গোল মরিচ আমরা সকলেই চিনি। সাধারনত মুখের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য আমরা লবণ খাই। কিন্তু লবণের সাথে যদি গোল মরিচ যোগ করা যায় তবে স্বাদের পরিমাণটা আরও বেড়ে যায়।
গোল মরিচ খেলে কোনো ধরণের ক্ষতি হয় না। বরং নানা ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে যে, মুখের রুচি বাড়ে। অন্যদিকে, অতিরিক্ত লবণ বা পাতে লবণ দেহের নানা প্রকার ক্ষতি করে থাকে।
যাই হোক, গোল মরিচ খাবার হজমেও অনেক সাহায্য করে। আজ আমরা গোল মরিচের নানাবিধ উপকারিতা সম্পর্কে জানবো। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
১. ধূমপান আসক্তি হ্রাস:
জার্নাল অফ অল্টারনেটিভ অ্যান্ড কমপ্লেমেন্টারি মেডিসিন তাদের ছোট একটা স্টাডির মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছে যে যাদের ধূমপানে আসক্তি আছে, তারা গোলমরিচের ধোঁওয়া দুই মিনিটের জন্য গ্রহন করেছে এতে তাদের নিকোটিনের প্রতি আসক্তি খুব তাড়াতাড়ি কমতে থাকে, পরবর্তীতে সিগারেট গ্রহণও কমে গিয়েছে।
আপনি যদি ধূমপায়ী হন এবং আসক্তি কমাতে চান তবে এখনি চেষ্টা করে দেখুন:
একটি বাটিতে হাফ কাপ গোল মরিচের গুড়ো নিন। আপনার নাক গুঁড়োর ঠিক উপর বরাবর রাখুন এবং ২ মিনিটের জন্য বারবার লম্বা শ্বাস নিন।
২. নার্ভাস সিস্টেমের উন্নতি:
ম্যাককরমিক সাইন্স ইন্সিটিউট এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, গোল মরিচের নির্যাস স্ট্রোকের রোগীর দেহের ভেতরের ফোলা ভাব কমায়।
কারণ এই নির্যাসটি তাদের মস্তিস্কের একটি নির্দিষ্ট অংশকে সচল করে তুলে। এছাড়াও বায়ো অরগানিক অ্যান্ড মেডিসিনাল কেমিস্ট্রি ২০১২ সালের গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, গোল মরিচের একটি অন্যতম সক্রিয় উপাদান পাইপেরাইন এক ধরণের খারাপ এনজাইমের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনে। কারণ এটি মস্তিকের নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামাইন কমিয়ে ফেলে। যা খুবই ক্ষতিকর।
৩. গোল মরিচ:
আপনাদের জন্য দারুণ একটি টিপস দিচ্ছি! ঘরে বসে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। গোলমরিচের এসেনশিয়াল তেল অর্থাৎ নির্যাসকে দুইভাবে গ্রহণ করতে পারেন, একটি হল সরাসরি উপায় অথবা একটি টিস্যুতে সামান্য পরিমাণে ঢেলে নিন। তারপর সেটি নাক দিয়ে শুকতে থাকুন। এই পদ্ধতি দিনে একবার প্রয়োগ করাই যথেষ্ট।
৪. ত্বকের কালো দাগ কমায়:
গোলমরিচের দানাদার ভাবের জন্য এটি ত্বক পরিস্কারক হিসাবেও ব্যবহার করা যায়। এটি এক্সফলিয়াটর হিসাবে খুব চমৎকারভাবে আপনার ত্বকের মৃত কোষগুলো তুলে ত্বককে করে তুলবে সজীব ও প্রাণবন্ত। এছাড়াও ত্বকে ছোপ ছোপ কালো দাগ থাকলে তা কমাতে সাহায্য করবে। কারণ এক্সফলিয়াটর হচ্ছে দানাদার বস্তু যা আপনার ত্বকে ঘর্ষণের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, ফলে ত্বকে অক্সিজেন পৌছায় পাশাপাশি ত্বকে পুষ্টি যোগায়।
গ্রিন কালচার টিপস:
কিছু গোলমরিচ যতটা সম্ভব মিহি গুঁড়ো করে নিন । সামান্য একটু নিয়ে আপনার প্রিয় ফেসপ্যাকে মিশিয়ে নিন। এবার আলতো করে আপনার মুখে লাগিয়ে নিন।
শুকিয়ে গেলে হাল্কা গরম পানি দিয়ে ধীরে ধীরে দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে সার্কুলার মোশনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তুলে ফেলুন।
৫. স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ:
গোলমরিচের প্রধান উপাদান হল পাইপেরাইন যা তরকারিতে স্বাদ আনতে ভূমিকা পালনের পাশাপাশি এর রয়েছে অনন্য গুনাবলি। এটি স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ল্যাব গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এটি স্তনের স্টেম কোষগুলো বৃদ্ধিতে বাঁধা প্রদান করে।
এছাড়াও গোলমরিচে রয়েছে কারকুমিন যা স্তনে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিতে বাঁধা প্রদান করে। গ্রিনিকালচার টিপসঃ সেরকম কিছুইনা! আপনার খাবারের সাথে গোলমরিচ পরিমাণ মত মিশিয়ে গ্রহণ করুন।
৬. হজম শক্তি বৃদ্ধি:
গোলমরিচ শুধুমাত্র রান্নার স্বাদই বৃদ্ধি করেনা বরং এটি আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। কারণ আপনি যখন গোলমরিচ খাবেন তখন আপনার মস্তিক পাকস্থলিকে এক প্রকার সংকেত প্রদান করবে যা বেশি পরিমাণে হায়ড্রক্লরিক এসিড নিঃসরণে সহায়তা করবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, গোল মরিচ বাজার থেকে কিনে নিয়ে ঘরে রাখা যায়। তারপর যখন তখন প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করা যায়। গোল মরিচ খুবই সুস্বাদু। এর উপকারিতা বিবেচনা করে ঘরে সবসময় রাখা একটি উত্তম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
আরও পড়ুন: তেলাকুচা পাতার ভেষজ উপকারিতা ও গুণাগুণ জেনে নিন।