গাইনেকোমাস্টিয়া হলো পুরুষের এক ধরণের লজ্জাজনক সমস্যা। সাধারন কথায় পুরুষের স্তন বড় হয়ে যাওয়া। অনেক পুরুষই তাদের এ ধরণের সমস্যাগুলো খুব সহজে প্রকাশ করে না। যখন আর কোন উপায় থাকে না তখন এমনিতেই প্রকাশ হয়ে যায়। শারিরীক লক্ষণ দেখে সবাই বুঝে ফেলে।
আজ এই গাইনেকোমাস্টিয়া নামক রোগটি নিয়েই আলোচনা করা হবে। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
গাইনেকোমাস্টিয়া (পুরুষের লজ্জাজনক সমস্যা):
গাইনেকোমাস্টিয়া হলো পুরুষের অস্বাভাবিক স্তন বৃদ্ধি। গ্রিক শব্দ থেকে গাইনেকোমাস্টিয়া শব্দটি এসেছে। ‘গাইনি’ শব্দের অর্থ ‘মহিলা’ এবং ‘মাস্টোস’ শব্দের অর্থ স্তন।
অস্বাভাবিক স্তন বৃদ্ধি নবজাতক, বয়ঃসন্ধিকালে ও বৃদ্ধ বয়সে শারীরবৃত্তীয় কারণে হতে পারে। বয়ঃসন্ধি কালে অনেক ছেলেদের এরকম অবস্থা হতে পারে, তবে অনেক ছেলের স্তনের বৃদ্ধি দুই বছরের মধ্যে ছোট হয় বা মিলিয়ে যায়।
গাইনেকোমাস্টিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে পুরুষের শক্ত স্তন টিস্যু গঠিত হয়। এই স্তন টিস্যু সাধারণত দেড় ইঞ্চির ছোট হয় এবং সরাসরি এটা স্তনবৃত্তের নিচে অবস্থান করে। গাইনেকোমাস্টিয়া এক পাশে বা দু’পাশেই হতে পারে। এরকম অবস্থায় স্তনে ব্যথা হতে পারে।
কেন গাইনেকোমাস্টিয়া হয়?
১. সাধারনভাবে সেক্স হরমোনের বৈষম্যকে এর জন্য দায়ী করা হয়। এটা হলো প্রধান কারণ।
২. স্তন টিস্যুর বৃদ্ধির কারণেও স্তন বড় হতে পারে। অনেক সময় স্তনে অতিরিক্ত চর্বি জমলে স্তন বড় দেখায়, তবে এটা গাইনেকোমাস্টিয়া নয়।
৩. শারীরবৃত্তীয় গাইনেকোমাস্টিয়া নবজাতক, বয়ঃসন্ধিকালে বা বয়ঃসন্ধিকালের আগে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে হতে পারে।
৪. অনেক গাইনেকোমাস্টিয়ার কারণ অজানা অর্থাৎ এদের নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। ২৫% ক্ষেত্রে গাইনেকোমাস্টিয়ার কারণ জানা যায়নি।
৫. হরমোনসহ বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ, সিরাম ইন্ট্রোজেনের বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে।
৬. টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়া।
৭. অ্যানড্রোজেন রিসেপ্টরের ত্রুটি দেখা দিলে।
৮. দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হলে।
৯. দীর্ঘস্থায়ী লিভারের রোগ কিংবা লিভার সিরোসিস অসুখের ফলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
১০. এইচআইভি এবং অন্যান্য দীর্ঘ মেয়াদি রোগের কারণে হতে পারে।
১১. স্পাইনাল কর্ডে আঘাতের কারণে এবং দীর্ঘদিন অভুক থাকার পর খাওয়ার পরে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
আরও কিছু তথ্য:
বয়ঃসন্ধিকালের পরবর্তী সময়ে পুরুষদের বিভিন্ন অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ ১০-২০% ক্ষেত্রে গাইনেকোমাস্টিয়া ঘটায়। এসব ওষুদের মধ্যে রয়েছে সিমেটিডিন, ওমিপ্রাজল, স্পাইরোনোল্যাকটন, ইমাটিনিব মিসাইলেট, ফিনাস্টেরাইড এবং কিছু নির্দিষ্ট অ্যান্টি-সাইকোটিক ওষুধ।
আবার কিছু ওষুধ সরাসরি স্তন টিস্যুর উপর কাজ করে আবার কিছু অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ ডোপামিনের কাজ বন্ধ করার মাধ্যমে পিটুইটারি থেকে প্রোলাকটিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য যে, প্রোলাকটিক হলো স্তন তৈরির হরমোন।
শক্তিবৃদ্ধিকারী ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত অ্যাড্রোসটেনেডিওন ইস্ট্রোজেনের অতিরিক্ত কার্যকারিতার মাধ্যমে স্তনের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।
প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ যেমন অ্যান্টি-অ্যানড্রোজেন এবং ডিএনআরএইচ অ্যানালগগুলো গাইনেকোমাস্টিয়া ঘটাতে পারে।
মারিজুয়ানা গাইনেকোমাস্টিয়া একটি কারণ হিসেবে বিবেচ্য তবে এ নিয়ে মতভেদ আছে। কিছু নির্দিষ্ট অন্ডকোষের টিউমার এবং হাইপারথাইরয়েডিজম রোগে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়।
কিছু অ্যাড্রেনাল টিউমার অ্যান্ড্রোসটেনেডিওনের মাত্রা বাড়ায়। এই অ্যান্ড্রোসটোনডিওন অ্যারোম্যাটেজ নামক এনজাইম দ্বারা ইস্ট্রোন-এ রূপান্তরিত হয়।
এই ইস্ট্রোন হলো ইস্ট্রোজেনের একটি ধরন। অন্যান্য যেসব টিউমার এইচসিজি নিঃসরণ করে তা ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ বাড়াতে পারে।
মোটা মানুষের গাইনেকোমাস্টিয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের উৎপাদনের মাত্রা কমে গেলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
এই টেস্টোস্টেরণ উৎপাদনের মাত্রা কারণবশতঃ কমে যেতে পারে। যেমন- জন্মগত বা অর্জিত অন্ডকোষের সমস্যার কারণে। হাইপোথ্যালামাস কিংবা পিটুইটারির রোগের কারণেও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমতে পারে। অ্যানাবলিক অ্যান্ড্রোজেনিক স্টেরয়েডের অপব্যবহারও একই প্রভাব ফেলে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
চিকিৎসা ও পরামর্শ:
অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা হলো অপারেশন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় অপারেশনের ঝুকি এড়ানো যায় । একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ ব্যবহার করলে গাইনেকোমাস্টিয়ার লজ্জা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
শেষ কথা হলো এই রোগটি ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। প্রথমদিকে কেউ নাও বুঝতে পারে। রোগ লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্র যদি একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া হয় তবে অনেকাংশেই অল্প সময়েই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন: নবজাতক শিশু সম্পর্কে অজানা ও দরকারি কিছু টিপস।
সূত্র: ডা. ফাইজুল হক