগে।
গবেষক মার্টিন শেরার বলেছেন, এ রোগের সুচিকিৎসার জন্য শুধু এই উপসর্গের প্রতি মনোযোগ না দিয়ে রোগীর মনো-সামাজিক সমস্যার প্রকৃতিও নিরূপণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, যাদের ঘাড়ের ব্যথার তীব্রতা যত বেশি, তাদের মনোসামাজিক সমস্যার ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজনও তত বেশি। কারণ, মানসিক সমস্যার তীব্রতার সঙ্গে এ ব্যথার তীব্রতাও বাড়ে।
বিষন্নতা থেকে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক:
ষাটের ঊর্ধ্বে দুজনের বয়স। এখনো তাঁদের দুজনের ভালোবাসায় তরুণেরাও চমকে উঠবে। একদিন বুড়ো পেয়ে গেল শোকের তীব্র আঘাত। তাঁর প্রিয়জন মারা গেল হার্ট অ্যাটাকে। এক সপ্তাহ পার হতে না হতেই তিনিও চলে গেলেন। এ গল্প নয়, সত্যি। সঙ্গীর মৃত্যু যেন তাঁর বুকে শেলের আঘাতের চেয়েও বেশি।
এখন বিজ্ঞানীদের ধারণায় পরিবর্তন ঘটেছে। দুঃখ-বেদনা-শোক কিংবা দুঃসংবাদও দায়ী হৃদরোগের জন্য, তা জানা গেছে। প্রিয়জনের বিয়োগ, মানসিক চাপ ও বিষন্নতায় কিংবা কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানুষের যেকোনো সময় হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এ নিয়ে মনোরোগবিজ্ঞানীরা স্বাস্থ্য ও রোগের সঙ্গে মনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নিজ সন্তানের লাশ কাঁধে বহন করা কিংবা প্রিয়জনের মৃতদেহ সমাহিত করার মতো শোক আর কী আছে। এ ছাড়া মানুষের নানা দুঃখ চাপ ফেলে মনের ওপর প্রচণ্ডভাবে। ফলে হার্ট অ্যাটাক-তারপর হয়তো বা মৃত্যু।
কেন এমন হয়? বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মারাত্মক শোক-দুঃখ অনেকের শরীরে কিছু হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে অ্যাড্রিনালিন হরমোন ও করটিসল স্ট্রেস হরমোন দ্রুত বেড়ে যায় রক্তে।
সঙ্গে সঙ্গে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। রক্তচাপ প্রচণ্ড বাড়ে। পেশিগুলো টানটান হয়। প্রতিরোধক কোষগুলোও উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। চারদিকের রক্ত চলে আসে মাংসপেশিতে। ফলে রক্তের ঘনত্ব বাড়ে। হঠাৎ জমাট বেঁধে যায়। এ ছাড়া যদি বিভিন্ন ঝুঁকি উপাদানের কারণে হৃদ্যন্ত্র এবং এর রক্তনালিতে ক্ষয় হতে থাকে।
সঙ্গে চর্বিও জমতে থাকে ধমনির দেয়ালে। এতে রক্ত চলাচলের পথ হয় সরু। ধমনি শক্ত হয়ে গঠন করে বিপজ্জনক ‘এথেরোক্লোরোসিস’, আর তাতেই অঘটন।
এই চর্বি জমা, সরু রক্তনালি আর জমাট রক্ত মিলেই হয় হার্ট অ্যাটাক। তাতেও বেঁচে গেলে, তার পরও যদি বেড়ে যায় শোক-বেদনা-বিয়োগ, বছর বছরই লেগে থাকে বেদনার চিহ্ন-বেড়ে যাবে আরও স্ট্রেস হরমোন। হৃদ্যন্ত্রে ঘটবে বড় বিপত্তি। হরমোনের প্রভাবে
রক্তনালি আরও সংকুচিত হয়। ঘটে হার্ট অ্যাটাক। কারণ, শোক-দুশ্চিন্তা-হতাশা প্রভৃতি নেতিবাচক অনুভূতিই হৃৎপিণ্ডের পেশিতে রক্ত চলাচল কমিয়ে প্রথমে ‘অ্যানজাইনা’, পরে হার্ট অ্যাটাক ঘটায়।
তাই শোক-দুঃখ-বিষন্নতাকে ঠেলতে হবে আড়ালে। মনের চাপ কমাতে হবে হৃদয়ের কোঠায়। ঝেড়ে ফেলতে হবে বিষন্নতা। মানিয়ে নিতে হবে অতি সহজে, বাস্তবতায়। তাতেই হৃদয় নাচবে তালে তালে।
ক্রনিক (দীর্ঘ দিনের) মাথা ব্যথা মেয়েদের বিষন্নতার ঝুঁকি বাড়ায়:
যেসব নারী ক্রনিক বা দীর্ঘদিন মাথাব্যথা, বিশেষ করে মাইগ্রেন ও অসহনীয় মাথাব্যথায় ভুগছে; সঙ্গে সোমাটিক সিনড্রোম যার মধ্যে পেটে ব্যথা, হাত বা পায়ে ব্যথা, ঘুমের সমস্যা, বমি বমি ভাব ও বুক-ধড়ফড়ানি আছে; তাদের ক্ষেত্রে বিষন্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা এক হাজারেরও বেশি নারীর ওপর গবেষণা করে দেখেছেন যে ক্রনিক মাথাব্যথা বিষন্নতার ঝুঁকি ৩·৬ গুণ এবং বিশেষ করে যাদের মাইগ্রেন আছে তাদের ক্ষেত্রে ৪·১ গুণ বাড়িয়ে দেয়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যদি সোমটিক সিনড্রমগুলো ভয়াবহ আকারে দেখা দেয়, তাহলে বিষন্নতার ঝুঁকি মাথাব্যথার জন্য ২৫·১ গুণ ও মাইগ্রেনের কারণে ৩১·৮ গুণ বেড়ে যায়।
এখানে আরও উল্লেখ্য যে, নিম্ন মানের শিক্ষা এবং স্বল্প আয় ক্রনিক মাথাব্যথা ও মারাত্মক অসহনীয় মাথাব্যথার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই কখনো মাথা ব্যথাকে অবহেলা করতে নেই। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শুরুতেই চিকিৎসার মাধ্যমে মাথাব্যথা ও বিষন্নতার ঝুঁকি কমানো যায়।
সূত্র: অনলাইন পত্রিকা
আরও পড়ুন: যৌন রোগ হতে পারে বন্ধ্যাত্ব ও শারিরীক অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতির কারণ।